শিক্ষানবিশের পদ্য/হাসিকান্না

উইকিসংকলন থেকে

হাসি কান্না।

(বর্ষায়)

 মলিন ভুবন কেন বিষাদে বিকল?
ধরাধর বরষিছে কেন আঁখি জল?
কাছে গঙ্গা ভরাজলে, কিনারায় টলটলে,
প্রবল পবন বলে কেন করে কল কল?
কূলেতে কদম্ব গাছে বিহঙ্গ বসিয়া আছে,
নাহি গায় নাহি নাচে, কেন ভয়েতে বিহ্বল?
পর পারে দৃষ্টি হয়, সব অন্ধকার ময়,
সহে বৃষ্টি তরুচয়, নীরবে নিচল!
এই যে চাহিল রবি, ধরাধরে নব ছবি,
পুলকে বলিছে কবি বলিহারি কল!
কাঁদে বিশ্ব কাঁদি আমি, হাসিনু হাসালে তুমি,
হাসিকান্না পূর্ণভূমি, তোমারি কৌশল!


(শীত ঋতু রাতি শেষে)

 মনোহর রাতি কাল শরদের অন্তে,
নীরব ভুবন পূর্ণ অপূর্ব্ব হেমন্তে;

নির্ম্মল অম্বরে নাই কুয়াসার ছটা,
কলঙ্ক কালিমা নাই, নাহি ঘন ঘটা;
পূর্ণিমা গরিমা গর্ব্বে পূর্ণ শশধর
সুনীল অম্বরগর্ভে চলে গর গর;
সর্ব্বংসহা দেবী দেখি মত্ত নিশানাথে,
ধীরভাবে করপাত সহিতেছে মাথে,
স্পন্দহীনা বসুন্ধরা, না করে হুতাশ,
নাহি নাড়ে অঙ্গ, দেবী না ছাড়ে নিশ্বাস,
অভিমানে ধরণার আঁখি ছল ছল,
নীরবে বিরল বিন্দু ঝরে আঁখি জল;
হিন্তাল, তমাল, তাল, বনরাজিগণ,
মাতার কোলেতে বসি করিছে রোদন;
কাছেতে কোলের কন্যা গঙ্গা ভয় পায়,
কল কল নাহি করে কোলে কোলে যায়;
উপরে তারকাগণ নীরবে বিচারে,
মলিন মহীর দুখে বলিতে না পারে,
সকলি বিমর্ষ যেন অথচ সুছন্দ,
শীতঋতু রাতিশেষে বিষাদে আনন্দ।