পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কেন এরা! যে ভারতবর্ষের কথা তিনি ‘শকুন্তলা’ নাটকের মধ্যে পেয়েছিলেন (মনিয়ার উইলিয়ামসের অনুবাদে), যে ভারতবর্ষের খবর পেয়েছিলেন এডুইন আর্নল্ডের কাব্যের মধ্যে, যা দেখতে এতদূরে তিনি এসেছিলেন—এতদিন পরে এই ক্ষুদ্র গ্রাম নদীতীরের অপরাহ্নটিতে সেই অনিন্দ্যসুন্দর মহাকবিত্বময় সুপ্রাচীন ভারতবর্ষের সন্ধান পেয়েছেন। সার্থক হোল তাঁর ভ্রমণ।


 রাজারামের ভগ্নী তিনটির বয়স যথাক্রমে ত্রিশ, সাতাশ ও পঁচিশ। তিলুর বয়স সবচেয়ে বেশি বটে কিন্তু তিন ভগ্নীর মধ্যে সে-ই সবচেয়ে দেখতে ভালো, এখন কি তাকে সুন্দরী-শ্রেণীর মধ্যে সহজেই ফেলা যায়। রঙ অবিশ্যি তিন বোনেরই ফর্সা, রাজারাম নিজেও বেশ সুপুরুষ, কিন্তু তিলুর মধ্যে পাকা সবরি কলার মত একটু লাল্‌চে ছোপ থাকায় উনুনের তাতে কিংবা গরম রৌদ্রে মুখ রাঙা হয়ে উঠলে বড় সুন্দর দেখায় ওকে। তন্বী, সুঠাম, সুকেশী,—বড় বড় চোখ, চমৎকার হাসি। তিলুর দিকে একবার চাইলে হঠাৎ চোখ ফেরানো যায় না। তবে তিলু শান্ত পল্লীবালিকা, ওর চোখে যৌবনচঞ্চল কটাক্ষ নেই, বিয়ে হোলে এতদিন ছেলেমেয়ের মা ত্রিশ বছরের অর্ধপ্রৌঢ়া গিন্নী হয়ে যেতো তিলু। বিয়ে না হওয়ার দরুন ওদের তিন বোনেই মনে-প্রাণে এখনো সরলা বালিকা। আদরে-আবদারে, কথাবার্তায়, ধরণ-ধারণে—সব রকমেই।


 জগদম্বা তিলুকে ডেকে বললেন—চাল কাটার ব্যবস্থা করে ফেলো ঠাকুরঝি।

 —তিল?

 —দীনু বুড়িকে বলা আছে। সন্দেবেলা দিয়ে যাবে। নিলুকে বলে দাও বরণের ডালা যেন গুছিয়ে রাখে। আমি একা রান্না নিয়েই ব্যস্ত থাকবো।

 —তুমি বান্নাঘর ছেড়ে যেও না। যজ্ঞিবাড়ির কাণ্ড। জিনিসপত্র চুরি যাবে।

 তিন বোনে মহাব্যস্ত হয়ে আছে নিজেদের বিয়ের যোগাড় আয়োজনে। ওদের বাড়িতে প্রতিবেশিনীরা যাতায়াত করছেন। গাঙ্গুলীদের মেজ বৌ বল্লে ও ঠাকুরঝি, বলি আজ যে বড্ড বাস্ত, নিজের বাসরঘর সাজিও কিন্তু।

১৯