পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

দুঃখের স্মৃতিতে জড়ানো স্বপ্নপুরী বৈদ্যনাথ। সে যে চেতনার কতখানি জুড়ে আজও জেগে আছে তা বলে বোঝান শক্ত। পূবে নীল আকাশের গায়ে গাঢ়তর সুনীল রেখার তিনটী চূড়ায় আঁকা ত্রিকূট পাহাড়, পশ্চিমে ডুবন্ত সূর্য্যের রাঙা আভা গায়ে কুব্জপৃষ্ঠ কচ্ছপের মত প্রকাণ্ড দিগড়িয়া, রাঙা মাটির ঢেউ খেলানো মাঠের মাঝে সবুজ ধান ক্ষেতের কোলে ক্ষীণ রজত রেখায় আঁকা বাঁকা দাড়োয়া নদী। উত্তর-পশ্চিম কোণে নন্দন পাহাড়ের মাথায় ভাঙা মন্দিরের গাছ গজানো দেওয়াল। চার দিকে কত শোভা, কত বনের ঘন রেখা, ধানের সবুজ আঁচল, মুক্ত দিকচক্রবাল, খোলা মাঠের ঝিরঝিরে হাওয়া, উদাস সন্ধ্যা, স্নিগ্ধ ঊষা, কাক জোৎস্না ঢালা কত না সুখ নিশি! সে বৈদ্যনাথ কি আমার ভোলবার জিনিস?

 এই বৈদ্যনাথে ১৮৯৩ সাল থেকে আমার জীবনে পাঁচটি বছর কেটেছে। এই কয়টি বছরের সব ঘটনা খুঁটিয়ে লিখতে গেলে একটি অর্দ্ধেক মহাভারতের নয় পর্ব্বের অবতারণা হতে পারে। কৈশোর কাটিয়ে যৌবনে পড়বার পথে এইখানে স্কুল জীবনে আমার মন প্রাণের খুব দ্রুত বিকাশ হয়েছিল। তারই গল্প এবারে বলবো। মামার বাড়ীটি ঠিক ডাক বাঙালার পাশে, পূবে ও পশ্চিমে তার উধাও সুদূর ঢেউ খেলানো মাঠ; উত্তরে মিস এডামসের মিশন-বাড়ী। এই মিস এডামস্ অতি ভক্তিমতী ও নিষ্ঠাবতী খৃশ্চান ছিলেন, তিনি অতি অকপটে ঐকান্তিকতায় বিশ্বাস করতেন প্রেমাবতার যীশুকে যে না ভজেছে তার অনন্ত

৮১