সিরাজদ্দৌলা (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়)/সেকালের সুখ দুঃখ

উইকিসংকলন থেকে

সিরাজদ্দৌলা।

প্রথম পরিচ্ছেদ

সেকালের সুখ দুঃখ।

নবাব সিরাজদ্দৌলার নাম সকলের কাছেই চিরপরিচিত। তিনি অতি অল্পদিন মাত্র বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে বসিয়াছিলেন; কিন্তু সেই অল্পদিনের মধ্যেই স্বদেশে এবং বিদেশে আপন নাম চিরস্মরণীয় করিয়া গিয়াছেন।

 ইংরাজেরা একবার তাহাদের দেশের একজন হতভাগ্য নরপতিকে নর-বলি দিয়াছিল। ঘাতকের শাণিত কুঠার যখন সেই রাজমুণ্ড দ্বিখণ্ডিত করে, শোণিত লোলুপ জনসাধারণ তখন উন্মত্ত পিশাচের মত ভৈরব নৃত্যে করতালি দিয়া কিছুদিনের জন্য প্রজাতন্ত্র সংস্থাপন করিয়াছিল! কিন্তু তখন ও তাঁহাদের দেশের কুটীরে কুটীরে দুৰ্গে-দুর্গে, প্রাসাদে প্রাসাদে, কত কৃষক, কত সৈনিক, কত সন্ত্রান্ত পরিবার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়াছিল! বাঙ্গালী যখন ষড়যন্ত্র করিয়া সিরাজদ্দৌলাকে গৃহতাড়িত করে, মীরণের নৃশং আদেশে সিরাজমুণ্ড যখন দেহবিচুত হয়, দেশের রাজা প্রজা তখন সকলে মিলিয়া বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরকে সিংহাসনে বসাইয়া তাঁহার কৃপা কটাক্ষের প্রতীক্ষায় করাজোড়ে দাড়াইয়াছিলেন;—সিরাজের শোচনীয় পরিণামে তাঁহার জন্য কেহই একবিন্দু আশ্রমোচনের অবসর পান নাই।

 এ সকল এখন পুরাতন কথা। দেশের আর সে অবস্থা নাই, লোকের আর সে তীব্র প্রতিহিংসা নাই, সিরাজ এবং তাঁহার সমসাময়িক রাজা প্রজা সকলেই ইহলোক হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। এখন বোধ হয়, বাঙ্গালী যথার্থ নিরপেক্ষভাবে সিরাজচরিত্র আলোচনা করিবার অবসর প্রাইরেন।

 সিরাজদ্দৌলা নাই। তাহার সময়ে যে বাঙ্গালা দেশ ছিল, সে বাঙ্গালা দেশও নাই। মোগল বাদশাহেরা যাহাকে “সমুদয় মানব জাতির স্বৰ্গতুল্য বঙ্গভূমি”[১] বলিয়া অনুশাসনপত্রে উল্লেখ করিতেন, সে স্বৰ্গ এখন গৌরবচ্যুত হৃত-সর্ব্বস্ব কাঙ্গাল ভূমি! সে শিল্প নাই, সে বাণিজ্য নাই, বাঙ্গালীর সে রাজপদ মন্ত্রিপদ নাই, জমীদারদিগের সে জীবনমরণের বিচারক্ষমতা নাই;—সে বাহুবল, সে রণকৌশল, সকলই এখন ইতিহাসগত অতীত কাহিনীতে পর্য্যবসিত হইয়াছে। সিরাজদ্দৌলা যে সময়ের লোক, সে সময় এখন বহুদূরে সরিয়া পড়িয়াছে।

