পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —ওরে, কি ক’রে যাবি? বাঁশবনের মাথায় বেজায় মেঘ করেচে—ভীষণ বৃষ্টি আসবে-ছাতিটাও তো আজ আনিস নি—

 —বাঁটটা ভেঙে গিয়েচে। আর একটা ছাতি তৈরি করচি। ভালো কচি তালপাতা এনে কাদায় পুঁতে রেখে দিইচি। সাত-আট দিনে পেকে যাবে। সেই তালপাতায় পাকা ছাতি হয়—

 —কেন, কেয়াপাতায় ভালো ছাতি হয়—

 —টেকে না গুরুদেব। তালপাতার মত কিছু না—

 —কে বললে টেকে না? কেয়াপাতার ছাতি সবাই বাঁধতি জানে না। আমি তোরে বেঁধে দেবো একখানা ছাতি—দেখবি—

 শিষ্য বিদায় নিয়ে চলে যাবার কিছু পরেই গয়ামেম ঘরে ঢুকলো, হাতে তার একছড়া পাকা কলা! সে দূর থেকে রামকানাইকে প্রণাম করে দোরের কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো। রামকানাই বললেন—এসো মা, বোসো বোসো, দাঁড়িয়ে কেন? হাতে ও কি?

 গয়া সাহস পেয়ে বললে—এক ছড়া গাছের কলা। আপনার চরণে দিতি এ্যালাম—আপনি সেবা করবেন।

 —ও তো নিতি পারবো না—আমি কারো দান নিই নে—

 —এক কড়া কড়ি দিয়ে নিন—

 —রুগীদের বাড়ি থেকে নিই। ওতে দোষ হয় না। বটকেষ্ট সামন্ত আমার রুগী। হাঁপানিতে ভুগচে, ওর বাড়ি থেকে নিই এটা-ওটা। তুমিতো আমার রুগী নও মা—অবিশ্যি আশীর্বাদ করি রুগী না হতি হয়।

 —রোগের জন্যি তো এ্যালাম, জ্যাঠামশাই—

 —কি রোগ?

 গয়া ইতস্ততঃ করে বললে—সর্দিমত হয়েচে। রাত্তিরে ঘুম হয় না।

 —ঠিক তো?

 —ঠিক বলচি বাবা। আপনি সাক্ষাৎ শিবতুল্য লোক। আপনার সঙ্গে মিথ্যে বললে নরকে পচে মরতি হবে না?

২২৩