পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ছড়াইয়া, চামর দোলাইয়া, সোনা আর ফুল দিয়া, জয়-জয় শব্দে রাজা করিয়া দেওয়া হইল। কর্ণ ইহাতে চিরদিনের তরে দুর্যোধনের বন্ধু হইয়া গেলেন৷

 এদিকে সেই সারথি অধিরথ সংবাদ পাইয়া হাঁপাইতে হাঁপাইতে পাগলের মতন সেখানে ছুটিয়া আসিয়াছে। তাহাকে দেখিয়াই কর্ণ তাঁহার সেই রাজার সাজসুদ্ধ উঠিয়া তাড়াতাড়ি প্রণাম করিতে গেলেন, কিন্তু অধিরথ ব্যস্ত-সমস্ত হইয়া নিজের চাদর দিয়া পা ঢাকিয়া রাখিলেন। তারপর ‘বাপ! বাপ’ বলিয়া কর্ণকে আদর করিতে করিতে বুড়া চক্ষের জলে তাহার গা ভিজাইয়া দিলেন৷

 তাহা দেখিয়া ভীম বলিলেন, ‘সারথির ছেলে, তুই অর্জুনের হাতে প্রাণটা কেন দিতেছিস? ততক্ষণ রাশ ধরগে যা!’

 তখন রাগে কর্ণের ঠোঁট কাঁপিতে লাগিল। দুর্যোধন পাগলা হাতির মতো ক্ষেপিয়া উঠিয়া বলিলেন, ‘কর্ণ রাজা হওয়াতে যদি কাহারো আপত্তি থাকে, আসিয়া যুদ্ধ কর!’

 ভাগ্যিস তখন সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছিল, নহিলে কি হইত, কে জানে? সন্ধ্যা হওয়ায় কাজেই সকলকে ঘরে ফিরিতে হইল, বিপদও কাটিয়া গেল৷

 শিক্ষা শেষ হইলে গুরুকে দক্ষিণা দিতে হয়। রাজপুত্রদেরও শিক্ষা শেষ হইয়াছে, এখন দক্ষিণা দিবার সময়। দ্রোণ রাজপুত্রদিগকে বলিলেন, ‘তোমরা পাঞ্চাল দেশের রাজা দ্রুপদকে ধরিয়া আনিয়া দাও। ইহাই আমার দক্ষিণা৷’

 সে কথায় রাজপুত্রেরা তখনই দ্রোণকে লইয়া দ্রুপদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে চলিলেন। দুর্যোধন, কর্ণ, দুঃশাসন, ইঁহাদিগকে পাণ্ডবদের আগে যুদ্ধ করিবার জন্য বড়ই ব্যস্ত দেখা গেল। ইচ্ছা যে বাহাদুরিটা তাঁহাদেরই হয়। পাণ্ডবদের তাহাতে কোনো আপত্তি ছিল না, কাজেই তাঁহারা দ্রোণের সঙ্গে একটু পিছনে থাকিলেন। কিন্তু দুর্যোধনেরা অনেক যুঝিয়াও বেশি কিছুই করিতে পারিলেন না, এবং পাঞ্চালেরাই যেন ‘মার্-মার্’ করিয়া আরো তেজের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাদের গর্জন এমনই ভয়ংকর হইয়া উঠিল যে, তাহা শুনিয়া অর্জুন আর বসিয়া থাকিতে পারিলেন না৷

 দ্রোণকে লইয়া পাণ্ডবেরা যুদ্ধে নামিলেন, কিন্তু দ্রুপদের লোকেরা তবুও ভয় পাইল না। ভীমের গদায় কত হাতি ঘোড়ার মাথা ফাটিল, রথ চুরমার হইল, সৈন্য পিষিয়া গেল। অর্জুনের বাণেও কত হাতি ঘোড়া সিপাহী সৈন্য কাটিল, তাহার লেখাজোখা নাই। কিন্তু দ্রুপদ কাবু হওয়া দূরে থাকুক, বরং ভীম অর্জুনকে প্রশংসা করিয়া আরো ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। তাঁহার সেনাপতিরাও কম যুদ্ধ করিলেন না৷

 যাহা হউক, অর্জুনের হাতে ক্রমে সকলেরই জব্দ হইতে হইল। শেষে রহিলেন কেবল দ্রুপদ, তাহারও ধনুক নিশান সারথি, সব গিয়াছে। তখন অর্জুন ধনুক-বাণ ফেলিয়া, তলোয়ার হাতে সিংহনাদ পূর্বক, এক লাফে তাঁহার রথে উঠিয়া তাঁহাকে ধরিয়া ফেলিলেন। দ্রুপদ মন্ত্রীসহ ধরা পড়িলেন তাঁহার লোকজন পলাইয়া গেল, কাজেই যুদ্ধও মিটিল। ভীমের কিন্তু এমন একটুখানি যুদ্ধ একেবারেই ভালো লাগিল না। তাঁহার ইচ্ছে ছিল আরো অনেকক্ষণ যুদ্ধ করেন৷

 দ্রুপদকে দ্রোণের নিকট উপস্থিত করা হইলে, দ্রোণ তাঁহাকে বলিলেন, ‘দ্রুপদ! তোমার রাজ্যও গিয়াছে, নগরও গিয়াছে তোমার প্রাণ অবধি আমাদের হাতে। এখন আমাদের