পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, দাদাবাবুর কাছে প্রস্তাবই করে বসলেন তাঁর মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবেন। দাদাবাবু, বড় মামা সবাই হেসে তো গড়াগড়ি, যোগীন বাবুর আগ্রহ দেখে বললেন, “বারীন তো স্বাধীন, সে করতে চায় করুক না।” মেয়ে বেচারী ছিল কালো আর আমি ছিলুম রূপের উপাসক কবি। খুব জোরে মাথায় একটা ঝাঁকি দিয়ে অসম্মতি জানিয়ে আমি প্রজাপতি দেবতাকে সে যাত্রা রম্ভা দেখিয়ে বাঁচলুম বটে কিন্তু এর পর থেকে সে মেয়ে আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে এলে আত্মীয়াদের ঠাট্টার চোটে আমার বাড়ী ছাড়তে হ’তো। বিয়ের কথায় কিন্তু কেমন একটা গোপন সুখও হতো আবার অনিচ্ছাও আসতো, রামচরণ বাবুদের বাড়ী কারু বিয়ের সানাই বাজলে চাঁদনী রাতের বুকে সে সুর কি উদাস মায়াই যে জাগাত তা’ আমার খাঁ খাঁ করা শূন্য বুকটাই কেবল জানতো ও বুঝতো। আশ্চর্য্য, এই বিয়ে বস্তুটা আমি চিরটা কাল চেয়েছি কিন্তু কখনও করি নি, যত রম্ভা তিলোত্তমারা আমার জীবনে এসে ঢুকেছেন ছানলাতলা মাড়িয়ে সোজা পথে নয় কিন্তু ‘দেয়া, বিজুরী’ ও কাঁটা বনের বাঁকা গহন পথে। নারী আমায় ভালবেসেছে চিরদিনই লুকিয়ে— শাস্ত্র ডিঙিয়ে, লোকাচারের পাচিল টপ্‌কে, অবৈধতার চোর-দরজা খুলে, খিড়কীর পথে; তাই সুন্দরীদের চরম দান আমার ভাগ্যে জুটতে এতখানি দেরী ঘটে গিয়েছিল।

 দাদাবাবুর রোগ প্রথমে এলোপ্যাথিতে সারাবার ব্যর্থ চেষ্টা চললো, তারপরে ভার নিলেন কবিরাজ বিজয়রত্ন সেন; ইনি

১২৭