বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার কোণের বিছানায় তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে কেরোসিনের আলোয় মৃদু মন্দস্বরে খাতা পেন্সিল হাতে গান করি, আর পশ্চিমের উন্মুক্ত বাতায়ন থেকে— তুমি ভাবচ সেই বাতায়ন থেকে স্বগের অঙ্গরীরা আমার গান শুনতে আসেন— ঠিক তা নয়, সেই উন্মুক্ত বাতায়ন থেকে বাকে বাকে কীট পতঙ্গ আসতে থাকে— তাও যদি তারা আমার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আসত তাহলেও আমি মনে মনে একটু অহঙ্কার করতে পারতুম,— তারা আসে ঐ ভীট্জ লন্ঠনের কেরোসীন আলোটা লক্ষ্য করে। উন্মুক্ত বাতায়ন থেকে হঠাৎ এক একবার— আন্দাজ করে বল দেখি কি শুনতে পাই ? তুমি ভাবচ নক্ষত্ৰলোক থেকে অনাহত বীণার অশ্রুত গীত ধ্বনি? তা নয়, একসঙ্গে ভোদা, দাজু, টম, রঞ্জ, এবং এ মুলুকের যত দিশি কুকুরের তুমুল চীৎকার শব্দ। যদি তারা আমার এই গান শুনে বাহবা দেবার জন্যে এই আওয়াজ করত, তাহলেও বুঝতুম কবির গানে চতুষ্পদ পশুরা পৰ্য্যন্ত মুগ্ধ— কিন্তু তা নয়, তারা স্বজাতি আগন্তুকের প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে স্বৰ্গমৰ্ত্ত্যকে চঞ্চল করে তোলে— কবির গানে তারা কর্ণপাতও করে না। যাই হোক, ভূতলের কুকুর থেকে আকাশের তারা পর্যন্ত সবাই যদিচ উদাসীন তবুও দুটো একটা করে গান জমচে । আকাশের তারার সঙ্গে আমি ঝগড়া করতে চাই নে— করলেও তারা জবাব দেবেনা— কিন্তু রাণুর সঙ্গে ঝগড়ার উপলক্ষ্য পেলে আমি ছাড়ব না— সে উপলক্ষ্যটি এই যে, আমার গান শোনবার জন্যে রাণুর বাবজা কাশী কলকাতা প্রভৃতি বহু দূর দেশ ঘুরে এই শান্তিনিকেতনে এলেন আর তার সঙ্গে শ্ৰীমতী রাণু এলেন না কেন? শিশু মহাভারত আর চারুপাঠ তৃতীয় ভাগের কাছে শ্রীযুক্ত ভানুদাদার গান আজ হার মানল এও কি সহ্য হয় ? ঝগড়াটা চিঠির শেষ দিকটাতে আরম্ভ করেছি— বেশ ভাল করে হাত মুখ নাড়বার জায়গা পাচ্চিনে— হঠাৎ থামিয়ে দিতে হল। ইতি ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩২৫ তোমার ভানুদাদা