 এক সময়ে এ দেশে মুসলমানের নামগন্ধ ছিল না। হিন্দুস্থান কেবল হিন্দু অধিবাসীর শঙ্খ ঘণ্টারবে প্রতিশব্দিত হইত। কিন্তু সে বহুদিনের কথা। সেকালের সকল চিত্রই এত পুরাতন, এত জরাজীর্ণ, এত অস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, এখন আর ভাল করিয়া তাহার সৌন্দর্য্য বিচার করিবার উপায় নাই। বহুদিন হইতে এ দেশ হিন্দু মুসলমানের জন্মভূমি বলিয়া পরিচিত হইয়াছে; গ্রামে গ্রামে, নগরে নগরে, বহুদিন হইতে হিন্দু মুসলমান বাহুতে বাহুতে মিলিত হইয়া জীবন-সংগ্রামে জন্মভূমির রণপতাকা বহন করিতেছে। সিরাজদ্দৌলার সময়ে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ধর্ম্মগত পার্থক্য ছিল; কিন্তু ক্ষমতাগত, পদগৌরবগত কোনই পার্থক্য ছিল না। মুসলমানের পরিচ্ছদ, মুসলমানের শিষ্টাচার, মুসলমানের প্রয়োজনাতীত-সৌজন্য-পরিপ্লত শ্লথ-বিন্যস্ত শ্রুতিমধুর সুমার্জ্জিত যাবনিক ভাষা এবং পদবিজ্ঞাপক যাবনিক উপাধি গৌরবের সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানে সমভাবে ব্যবহার করিতেন।

 দিল্লীর বাদশাহ নামমাত্র বাদশাহ; বাঙ্গালার নবাবই বাঙ্গালাদেশের প্রকৃত “মা বাপ” হইয়া উঠিয়াছিলেন। সেই নবাবদরবারে হিন্দু-মুসলমানের কোনরূপ আসনগত পার্থক্য বা ক্ষমতাগত তারতম্য ছিল না। বরং অনেকাংশে হিন্দুদিগেরই বিশেষ প্রাধান্য জন্মিয়াছিল। বিলাস-লোলুপ মুসলমান ওমরাহগণ আহার বিহার লইয়াই সমধিক ব্যস্ত থাকিতেন; কর্ম্মকুশল হিন্দু অধিবাসিগণ, কেহ রাজা কেহ মন্ত্রী, কেহ কোষাধ্যক্ষ, কেহ বা সেনানায়ক হইয়া বুদ্ধিব উন্মত্ত পিশাচের বাহুবিক্রমে বাঙ্গালাদেশের ভাগ্য বিবর্ত্তন করিতেন। সংস্থাপন

 মুসলমান নবাব আপনাকে বাঙ্গালী বলিয়া পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করিতেন না! বাঙ্গালাদেশই তাঁহার স্বদেশ, এবং বাঙ্গালী জাতিই তাঁহার স্বজাতি হইয়া উঠিয়াছিল। রাজকোষের ধনরত্ন বাঙ্গালাদেশেই সঞ্চিত থাকিত; যাহা ব্যয় হইত, তাহাও বাঙ্গালীগণ কেহ দ্রব্য-বিনিময়ে কেহ শ্রম-বিনিময়ে কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়া লইতে পারিত। দেশের টাকা দেশেই থাকিত, তাহা সাত সমুদ্র তের নদীর পারে চির-নির্ব্বাসিত হইত না।

 সেই একদিন, আর এই একদিন! আজ সে দিনের বিলুপ্ত কাহিনীর আলোচনা করিতে হইলে অতীতের স্বপ্ন-সমুদ্র সন্তরণ করিয়া সেকালের বাস্তব রাজ্যের বাস্তব চিত্রপটের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইতে হইবে; সেকালের চক্ষু লইয়া, সেকালের প্রাণ লইয়া সেকালের ইতিহাস অধ্যয়ন করিতে হইবে। সে ইতিহাস কেবল হতভাগ্য সিরাজদ্দৌলার মর্ম্ম-বেদনার ইতিহাস নাহে;—তাহা আমাদিগের পূজনীয় পিতৃপিতামহের সুখদুঃখের ইতিহাস।

