পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

মা তাড়িত কত না হুকুমার চিত্ত বালক বোঝে! আমি যখন গ্যাঙাতুম মাষ্টার তখন চেয়ারে বসে ঢুলতেন। তারপর জেগে উঠে পড়া না পারার অপরাধে কাণ লাল করে চড় চাপড় মেরে আমায় বিদ্যা দান করে বিদায় হতেন। আমিও সে দিনকার মত ছুটি পেয়ে বাঁচতুম। গোমস্ লেনের জীবনে ষোলকলায় পূর্ণ আনন্দের চাঁদে এই লেখা পড়া শেখাটাই ছিল কলঙ্ক। প্রত্যেক শিশুচিত্ত স্বভাবতঃ যা’ চায়, যে দিকে তার মনপ্রাণ সারা সত্তা সহজেই উন্মুখ হয় সেই দিককার জ্ঞান যদি তার কাছে ছেলেবেলা থেকে ধীরে ধীরে খেলাধূলা আনন্দের মধ্যে মেলে ধরা যায় তা হলে জ্ঞানচর্চ্চাটা আর বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায় না। আমাদের জীবনে যখন শৈশব ও কৈশোরের উদ্বেল প্রাণ গতিহীন হয়ে এসেছে, সে স্বতঃস্ফূর্ত উপচে-পড়া আনন্দ আর নেই, সংসারের স্বার্থবুদ্ধি দাঁড়িপাল্লা ধরে তার মুদিখানায় দু’ পয়সার কেনা-বেচায় বসে গেছে; তখন আমরা হয়ে বসি গুরু মশাই। অহেতুক উচ্ছল আনন্দের মূর্ত্তি শিশুগুলির হিসাবকিতাব-হারা প্রাণকে সংসারী আমরা আমাদের স্বার্থবুদ্ধির পাঁচন বাড়ি নিয়ে তাড়া করে ঢোকাতে চাই আমাদের সঙ্কীর্ণ ভাল মন্দের গোয়ালে। অনেক ক্ষেত্রে এর ফলে কি যে নির্ম্মম অত্যাচারের সৃষ্টি হয় তা কোপন মা বাপের ঘরে বেদম শিশু ঠ্যাঙানী দেখেই বেশ বোঝা যায়। যারা শিশু, বালক ও যুবকের স্বভাব বোঝে না তাদের হাতে শিশুপালনের ও শিক্ষা-দীক্ষার ভার দেওয়া আর বদ্ধ উন্মাদকে সহজ মানুষের

৬৮