পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 স্কুলে ছাত্রদের মধ্যে খুব ভালবাসার জিনিস ছিলেন সখারাম বাবু। দীর্ঘছন্দ ঋজু দেহ, কেশ-বহুল বিস্তৃত বক্ষ, দ্রুত দৃঢ়সংকল্পের গতি, সুকৃষ্ণ গুম্ফ, ঘন ভ্রুযুগ, সুরসিক, সদাহাস্য পরায়ণ অথচ আদর্শবাদী এই মানুষটি ছিলেন ছেলেদের সব বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রাণ। আমাদের দরিদ্র ভাণ্ডার, কুষ্ঠাশ্রম সাহায্য সমিতি, সব কিছুর ইনিই ছিলেন নেতা। তখন ১৮৯৪ সাল, অত আগে আমরা এই সখারাম বাবুর প্রেরণায় দাড়োয়া নদীর শুষ্ক বালুচরে লাঠি খেলতুম; নন্দন পাহাড়কে দুর্গ করে একদল মোগল ও অন্য দল মাওলী সেনা সেজে যুদ্ধ করতুম। সখারাম বাবুর জীবনের সব চেয়ে বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল শিবাজীর জীবন-চরিত লিখে যাওয়া, মহারাজ বীর ছত্রপতির এত বড় শ্রদ্ধালু পূজারী আমি আর দেখি নি। এঁর প্রাণাগ্নির আঁচ পেয়ে আমরাও নেপোলিয়ন ও শিবাজীকে করেছিলুম জীবনের আদর্শ পুরুষ। কোথায় সাঁওতাল পরগণার এক নগণ্য স্কুলের ছাত্র আর কোথায় মহারাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাতা শিবাজী, হাজার অসম্ভব হলেও এরকম রঙিন বেহিসাবী আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে বড় করে।

 তখনকার দেওঘর স্কুলে আমার চেয়ে ভাল ছেলে অনেক ছিল, পরীক্ষায় তারা ফার্স্ট সেকেণ্ড হ’তো, রাশি রাশি পুরস্কার পেতো, মাষ্টারদের আদর কুড়োতো; কিন্তু আজ তারা জীবনের কর্মক্ষেত্রে কোথায়? দু’ এক জন বড় চাকরী পেয়েছে, প্রফুল্ল মিত্র সায়েন্স কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছে, কিন্তু অধিকাংশই তলিয়ে

৯০