সিরাজদ্দৌলা (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়)

উইকিসংকলন থেকে
সিরাজদ্দৌলা

This

Historical Sketch

Is

Dedicated

To

Benery Beveridge Esq. C. S.

As

An humble token of the

Authors

Sincere esteem and great regard.

সিরাজদ্দৌলা।

দ্বিতীয় সংস্করণ।

২০ নং কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীট্,

মজুমদার লাইব্রেরী হইতে প্রকাশিত।


PRINTED BY MESSERS, MUKERJEE & CHATTERJEE

AT THE METCALFE PRESS,

3/4, Gour Mohan Mukerjee's Street, Calcutta.

1902


ঐতিহাসিক চিত্র।

সিরাজদ্দৌলা।


 "Whatever may have been his faults, Siraju'd dualah had neither betrayed his master nor sold his country. Nay more, no unhaissed Englishman, sitting in judgemennt on the events which passed in the interval between the 9th February and the 23rd June, can deny that the name of Siraj'd-dualah stands higher in the Scale of honor than does the name of Clive. He was the only one of the principal actors in that tragic. Arama who did not attempt to deceive!"-Col Malleson

শ্রী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়

[সর্বস্বত্ব রক্ষিত]


মূল্য-কাপড়ে বাঁধা ২/- দুই টাকা চারি আনা



অবতরণিকা ।


 ১৩০২ সাল হইতে ‘সাধনা’ এবং ‘ভারতীতে’ সিরাজদ্দৌলাশীর্ষক যে সকল ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ক্রমশঃ প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহাই সংশোধিত ও পরিবর্দ্ধিত কলেবরে পুস্তকাকারে মুদ্রিত হইল।

 নবাবী আমলের ইতিহাস সংকলন করা ক্রমেই কঠিন হইয়া উঠিতেছে;—মূলদলিল পত্র কিছুই আর এদেশে নাই, মুরশিদাবাদের নবাবদপ্তরেও তাহার অনুলিপি রক্ষিত হয় নাই।[১] ষ্টুয়ার্ট যখন ইতিহাস সংকলন করেন, তখনই সেগুলি বিলাতের হর্ম্ম্যতলে পড়িয়া একরূপ অপাঠ্য হইয়া উঠিয়াছিল, না জানি এত দিনে সে গুলি আরও কত জরাজীর্ণ হইয়া উঠিয়াছে![২]

 সেকালের লেখকদিগের মধ্যে মুসলমান এবং ইংরাজদিগের গ্রন্থাদিই এখন একমাত্র অবলম্বন;—পর্ত্তুগীজ, ফরাসি এবং ওলন্দাজগণ যাহা কিছু লিখিয়া গিয়াছেন, তাহা এখনও এদেশে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত![৩]

 মুসলমান ইতিহাসের মধ্যে সাইয়েদ গোলাম হোসনের “সায়রউল্—মুতক্ষরীণ,” গোলাম হোসেন সলেমীর “রিয়াজ-উস্‌সলাতিন,” এবং সাইয়েদ আলির “তারিখ—ই—মন্‌সুরী” নামক পারস্যগ্রন্থ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

 “মুতক্ষরীণ” ১৭৮৩ খৃষ্টাব্দে সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। হাজিমুস্তাফা নামধারী একজন ফরাসি পণ্ডিত ইহার সর্ব্বপ্রথম ইংরাজি অনুবাদক; তাঁহার অনুবাদে অনেক স্বকৃত টীকাও সংযুক্ত হইয়াছে। গভর্ণরজেনারল ওয়ারেন হেষ্টিংসের প্রাইভেট সেক্রেটারী জোনাথান স্কট্ আর একখানি ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। লক্ষ্ণৌনিবাসী মুন্সীনওল কিশোরের যত্নে একখানি উর্দ্দু অনুবাদও প্রচারিত হইয়াছে। উর্দ্দু অনুবাদ এবং মুস্তাফার ইংরাজী অনুবাদই মূল গ্রন্থের আনুপূর্ব্বিক অনুবাদ; স্কটের অনুবাদ রীতিমত মূলানুযায়ী বলিয়া গ্রহণ করা যায় না। মূলগ্রন্থ ও এই সকল অনুবাদ দুষ্প্রাপ্য হইয়া উঠিতেছে!

