পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দামিনী
৭৫

রাখে নাই। সে যতই বুঝিল গুরুজি মনে মনে ভয় এবং শচীশ মনে মনে ব্যথা পাইতেছে ততই সে আমাকে লইয়া আরো বেশি টানাটানি করিতে লাগিল। এমন হইল যে হয়তো আমি শচীশ এবং গুরুজি বসিয়া কথা চলিতেছে, এমন সময় দরজার কাছে আদিয়া দামিনী ডাক দিয়া গেল, “শ্রীবিলাসবাবু, একবার আসুন তো” শ্রীবিলাসবাবুকে কী যে তার দরকার তাও বলে না। গুরুজি আমার মুখের দিকে চান, শচীশ আমার মুখের দিকে চায়, আমি উঠি কি না-উঠি করিতে করিতে দরজার দিকে তাকাইয়া ধাঁ করিয়া উঠিয়া বাহির হইয়া যাই। আমি চলিয়া গেলেও খানিকক্ষণ কথাটা চালাইবার একটু চেষ্টা চলে, কিন্তু চেষ্টাটা কথাটার চেয়ে বেশি হইয়া উঠে, তার পরে কথাটা বন্ধ হইয়া যায়। এমনি করিয়া ভারি একটা ভাঙাচোরা এলোমেলো কাণ্ড হইতে লাগিল, কিছুতে কিছু আর আঁট বাঁধিতে চাহিল ন।

 আমরা দুজনেই গুরুজির দলের দুই প্রধান বাহন, ঐরাবত এবং উচ্চৈঃশ্রবা বলিলেই হয়—কাজেই আমাদের আশা তিনি সহজে ছাড়িতে পারেন না। তিনি আসিয়া দামিনীকে বলিলেন, “মা দামিনী, এবার কিছু দূর ও ছুর্গম জায়গায় যাইব। এখান হইতেই তোমাকে ফিরিয়। যাইতে হইবে।”

 “কোথায় যাইব।”

 “তোমার মাসির ওখানে।”

 “সে আমি পারি না।”

 “কেন।”