১৯০৫ সালে বাংলা/মুসলমান সমাজের সম্মান প্রকাশ

উইকিসংকলন থেকে
মুসলমান সমাজের সম্মান প্রকাশ।

 ৪ঠা ফাল্গুন শুক্রবার লাঞ্ছিত স্বদেশভক্তদিগের অভ্যর্থনা করিবার জন্য মুসলমান সমাজের কয়েকজন নেতা এলবার্ট হলে একটী সভার অধিবেশন করিয়াছিলেন। ঐ দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইয়াছিল এবং ক্রমাগত বৃষ্টিপাত হইতেছিল। এরূপ দুর্য্যোগ সত্ত্বেও সভার কার্য্য নির্ব্বেঘ্নে সুসম্পন্ন হইয়াছিল; সভায় অনুষ্ঠানকারীরা লাঞ্ছিতদিগের প্রতি যথোচিত আদর ও সম্মান প্রকাশ করিয়াছিলেন এবং আতর পুষ্পমাল্য ও পুষ্পগুচ্ছ প্রদান পূর্ব্বক তাহাদিগের প্রতি বৰ্দ্ধন করিয়াছিলেন। মৌলবী লিয়াফৎ হোসেন, মুন্সী দেদারবক্স এবং ডাক্তার আবদুল গফুর প্রভৃতি এই স্বদেশ-সেবকদিগকে প্রীতিপূর্ণ-হৃদয়ে আলিঙ্গন করেন। দুর্য্যোগবশতঃ সেদিন লাঞ্ছিতদিগের সকলে সভাস্থলে উপস্থিত হইতে পারেন নাই। লাঞ্ছিতদিগের মধ্যে বাবু ধীরেন্দ্রনাথ সিংহ, বাবু স্বরেন্দ্রনাথ সিংহ, বাবু ভূতনাথ ভট্টাচার্য্য ও বাবু নগেন্দ্রনাথ গুহ রায় এই কয়েক ব্যক্তি সভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন।

 সিটি কলেজের সঙ্গীত শিক্ষক বাবু হেমচন্দ্র সেন দ্বারা কতিপয় জাতীয় সঙ্গীত গীত হইবার পর সভার কার্য্য আরব্ধ হয়। মুন্সী দেদার বক্স মহোদয়ের প্রস্তাব এবং সমবেত জনগণের সম্মভিক্রমে মৌলবী লিয়াকৎ হোসেন সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। অতঃপর সভাপতি মহাশয়ের অনুরোধক্রমে মুন্সী দেদার বক্স বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, হিন্দু ও মুসলমান এই উভয় সম্প্রদায় দীর্ঘকাল সম্প্রীতি সহকারে এদেশে বাস করিতেছেন। মুসলমান নরপতিদিগের শাসনকালে ভারতবর্ষ বিশেষ সমৃদ্ধিসম্পন্ন হইয়াছিল এবং হিন্দু মুসলমানের মধ্যে আন্তরিক প্রতি ও সৌহৃদ্য বিদ্যমান ছিল। এখনও মুসলমানদিগের প্রতি হিন্দুদিগের প্রীতি ও সহৃদয়তা অক্ষুণ্ণ রহিয়াছে। একবার বক্তা রেলগাড়ীতে দারুণ বেদন রোগে আক্রান্ত হইলে উপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় নামক একজন হিন্দু যুবক শুশ্রূষা করিয়া তাঁহার প্রাণ রক্ষা করেন। দেশের কল্যাণ সাধন করিতে গিয়া যাঁহারা লাঞ্ছিত হইয়াছেন, এবং স্বদেশবাসীর নিকট সম্মান-সুচক পদক প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাহাদিগের মধ্যে একজনও মুসলমান নহেন,— ইহাই গভীর পরিতাপের বিষয়।

 অতঃপর ডাক্তার আবদুল গফুর বক্তৃতা করেন, তিনি মুসলমান যুবকদিগকে স্বদেশ-প্রীতি ও স্বদেশের মঙ্গল সাধন বিষয়ে লাঞ্ছিত স্বদেশভক্তদিগের পদাঙ্কামুসরণ করিতে বলেন এবং মুক্তকণ্ঠে লাঞ্ছিত ব্যক্তিবর্গের ধন্যবাদ করেন।

 গফুর মহোদয়ের বক্তৃতা শেষ হইলে শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ মহাশয় বলেন যে,—স্বদেশের কার্য্যে মুসলমান সম্প্রদায়ও নিশ্চেষ্ট নহেন। তাঁহারাও স্বদেশী শিল্পের উন্নতি ও প্রচলনকল্পে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করিতেছেন। মুসলমানেরা যে কর্তৃপক্ষের হস্তে অধিক পরিমাণে নিগৃহীত হন নাই, তাহার কারণ মুসলমানদিগের স্বদেশ-সেবার অভাব নহে। কর্তৃপক্ষের অবলম্বিত কূটনীতির ফলেই এইরূপ ঘটিয়াছে। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত করিবার জন্য তাঁহারা ঐরূপ ভেদনীতির অনুসরণ করিতেছেন। হিন্দু-মুসলমানে চিরদিনই সম্ভাব আছে, মুসলমান সম্রাটদিগের শাসনকালে হিন্দু মুসলমান স্থখস্বাচ্ছন্দ্যে এবং সুহৃদ্যভাবে কালযাপন করিয়াছেন। কিন্তু মুসলমানের সহিত হিন্দুর মিলন ও সম্প্রীতি কর্তৃপক্ষের শাসননীতির প্রতিকুল। এইজন্য তাঁহারা উভয় জাতির মধ্যে বিবাদ ঘটাইবার চেষ্টা করিতেছেন। তবে গবর্ণমেণ্ট এ বিষয়ে যতই চেষ্টা করুন না কেন, পরিণামে তাঁহাদিগের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বিফল হইবে। যে সকল নাম সভামধ্যে সে দিন প্রকাশিত হয় নাই, তন্মধ্যে যে একজনও নিগৃহীত মুসলমান ছিলেন না, একথা কে বলিতে পারে? নানা কারণে এ অবস্থায় সকলের নাম প্রকাশিত হয় নাই। যাহা হউক, এ স্থলে সে বিষয়ে অধিক আন্দোলন করা অনাবশ্যক।

 অতঃপর বাবু লালবিহারী সাহা খৃষ্টান সমাজের পক্ষ হইতে সভার কার্য্যে সম্পূর্ণ সহানুভূতি প্রকাশ করেন। ইহার পর বাবু কৃষ্ণকুমার মিত্র ও সভাপতি মহোদয় প্রভৃতি বক্তৃতা করিলে শ্রীযুক্ত গীষ্পতি রায়-চৌধুরী কাব্যতীর্থ সভার উদ্দেশ্যও কার্য্যের আলোচনা পূর্ব্বক সভাপতি মহোদয়ের ধন্যবাদ করিলে শ্রীযুক্ত গীষ্পতি রায়-চৌধুরী কাব্যতীর্থ সভার উদ্দেশ্যও কার্য্যের আলোচনা পূর্ব্বক সভাপতি মহোদয়ের ধন্যবাদ করিলে সভাভঙ্গ হয়।