 “রিয়াজ উস্—সালাতিন” ১৭৮৭ - ৮৮ খৃষ্টাব্দে সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ইহার অনুবাদ হয় নাই; এসিয়েটিক সোসাইটীর যত্নে মূলগ্রন্থ মুদ্রিত হইয়াছে, এবং একখানি বাংলা অনুবাদ প্রচার করিবার অয়োজন হইতেছে।

 “তারিখ—ই—মন্‌সুরী” অপেক্ষাকৃত আধুনিক গ্রন্থ; ইহাও অনুবাদিত হয় নাই। সুবিখ্যাত প্রাচ্যপণ্ডিত অধ্যাপক ব্লকম্যান ইহার সারাংশ সংকলন করিয়া গিয়াছেন, তাহা এসিয়েটিক সোসাইটির যত্নে প্রকাশিত হইয়াছে।

 ইংরাজদিগের মধ্যে যাঁহারা লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন, তাঁহাদিগের রচনা প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত দুই ভাগে বিভক্ত। অপ্রকাশিত হস্তলিখিত অনেক পুরাকাহিনী বিলাতের “বৃটীশ মিউজিয়মে” হেষ্টিংসদপ্তর নামে সযত্নে রক্ষিত হইয়াছে। প্রকাশিত পুস্তকাদি ও এখন ক্রমশঃ দুষ্প্রাপ্য হইয়া উঠিতেছে।

 সমসাময়িক প্রকাশিত ইতিহাসগুলি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত; রীতিমত ইতিহাস, রাজকীয় দপ্তর, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুস্তিকাদি। রীতিমত ইতিহাসের মধ্যে অর্ম্মির “ইন্দোস্থান” সর্ব্বশ্রেষ্ঠ;—লেখক বহুবৎসর বাঙ্গালায় এবং মাদ্রাজে বাস করিয়া সমসাময়িক রাজপুরুষগণের সহায়তায় এই সুবৃহৎ ইতিহাস সংকলন করিয়াছিলেন। পরবর্ত্তী ইংরাজলেখকগণ সকলেই অল্পাধিক পরিমাণে “ইন্দোস্থানের” নিকট ঋণী।

 রাজকীয় দপ্তরের অনেক গুলি সমসাময়িক কাগজপত্র একত্র সম্মিলিত করিয়া মহাত্মা পাদরী লং এক সংগ্রহপুস্তক প্রকাশ করিয়াছিলেন; এবং পার্লিামেণ্টের কমিটির একখানি সুবৃহৎ রিপোর্ট প্রকাশিত হইয়াছিল;—এই উভয় গ্রন্থই অনেক তত্ত্বকথায় পরিপূর্ণ।

 ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুস্তিকাদি যে কত প্রকাশিত হইয়াছিল তাহার সংখ্যা নির্ণয় করা সহজ নহে। তন্মধ্যে হলওয়েল, ক্র্যাফ্‌টন্ এবং আইভ্‌সের লেখাই সমধিক উল্লেখযোগ্য। ইহারা সকলেই সমসাময়িক দর্শক ও কোন কোন ঐতিহাসিক ব্যাপারের নায়ক।

 এই সকল পুরাতন গ্রন্থাদি বহুবিধ বাগবিতণ্ডায় পরিপূর্ণ। সমস্তগুলি সংগ্রহ করিয়া, মতপার্থক্যের যথাযথ সমালোচনা করিয়া, তদনুসারে সেকালের ইতিহাস সংকলন করা কেবল যে বহুব্যয় ও বহুশ্রমসাধ্য ব্যাপার তাহাই নহে;—যত্ন চেষ্টা এবং অধ্যবসায় থাকিলেও, একেবারে নির্ভুল হইবার সম্ভাবনা নাই। এরূপ অবস্থায়, সিরাজদ্দৌলার ইতিহাস সংকলনের চেষ্টা হয়ত নিতান্তই অনধিকারচর্চ্চা হইল।