 সিরাজদ্দৌলার সময়ে বাঙ্গালাদেশ ১৩ চাকলায়, এবং ১৬৬০ পরগণায় বিভক্ত ছিল[২]। পরগণাগুলি কোন না কোন জমীদারের অধিকারভুক্ত ছিল। তাঁহারা বাহুবলে আপনি আপন রাজ্য রক্ষা করিয়া বিচারবলে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করিয়া, যথাকালে নবাব-সরকারে রাজস্ব দিতে পারিলে তাঁহাদের স্বাধীন শক্তির প্রবল প্রতাপে কেহই বাধা দিতে চাহিত না। চাকলায় চাকলায় এক একজন হিন্দু অথবা মুসলমান “ফৌজদার” অর্থাৎ শাসনকর্ত্তা থাকিতেন; তাঁহারা স্থাকালে রাজস্ব-সংগ্রহের সাহায্য করা ভিন্ন আভ্যন্তরীণ শাসনকার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতেন না। গঙ্গা, ভাগীরথী, ব্রহ্মপুত্র বাঙ্গালীর বাণিজ্যভাণ্ডার বহন করিত; সে বাণিজ্যে জেতৃ-বিজিত বলিয়া শুস্কাদানের কোনরূপ তারতম্য ছিল না। মুসলমান নবাব কোন কোন নিদিষ্ট সময়ে পাত্র মিত্র লইয়া দরবার করিতেন, কিন্তু আভ্যন্তরীণ শাসনকার্য্যে প্রায়ই মনোনিবেশ করিবার অবসর পাইতেন না। জগৎশেঠের ইতিহাস-বিখ্যাত বিস্তৃত প্রাঙ্গণে বাদাসাহের নামে স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্র মুদ্রিত হইত; পরগণাধিপতি জমীদারগণ জগৎশেঠের কোষাগারে রাজস্ব ঢালিয়া দিয়া মুক্তিপত্র গ্রহণ করিতেন; এবং কখন কখন শিষ্টাচারের অনুরোধে রাজধানীতে আসিয়া কাবা চাপিকান পরিয়া, উষ্ণীয বাঁধিয়া, জানু পাতিয়া মুসলমানী প্রথায় নবাব-দরবারে সমাসীন হইতেন।

 দেশে যে অত্যাচার অবিচার ছিল না তাহা নহে; বরং অনেক সময়েই দেশে ভয়ানক অরাজকতা উপস্থিত হইত। কিন্তু সে অরাজকতায় জমীদার ও মহাজনগণ যতই উৎপীড়িত হ’ন না কেন, কৃষককুটীরে তাহার ছায়াস্পর্শ হইত না। কৃষক যথাকালে হলচালনা করিয়া, যথা-প্রাপ্ত শস্যসঞ্চয় করিয়া, স্ত্রীপুত্র লইয়া যথাসম্ভব নিরুদ্বেগেই কালযাপন করিত। দেশে দস্যু তস্করের উৎপীড়নের অভাব ছিল না; কিন্তু দেশের লোকের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারেও কোনরূপ নিষেধ ছিল না। সম্রান্ত বংশের যুবকেরাও লাঠি, তরবারি চালনা করিতে জানিতেন। দস্যু তস্করের উপদ্রব হইলে, গ্রামের লোকে দল বাঁধিয়া, রাত্রি জাগিয়া, লাঠি ঘুরাইয়া, মশাল জ্বালাইয়া, তরবারি ভাজিয়া, বর্ষা চালাইয়া আত্মরক্ষা করিত। দস্তু-তস্কর ধরা পড়িলে, গ্রামবাসীরাই দশজনে মিলিয়া প্রয়োজনাতীত উত্তম মধ্যম দিয়া সংক্ষেপে, বিচার কার্য্য সমাধা করিয়া ফেলিত।

