পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

চলেছেন দু’হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরতে। আলো বাতাসহীন সেই নির্ম্মম অকূল জল—তল যার খুঁজে পাবার আশা দুরাশা, তার গ্রাসে ছেলে হারাবার আকুল আশঙ্কায় কি যে সে বুকে খিল-ধরা ডুব। জেগে উঠেও মা থর থর করে কাঁপছিলেন আর আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় সারা অঙ্গ আমার ছেয়ে দিচ্ছিলেন। সেই দিন সন্ধ্যায় আমার এলো জ্বর এবং শীঘ্রই তা টাইফয়েডে দাঁড়ালো।

 যখন আমার জ্ঞান হ’লো তখন দেখলুম বাবার খুলনার খড়ো বাড়ীতে একটা ঘরে বিছানার সঙ্গে মিশে হাড় পাঁজরের একটা ক্ষীণ বোঝা হয়ে আমি পড়ে আছি। মা রয়েছেন মাথা কোলে নিয়ে মুখের ওপর ঝুঁকে, তাঁর সে দীপ্ত রূপ অনাহারে অনিদ্রার গেছে কালি হয়ে। ক্রমে ক্রমে শুনলুম একুশ দিন নাকি আমি অচেতন ছিলুম। যে দিন নাড়ী ছেড়ে যায় ডাক্তাররা দুঃখে উন্মাদের মত বাবাকে ঘরে চাবী দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলেন। মা এই একুশ দিন আমার শয্যাপ্রান্ত ছেড়ে ওঠেননি বললেই চলে। মৃত্যুর অন্ধপুরী ছাড়িয়ে সেই আমার প্রথম ফিরে আসা, জীবনে রোগে মৃত্যুদণ্ডে এরকম আরও দু’ তিনবার হয়েছে। ফিটের ঘোরে আমি কেবল দেখতুম আমার শরীরটা দশ বিশ মণ ভারী, এক এক খানা হাত পা যেন লোহার বিম, তোলা শক্ত। আলনার কাপড়গুলো কেবলি মানুষ হয়ে ঝুপ ঝাপ করে এসে মাটিতে আমার চারদিকে পড়ছে। রোগ সেরে ভাত খাবার জন্যে সে কি ব্যাকুল কাকুতি মিনতি।

৫৯