 সিরাজদ্দৌলার কলঙ্ককাহিনীতে স্বদেশ বিদেশ সমাচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে। কলঙ্কের ইতিহাস সর্ব্বজনপরিচিত; কলঙ্কসৃষ্টির ইতিহাস সেরূপ নহে। তাহা সংক্ষেপে বর্ণনা করিতে গিয়া কর্ত্তব্যানুরোধে স্বদেশ বিদেশের অনেক প্রতিভাশালী সাহিত্যসেবকের সুললিত বর্ণনার সমালোচনা করিতে হইয়াছে। সকলস্থলে “সত্যংব্রূয়াৎ, প্রিয়ংব্রূয়াৎ, ন ব্রূয়াৎ সত্যমপ্রিয়ং”—এই পুরাতন অনুশাসনবাক্য পালন করিতে পারি নাই। ইতিহাস সত্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত; সুতরাং ইতিহাসের মর্য্যাদারক্ষার জন্য অনেক স্থলে ব্যথিত হৃদয়ে অনেক অপ্রিয় সত্য উদ্ঘাটন করিতে হইয়াছে।

 সিরাজকলঙ্ক প্রধানতঃ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত,—প্রাচীন এবং আধুনিক। এই সকল কলঙ্ক আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত,—লিখিত এবং অলিখিত। প্রাচীন লিখিত কলঙ্কসংখ্যা অধিক নহে; আধুনিক লিখিত কলঙ্ক সংখ্যাই অধিক। কিন্তু অলিখিত কলঙ্কের নিকট লিখিত কলঙ্ক পরাজয় স্বীকার করিয়াছে। লিখিত কলঙ্কগুলি ইতিহাসে সীমাবদ্ধ; অলিখিত কলঙ্কের আর সীমা নাই;—তাহা এখনও থাকিয়া থাকিয়া জন্ম গ্রহণ করিতেছে। এই সকল কারণে আমরা এখনও সিরাজদ্দৌলার নামে শিহরিয়া উঠি, এবং তাঁহার নামে কলঙ্ক সৃষ্টি করিবার সময়ে অথবা কলঙ্করসাস্বাদন করিবার সময়ে সত্য মিথ্যার আলোচনা করিতে আগ্রহ প্রকাশ করি না! যে মহাত্মার পুণ্যনামে এই ক্ষুদ্র “ঐতিহাসিক চিত্র” উৎসর্গীকৃত হইল, তিনি বহুবৎসর এ দেশের বিলুপ্ত ইতিহাসের পঙ্কোদ্ধারকার্য্যে কায়মনে নিযুক্ত থাকিয়া, সম্প্রতি জীবন সন্ধ্যায় জন্মভূমির গৌরবোজ্জল শান্তশীতল শ্বেত দ্বীপে বিশ্রামবৃত্তি উপভোগ করিতেছেন। তিনি এদেশে থাকিবার সময়ে অনেক সহায়তা করিয়াছেন, এবং তাঁহার পূর্ব্বপরিচিত ভারতবাসী দরিদ্র লেখককে সম্প্রতি লিখিয়া পাঠাইয়াছেন যে—“Shirajuddaulah was more unfortunate than wicked!” বলা বাহুল্য যে ইহাই নিরপেক্ষ ইতিহাসের সত্যানুমোদিত সরল সিদ্ধান্ত; এই ঐতিহাসিক চিত্রে সেই সরল সিদ্ধান্ত কতদূর প্রমাণীকৃত হইয়াছে, পাঠকগণ তাহার সমালোচনা করিবেন।

