পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 এই প্রথম ব্যর্থ প্রেমের ব্যথাই আমার কবিত্বের স্রোত খুলে দিয়েছিল। আমার কিশোর চিত্ত দয়িতকে ঘিরে আকুল আকাঙ্ক্ষায় গুন্ গুন্ করে ফিরতো, প্রেমাস্পদের বুকের কোরকটি তার মধু ও পরাগকোষ নিয়ে আমার কাছে খুলতো না বলে তাকে ঘিরে সে গুঞ্জনের আর বিরাম ছিল না। সে দেওঘর থেকে চলে গেলে চিঠি লিখতুম ভাষাকে বুকের মধুতে ডুবিয়ে ডুরিয়ে কত না মিষ্টি করে, সে তা’ পড়ে অবাক বিস্ময়ে বলতো—‘এমন সুন্দর চিঠি আমি তো লিখতে পারি নে’; অথচ ছোট হলেও সে আমার অনেক ওপরে পড়তো, আমার দু’ বছর আগে সে প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হয়। তার হৃদয় যে শুষ্ক, প্রেম যে তার গুরু হয়ে বসে নি ভাষায় ছন্দ ও মধু আনতে! তার ওপর আমাদের দেশে মেয়েদের শিক্ষা তখন এমন নিকৃষ্ট ছিল যে সে দু’ ছত্র ইংরাজি অবধি বলতে বা লিখতে পারতো না আর আমি তার দু’ ক্লাস নীচে পড়েও কবিত্বে ষ্টাইলে অনবদ্য করে পাতার পর পাতা ইংরাজি লিখে চলতুম। সেই থেকে সুন্দর করে গুছিয়ে চিঠি লেখার ক্ষমতা আমার মাঝে গজাতে লাগলো। বোমার যুগে ধরা পড়ায় আমার কৈশোরের যৌবনের সাথীগুলিকে লেখা শত শত চিঠি তাদের বাপ মা ভয়ে আতঙ্কে পুড়িয়ে ফেলেছেন। নইলে সে হতো এক অপূর্ব্ব পত্রাবলীর সংগ্রহ।

 আমার বড় মামা ছিলেন ভারি চমৎকার মানুষ। তাঁর কথায় কথায় দুলে দুলে নিঃশব্দ চাপা হাসির ঝড় তোলা এখনও

১০১