সিরাজদ্দৌলা (নাটক)/পঞ্চম অঙ্ক/সপ্তম গর্ভাঙ্ক

উইকিসংকলন থেকে

সপ্তম গর্ভাঙ্ক

খোসবাগ—দীপমালাগোভিত সিরাজের সমাধিমন্দির

লুৎফউন্নিসা

লুৎফ। (জানু পাতিয়া) জগদীশ্বর, রাজ্যেশ্বর ধরণী শয়নে! ঘোর অশান্তি-তাপে জীবন-তাপ নির্ব্বাপিত হয়েছে;—প্রভু!—ভৃত্যের উপর শান্তিবারি বর্ষণ করো। কুটীল সংসার-সংগ্রামে পরিশ্রান্ত, কৃতন্ত্রের অস্ত্রাঘাতে ব্যথিত, কৈশোরে সন্তাপিত, রাজ্যভারে নিপীড়িত;—দেখো প্রভু! সন্তানকে চরণে স্থান দিয়ো! যে দিন তোমার-ভেরী বাজ্‌বে, সমাধির মহানিদ্রা ভঙ্গ হবে; সেদিন যেন জাগরিত পতির সঙ্গে, তোমার শ্রীচরণ, দেবদূতের সঙ্গে, পূজা ক’র্‌তে পারি। হে অন্তর্য্যামিন্‌, সতীর অন্তর ব্যথা বোঝো! পতি মহানিদ্রগত, সংসার শূন্য, কেবল একমাত্র প্রভু, তুমি ধ্রুবতারা! শান্তিময়, আমার স্বামীর শাস্তি-বিধান করো! সেই শান্তিবারিতে আমার অশান্ত হৃদয় শান্ত করি করি! প্রভু—প্রভু! অনাথার প্রার্থনা গ্রহণ করো।

পুষ্প লইরা ওয়াট্‌স-পত্নীর প্রবেশ

ওয়াট্‌স-পত্নী। বেগম সাব, আমি তোমার স্বামীর সমাধিতে ফুল দিতে আসিয়াছি। তোমার সঙ্গে একত্রে আমি তাঁর মঙ্গল প্রার্থনা করিব। যত দিন এস্থানে থাকিব, তোমার সহিত এই সমাধিতে আলো দিতে আসিব।
লুৎফ। মেম সাহেব, চিরদিনের জন্য আমি তোমার কাছে ঋণী, ঋণ পরিশোধ হবে না। কেবল আমার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, পতি-সোহাগিনী হ’য়ে আনন্দে জীবন যাপন করো!
ওয়াট্‌স-পত্নী। বেগম সাব,—তুমি আমায় স্বামী দিয়াছিলে, আমি তোমার স্বামীকে রক্ষা করিতে পারিলাম না,—এ দুখ চিরদিন আমার হৃদরে থাকিবে। আমি চক্ষের জলের সহিত তোমার স্বামীকে ফুল দিই! (সমাধিতে পুষ্পবর্ষণপূর্ব্বক জানু পাতিয়া প্রার্থনা করণ)

লুৎফউন্নিসার গীত

ধীরে বহ সমীরণ

অতি শ্রান্ত প্রাণকান্ত নিদ্রায় মগন॥
সুধা ঢাল সুধাকর, সন্তাপিত প্রাণেশ্বর,
প্রহরী তারকা রাখ সমাধি-ভবন॥
মেদিনী! অঙ্কের পরে, যত্নে রাখ, রাজ্যেশ্বর
শ্যামল অঞ্চলে, মাগো, করি আবরণ॥
নিশির শিশির দল, মাখি ফুল-পরিমল,
মম আঁখি-বারি সনে করো বরিষণ।
দেবদূত স্বর্ণকান্তি, বিতর বিমল শান্তি,
শিয়রে বিকাশ ধীরে সুরম্য স্বপন॥

যবনিকা

২০৩।১।১, কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট, কলিকাতা হইতে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্সের পক্ষে শ্রীগোবিন্দপদ ভট্টাচার্য্য কর্ত্তৃক প্রকাশিত ও ৪নং-সিমলা ষ্ট্রীট, কলিকাতা হইতে শ্রীগোবিন্দপদ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত।