পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অপ্রতিভ হলো অতগুলি আমোদপ্রিয় বড় বড় মেয়েদের সামনে।

 বললে-দিদি, ঠাকুরজামাইকে দিয়ে যান গে—

 —তোর ঠাকুরজামাইকে তুই দেখেচিস নাকি?

 বিলু এগিয়ে এসে বললে-কেন রে ছোটবৌ, ঠাকুরজামাইয়ের নাম হঠাৎ কেন? তোর লোভ হয়েছে নাকি? খুব সাবধান। ওদিকি তাকাবি নে। আমরা তিন সতীনে ঝ্যাঁটা নিয়ে দোরগোড়ায় বসে পাহারা দেবো, বুঝলি তো? ঢুকবার বাগ পাবি ক্যামন করে?

 কাছাকাছি সবাই হি-হি করে হেসে উঠলো।

 এমন সময়ে একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখা গেল—ঠিক কি সেই সময়েই দেখা গেল স্বয়ং ভবানী বাঁড়ুয্যে রাঙা গামছা কাঁধে এবং কোলে খোকাকে নিয়ে আবির্ভূত।

 নালু পালের স্ত্রী তুলসী বললে-ঐ রে! ঠাকুরজামাই বলতে বলতেই ওই যে এসে হাজির-

 ভবানী বাঁড়ুয্যে কাছে এসে বললেন-বেশ! আমাদের ঘাড়ে ওকে চাপিয়ে দিয়ে—বেশ! ও বুঝি থাকে? ঘুম ভেঙেই মা-মা চীৎকার ধরলো। অতিকষ্টে বোঝাই—তাই কি বোঝে।

 খোকা জনতার দিকে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে বললে—মা-

 বিলু ছুটে গিয়ে খোকাকে কোলে নিয়ে বললে-কেন, নিলু কোথায়? আপনার ঘাড়ে চাপানো হয়েচে কে বললে? নিলুর কোলে বসিয়ে দিয়ে আমি-

 —বৌদিদিরা ডেকে পাঠালেন নিলুকে। বড়দাদার শরীর অসুখ করেচে- ও চলে গেল আমার ঘাড়ে চাপিয়ে-

 বৌ-ঝিরা ভবানীকে দেখে কি সব ফিস্‌ফিস্‌ করতে লাগলো জটলা করে, কেউ কথা বলবে না। সে নিয়ম এসব অঞ্চলে নেই। প্রবীণ বিধু এগিয়ে এসে বললে-ও বড়-মেজ-ছোট জামাইবাবু, সব বৌ-ঝিরা বলচে, ঠাকুর- জামাইকে আজ যখন আমরা পেয়ে গিইচি তখন আজ আর ছাড়চি নে- আমাদের-

১৭৬