পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মুখের দিকে আমি নিঃসঙ্কোচে ও প্রেমের দৃষ্টিতে চেয়ে দেখবার অধিকার রাখি, কারণ তিনি যে আমার বাবা। হাতে গড়া পুতুলই নয় শুধু তাঁর -তাঁর সন্তান। এই খোকা তাঁরই এক রূপ। এর অর্থহীন হাসি, উল্লাস তাঁরই নিজের লীলাউজ্জল আনন্দের বাণীমূর্তি।

 এই ছেলে বড় হয়ে যখন সংসার করবে, বৌ আনবে, ছেলেপুলে হৰে ওদের তখন ভবানী থাকবেন না। দশ বছর আগে বিস্মৃত কোনো ঘটনার মত তিনি নিজেও পুরনো হয়ে যাবেন এ সংসারে। ঐ বেতসকুঞ্জ, ঐ প্রাচীন পুষ্পিত সপ্তপর্ণটা হয়তো তখনও থাকবে-কিন্তু তিনি থাকবেন না।

 জগতের রহস্যে মন ভরে ওঠে ভবানীর, ঐ সান্ধ্যসূর্যরক্তচ্ছটা...নিস্তারিণীর বুদ্ধি-প্রোজ্জল কৌতুক দৃষ্টি,...তিলুর সপ্রেম চাহনি, এই কচি ছেলের নীল শিশুনিয়ন-সবই সেই রহস্যের অংশ। কার রহস্য? সেই মহারহস্যময়ের গহন গভীর শিল্পরহস্য।

 তিলু পিছন থেকে এসে কি বলতেই ভবানীর চমক ভাঙলো। তিলুর কঁধে গামছা, কাঁখে ঘড়া-নদীতে সে গা ধুতে এসেচে।

 হেসে বললে-আমি ঠিক জানি, খোকাকে নিয়ে উনি এখানে রয়েচেন—

 ভবানী ফিরে হেসে বললেন-নাইতে এলে?

 -আপনাদের দেখতিও বটে।

 -নিলু কোথায়?

 -রান্না চড়াবে এবার।

 -বসো।

 -কেউ আসবে না তো?

 -কে আসবে সন্দেবেলা?

 তিলু ভবানীর গা ঘেষে বসলো। ঘড়া অদূরে নামিয়ে রেখে এসে স্বামীকে প্রায় জড়িয়ে ধরলে।

 ভবানী বললেন-খোকা অবাক হয়ে গিয়েচে, অমন কোরো না, ও না বড় হোলো?

২৬৬