 যাঁহাদের নিকট উপদেশ, সহানুভূতি এবং উৎসাহ লাভ করিয়া দীর্ঘকালের অধ্যবসায়ে “সিরাজদ্দৌলা সংকলিত মুদ্রিত ও প্রকাশিত হইল, তাঁহাদের নামোল্লেখ করিয়া মৌখিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা নিষ্প্রয়োজন। ভূতপূর্ব্ব ‘সাধনা’—সম্পাদক শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সিরাজদ্দৌলাকে’ প্রথমে পাঠক সমাজে উপনীত করেন, “ভারতীয় সম্পাদিকাদ্বয় তাহাকে সাহিত্যসমাজে সুপরিচিত করিয়া পুস্তকাকারে প্রকাশিত করিবার পথ সহজ করিয়া দিয়াছেন, মীররসম্পাদক, বেঙ্গলীসম্পাদক, অমৃতবাজারপত্রিকা সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, এডুকেশন গেজেট-সম্পাদক প্রভৃতি বঙ্গীয় সাহিত্যসেবকগণ ভারতীতে প্রকাশিত প্রবন্ধ পাঠ করিয়া তাহা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইবার পূর্ব্বেই “সিরাজদ্দৌলার” প্রতি সমাদর প্রদর্শন করিয়া সবিশেষ উৎসাহ বর্দ্ধন করিয়াছেন। ইঁহাদের প্রত্যেকের নিকট চিরকৃতজ্ঞ রহিলাম।

 এই ঐতিহাসিক চিত্রে যে সকল পুস্তকাদি অনুসৃত, অনুবাদিত বা সমালোচিত হইল, যথাস্থানে তাহার নামোল্লেখ করা হইয়াছে। যাঁহারা এই পুস্তকের অদ্যন্ত পাঠ করিবেন, তাঁহাদের নিকট সবিনয় নিবেদন, তাহারা যেন ভ্রমপ্রমাদ লক্ষ্য করিলে তৎসংশোধনে সহায়তা করেন।
নিবেদনমিতি।


রাজসাহী আশ্বিন ১৩০৪
  1. There is little or no record of Sheraju Dowla's time in the Nizamut office now.—Letter to the author from Babu Janaki nath Pandey, B. A. Private Secretary to H. H. the Nawab Amir-ul-Omrah of Murshidabad, dated, the Palace, the 23rd October 1895.
  2. The Office of Indian Records being unfortunately in a damp situation, the ink is daily fading, and the paper mouldering into dust.—Preface to Stewart's History of Bengal, 1813.
  3. Memoirs of Dupleix and Moracin.

সূচীপত্র।

 
বিষয়
পৃষ্ঠা
১।
··· ··· ··· ··· 
২।
··· ··· ··· ··· 
৩।
··· ··· ··· ··· 
১৭
৪।
··· ··· ··· ··· 
২৪
৫। ৩৬
৬। ৫২
৭।
··· ··· ··· ··· 
৬৩
৮। ৭৪
৯।
··· ··· ··· ··· 
৮৬
১০।
··· ··· ··· ··· 
৯৯
১১। ১১১
১২। ১২৫
১৩।
··· ··· ··· ··· 
১৪১
১৪।
··· ··· ··· ··· 
১৫৯
১৫।
··· ··· ··· ··· 
১৭৫
১৬। ১৯৮
১৭। ২২৩
১৮। ২৪১
১৯। ২৫২
২০। ২৬০
২১।
··· ··· ··· ··· 
২৭২
২২।
··· ··· ··· ··· 
২৮৪
২৩।
··· ··· ··· ··· 
২৯৩
২৪।
··· ··· ··· ··· 
৩০৩
২৫।
··· ··· ··· ··· 
৩১৩
২৬।
··· ··· ··· ··· 
৩৩৫
২৭।
··· ··· ··· ··· 
৩৫৪
২৮। ৩৮৬
২৯।
··· ··· ··· ··· 
৪০৭

এই লেখাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত কারণ এটি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারির পূর্বে প্রকাশিত।


লেখক ১৯৩০ সালে মারা গেছেন, তাই এই লেখাটি সেই সমস্ত দেশে পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত যেখানে কপিরাইট লেখকের মৃত্যুর ৮০ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে। এই রচনাটি সেই সমস্ত দেশেও পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত হতে পারে যেখানে নিজ দেশে প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রলম্বিত কপিরাইট থাকলেও বিদেশী রচনার জন্য স্বল্প সময়ের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।