পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বকবার মেজাজ নেই তার আজ। শুধু বসে বসে ভাবতে ইচ্ছে করছে…গয়া তার কাছ ঘেঁষে এসে মশা মারলে..হয়, হয়। ধরা দেয়। স্বর্গের ঊর্বশী মেনকা রম্ভাও ধরা দেয়, সে চাইচে যে…

 বর্ষা নামলো হঠাৎ। ভাদ্রসন্ধ্যা অন্ধকার ক’রে ঝম্‌ঝম্‌ বৃষ্টি নামলো। খড়ের চালার ফুটো বেয়ে জল পড়ছে মাটির উনুনে। ভাত চড়িয়েছে উচ্ছে আর কাঁচকলা ভাতে দিয়ে। আর কিছু নেই, আর কিছু রান্না করবার দরকার কি? খাবার ইচ্ছে নেই। শুধু ভাবতে ভালো লাগে…শুধু গয়ামেমের সেই অদ্ভুত ভঙ্গি, তার সে মুখের হাসি…গয়া তার কাছে ঘেঁষে এসে একটা চড় মেরেছে তার গায়ে মশা মারতে…

 মশা কি সত্যই তার গায়ে বসেছিল?

 আচ্ছা, এমন যদি হোতো—

 সে ভাত রান্না করচে, গয়া হাসি-হাসি মুখে উঁকি দিয়ে বলও এসে—খুড়োমশাই, কি করচেন?

 —ভাত রাঁধচি গয়া।

 —কি রান্না করচেন?

 —ভাতে ভাত।

 —আহা, আপনার বড় কষ্ট!

 —কি করবো গয়া, কে আছে আমার? কি খাই না-খাই দেখচে কে?

 —আপনার জন্যি মাছ এনেচি। ভালো খয়রা মাছ।

 —কেন গয়া তুমি আমার জন্যি এত ভাবো?

 —বড্ড মন কেমন করে আপনার জন্যি। একা থাকেন কত কষ্ট পান…

 ভাত হয়ে গেল। ধরা গন্ধ বেরিয়েচে। সর্ষের তেলে ভাতে ভাত মেখে খেতে বসলো প্রসন্ন চক্কত্তি। রেড়ির তেলের জল-বসানো দোতলা মাটির পিদিমের শিখা হেলছে দুলছে জোলো হাওয়ায়। খাওয়ার শেষে—যখন প্রায় হয়ে এসেচে, তখন প্রসন্ন আবিষ্কার করলে পাতে সে নুন নেয় নি, উচ্ছে ভাতে, কাঁচকলা ভাতে আলুনি খেয়ে চলেছে এতক্ষণ।

২১৮