হিতদীপ/বিবিধ উপদেশ

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
বিবিধ উপদেশ।

বাহিরে মধুর আর গরল অন্তরে
এহেন বচন আনে বদনে যে নরে,
অধম সে জন, লোকে বলে তায় খল,
অসার জীবন তার জনম বিফল।
সামান্য মানবগণ প্রতনু হৃদয়
তেঁই তার হৃদিগত অপ্রিয় বিষয়
প্রকাশে সহসা, কিন্তু মনীষী সুজন
সে সবে নীরবে করে হৃদয়ে পোষণ।
পর উপকারে রত সহজে সুজন,
পরের উন্নতি তেঁই আনন্দ কারণ,
অপকার পরায়ণ খলের নিকর
অন্যের উন্নতি তেঁই হৃদি রোগকর।

উত্তমের পরহিতে নাহি তাপ হয়,
মধ্যম সে তাপে রাখে গোপনে নিশ্চয়,
কিন্তু নরাধমগণ ব্যথিত মানষে
সে তাপে সকল কাছে সতত প্রকাশে।
তাপ নহে নিরাকৃত কভু হয় যায়
এহেন খলতা-লতা খ-লতার প্রায়।
সুমনোবর্জ্জিত দোষ দূষিত বিফল[১]
কেমনে পরিবে তায় বিবুধ সকল।

স-মান সমানে করে সমান উত্তর,
নীচে নাহি বাণী বলে সাধুর নিকর,
দেখ হরি বনধ্বনি প্রতিধ্বনি করে,
গোমাষুর রবে রহে নীরবে গহ্বরে।

কর্ম্মঠ শরীর আর বিচিত্র বচন,
কুশাগ্র সমান বুদ্ধি, গিরি সম ধন,
বিফল সে সবে যদি না রহে কখন,
ক্রমশঃ সুমতি, সত্য, পাঠ, বিতরণ।

রণজয়ী নহে শূর প্রকৃত কখন
জিতেন্দ্রিয় হন সত্য শূরত্ব-ভাজন,

বচন-পটুতা হ’লে বক্তা নাহি হয়,
সুবক্তা সুনৃত-বাদী জানিবে নিশ্চয়।

একক নিশ্বাসে গত যে পরাণ হয়,
অসীম জীবন সনে উপমেয় নয়,
সেই তুচ্ছ ক্ষণস্থায়ী পরাণ কারণ
মলিন কি করে সাধু অনন্ত জীবন?

ভিকারী সকল করে করিয়া ভাজন,
ঘরে ঘরে ফিরে কেন? জান কি কারণ?
ভিক্ষণ তরে নহে শিশু জানিবে নিশ্চয়
কেবল অদান ফল ঘোষে বিশ্বময়।

জননী জনক আর সহোদরগণে
উপকারী নহে বল, কে আছে ভুবনে?
অপকারী জনে শিশু, যার আচরণ
সাধু, তারে সাধু বলি বলে সাধুগণ।

নিজ হানি করি করে পর-উপকার
দেই ত পরম সাধু, সন্দেহ কি তার?
না করি আপন হানি পর-উপকারে
সামান্য মানবগণ রত এ সংসারে,

মানুষ-রাক্ষসগণ নাশে পর হিত
আপন হিতের তরে জগতে বিদিত,

কিন্তু যেই পর হিত নাশে অকারণে
কি নাম হইবে তার জানিব কেমনে?

বাঘিনী সমান জরা করিছে তর্জ্জন,
রিপু সম রোগে করে দেহে প্রহরণ,
কায়-ভগ্নঘট হতে আয়ুবারি যায়
তথাপি অহিতাচারী মানব কি দায়!

অনিত্য শরীর, যাহে এতেক যতন,
নশ্বর বিভব, যাহে এত আকিঞ্চন,
শিয়রে শমন বসে রহে সদা তায়,
তথাপি অহিতাচারী মানব কি দায়!!

ধরম করম-হীন দিন যায় যার
লৌহকার ভস্ত্রা সম নিশ্বাস তাহার,
জীবন মরণ সম, কিবা কাজ তায়,
তথাপি অহিতাচারী মানব, কি দায়!!!


  1. সুমনোবর্জ্জিত=পুষ্পহীন পক্ষান্তরে মনীষিগণ পরিত্যক্ত
    বিফল=ফলশূন্য, অন্যপক্ষে উপকাররহিত।
সম্পূর্ণ।