 ইহাতে যেমন দুঃখ ছিল, সেইরূপ সুখও ছিল। আজকাল দস্যু-তস্করে উপদ্রব করিলে, কেহ কাহারও সাহায্য করিতে বাহির হয় না; অসহায় গৃহস্থ ঘরে পড়িয়া আর্ত্তনাদ করিতে থাকে! দাস্যুদল সর্ব্বস্ব লুটিয়া, মানসন্ত্রম পদদলিত করিয়া হেলিতে দুলিতে ধীরে ধীরে বহুদূরে চলিয়া গেলে, গৃহস্থ পঞ্চায়েৎ ডাকিয়া থানায় গিয়া পুলিসে সংবাদ দিয়া আসে। দারোগা, বকসী, কনেষ্টবল্ এবং চৌকিদার মহাশয় অবসর অনুসারে একে একে শুভাগমন করিলে, গৃহস্থ ব্যস্তসমস্ত হইয়া একহাতে চোখের জল মুছিতে মুছিতে, আর এক হাতে তাহাদের যথাযোগ্য মর্য্যাদা রক্ষার জন্য ঋণ গ্রহণে বাহির হয়! দস্যু-তস্কর ধরা পড়ুক বা না পড়ুক, সন্দেহে পড়িয়া অনেক গরীবকে নির্য্যাতন সহ করিতে হয়; দুই একস্থলে মিথ্যা অভিযোগ বলিয়া গৃহস্থকেও রাজদ্বারে বিলক্ষণ বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হয়। সেকালে সুবিচারের সূক্ষ্মযন্ত্র ছিল না, সুতরাং কাহাকেও বিচার-বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হইত না।

 অনেক বিষয়ে অসুবিধা ছিল; কিন্তু অনেক বিষয়ে সুবিধাও ছিল। পথ ঘাট ছিল না, ত্বরিত গমনের সদুপায় ছিল না, দাতব্যচিকিৎসালয় এবং বিনামূল্যে বিতরণীয় ঔষধালয় ছিল না;—কিন্তু লোকের ধন-ধান্য ছিল, স্বাস্থ্য ও বাহুবল ছিল; হা অন্ন! হা অন্ন! করিয়া দেশে ছুটিয়া বেড়াইবার বিশেষ আবশ্যক হইত না। লোকে ঘরে বসিয়া হাতে লেখা তুলট কাগজের রামায়ণ মহাভারত পড়িত, অবসর সময়ে কবিকঙ্কণের চণ্ডীর গান গাহিত, এবং আপন আপন বাসস্থলীতে নিপুণভাবে প্রসন্নচিত্তে আপন কার্য্যে নিযুক্ত থাকিত।

 অভাব অল্প হইলে দুঃখও অল্প হইয়া থাকে। সভ্যতাবিরোধী সুচিক্কণ সূক্ষ্ম বস্ত্রের জন্য সকলেই লালায়িত হইত না; দেশের মোটা ভাত মোটা কাপড়েই অধিকাংশ লোকের একরকম দিন চলিয়া যাইত। পাঠশালায় গুরুমহাশয়ের অথবা তাহার বেত্রিদণ্ডের মহিমায় যথা সম্ভব বিদ্যাভ্যাস করিয়া বালকেরা অবসর সময়ে মাঠে মাঠে ছটাছুটি করিয়া বেড়াইত, কখন বা ঘোড়া ধরিয়া তাহার অনাবৃত পৃষ্ঠে নিতান্ত সুসঙ্গীতরূপে একজনের স্থানে দুই তিন জন চাপিয়া বাসিত, কখন বা বর্ষার জলে নদ, নদী, খাল, বিলে ঝাঁপাঝাঁপি করিয়া সাঁতার কাটিত, সময়ে অসময়ে গৃহস্তের গরু বাছুর চরাইয়া হাটবাজার বহিয়া, দিন-শেষে ঠাকুরমার উপকথায় হুঁ দিতে দিতে স্নেহের কোলে ঘুমাইয়া পড়িত। যুবকদল দিবসে তাস পাশা খেলিয়া, দাবী ব’ড়ে টিপিয়া, বৈকালে লাঠি ভরবারি ভাজিত; সন্ধ্যা-সমাগমে সযত্ন-বিন্যস্ত লম্বা কেঁচা দোলাইয়া অনাবৃত দেহ-সৌষ্ঠবের গৌরব বাড়াইবার জন্য কঁধের উপর রঙ্গিন গামছা ছড়াইয়া দিয়া বাবরী-চুলে চিরুণী গুজিয়া, শুক সারী অথবা নিতান্ত অভাবপক্ষে একটা পোষা বুলবুল্ হাতে লইয়া তাম্বুল-রাগ-রঞ্জিত অধরৌষ্ঠে মৃদুমন্দ শিস্ দিতে দিতে—পাড়ায় বেড়াইতে বাহির হইত। বৃদ্ধের গৃহকর্ম্ম সারিয়া, পর্য্যাপ্ত ভোজনের পর তৈলাক্ত-স্নিগ্ধতনু দিবা নিদ্রায় সমাহিত করিয়া সায়াহ্নে তামাকু সেবনের জন্য চণ্ডীমণ্ডপে নদীসৈকতে অথবা বৃক্ষতলে সমবেত হইয়া, দেশের কথা, দশের কথা, “ওপাড়ার মুখুয্যেদের বিধবা ভাদ্রবধুর কথা,”—কত কি আবশ্যক অনাবশ্যক বিষয়ের মীমাংসা করিয়া, সন্ধ্যার পর হরিসংকীর্ত্তনে অথবা পুরাণ-শ্রবণে ভক্তি-গদগদ-হৃদয়ে নিমগ্ন হইতেন। সমাজের যাঁহারা লক্ষ্মীরূপিণী-অৰ্দ্ধাঙ্গিনী, তাঁহারা দেবতা, ব্রাহ্মণ, অতিথি ও পোষ্যবর্গের সেবা করিয়া, সময়ে অসময়ে ছেলে ঠেঙ্গাইয়া, নথ নাড়িয়া, চুল খুলিয়া, সন্ধ্যার শীতল বাতাসে পুকুর-ঘাঠ আলো করিয়া বসিতেন; কত কথা কত রঙ্গরস—তার সঙ্গে প্রৌঢ়ার সগর্ব্ব-হস্তসঞ্চালন, নবীনার অবগুণ্ঠনজড়িত অস্ফুট সখি-সম্ভাষণ, এবং স্থবিরার স্থলদ্-বচনে শিবমহিম স্তোত্রের বিকৃত-আবৃত্তি সান্ধ্যসম্মিলনকে কতই মধুময় করিয়া তুলিত!

