পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গলার গীতিকবিতা \gم যখন কবি তেঁহার নিজের আত্মায় প্ৰতিফলিত আসল রূপের স্বরূপ প্ৰকাশ করেন, তখনি তাহ রূপান্তরে পরিণত হয়। আমরা আধুনিক গীতি-কবিতায় সেই জিনিষটি পাই না ; এ কথা আমি পুর্বেও বলিয়াছি, এখনও বলিতেছি । কিন্তু গান যখন আসে, তখন সুর আসে। ভাবের সঙ্গে সঙ্গে । কথা, শুধু সেই রূপকের-সুরের সেই রূপকে ফুটাইতে সহায়তা করে । সেইখানে সুরের সঙ্গে রসিক কবির আত্মার স্বানুভূতি জাগে, পরম্পর নিজের মাধুরী আস্বাদন করে, তাহতেই সুর ও কথা আপনিই আসে। যে গান রসের সৃষ্টমূৰ্ত্তিকে সুরের রূপে ঢালাই করিয়া দেয়, সেই গানই বাঙ্গলার নিজস্ব সম্পত্তি। ইংরাজি গীতি-কবিতায় ভাবের যে দোলন বা গতি প্ৰকাশ অধিকাংশই কবির মনের গতির উপর প্ৰতিষ্ঠিত । কিন্তু ৰাঙ্গল গান তাহা নয়, তাহার গতি আত্মার আপনার নিজস্ব । তাহার সুরের ও ভাবের মাদকতা জাগে, সেই উন্মত্ততায় সে গানের ধারা সৃষ্টি করে। ইহাই সেই ‘স্বদিতে নিজ মাধুরী’ । আমাদের দেশের মেয়েলী-ছড়া, গাথাকে। গীতি কবিতার স্তরে ফেলা যাইতে পারে বটে, তবে তাহার ছাঁচও বস্তুর নিজের সত্তার উপর প্ৰতিষ্ঠিত। কবির প্রাণের ছাপ নাই, বস্তুর আস্থত্ব পুর্ণমাত্রায় সরস • থাকে। এই বিলাতী গীতি-কবিতার আমদানীতে আমরা ঠিক নিজেদের রাখতে পারি নাই। আমাদের আত্মস্থ হইবার পথে, এই পথ- এই ছাঁচ প্ৰকাণ্ড অন্তরায়। কেন না, বস্তুর সহিত ইহা আমাদের সম্যক পরিচয় করাইয়া দেয় না। একটা কুহেলিকাময় আবরণের ভিতর আমাদের ষে নিশ্বাস, তাহ রুদ্ধ হইয়া আসে। এই যে ভাব, ইহা সত্যও নয়, অসত্যও নয়, জ্ঞানও নয়, অজ্ঞানও নয়, এই • এক অদ্ভুত অবস্থায় আধুনিক গীতি-কবিতা দাড়াইয়াছে। কেন না, মাটীর রসের সঙ্গে সেই দেশের মানুষের দেহের ও মনের রসের একটা অন্তরের মিল আছে। সেই