 সে দিন। আর নাই;—এখন আমরা সভ্য হইয়াছি। বালকেরা দন্তোদগমের পূর্বেই ক, খ, ধরিয়া পাঁচ ঘণ্টা স্কুলের কঠিন কাষ্ঠাসনে কখন দাড়াইয়া, কখন বা বসিয়া, বৈকালে গৃহশিক্ষকের তীব্রতাড়না সহা করিয়া, আহার না করিতেই ঘুমাইয়া পড়ে; যুবারা হ। অন্ন! হা অন্ন! করিয়া চাকুরীর আশায়, উমেদারীর আশায়, কখন বা শুধু একখানি প্রশংসাপত্র পাইবার আশায়, দেশে দেশে ছুটিাছুটি করিয়া অল্পদিনেই অধ্যয়ন ক্লিষ্ট দুর্বলদেহে নিতান্ত অসময়েই স্থবিরত্ব লাভ করে; বৃদ্ধের অনাবশ্যক উৎসাহে সেকালের জীর্ণ খুঁটার সঙ্গে উড্ডীয়মান জাতীয় জীবনকে বাঁধিয়া রাখিবার জন্য পাড়ায় পাড়ায় দলাদলির বৈঠক কারিয়া ক্ষুধাবৃদ্ধি করেন; আর সমাজের যাঁহারা লক্ষীরূপিণী,—সেই অর্দ্ধাঙ্গিনীগণ অৰ্দ্ধ অবগুণ্ঠনে স্বামিপুত্রের সঙ্গে দেশে দেশে ফিরিয়া কেবল অনাবশ্যকরূপে চিকিৎসকের এবং স্বর্ণকারের-ঋণজালে জড়িত হইয়া পড়েন। এ সকল যদি একালের সুখের চিত্র বলিয়া গর্ব্ব করিতে পারি, তবে সেকালে দেশের লোকের সুখশান্তির একেবারেই অভাব ছিল বলিয়া উপহাস করা শোভা পায় না।

  1. Akbar and A urangzeb.
  2. Grant's Analysis of Finances of Bengal.