পাতা:জাতক (প্রথম খণ্ড) - ঈশানচন্দ্র ঘোষ.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথার উৎপত্তি । আছে। বাপথজাতকের গাথাতে সমস্ত আখ্যানটাই সংক্ষিপ্তাকারে বিবৃত্ত রহিয়াছে এবং তাহার সঙ্গে উপদেশাংশ সংযোজিত হইয়াছে । আরও অনেক জাতকে এইরূপ দেখা যাইবে । উত্তরকালে পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ প্ৰভৃতি গ্রন্থেও কতকগুলি শ্লোক শুদ্ধ আখ্যানের জন্যই রচিত হইয়াছে, যেমন“কঙ্কণস্য তু লোভেন মগ্নঃ পঙ্কে সুন্দুস্তরে বৃদ্ধ ব্যান্ত্রেণ সম্প্রাপ্ত: পথিকঃ সংস্মৃতো যথা”, “মার্জারস্য হি দোষেণ হতো গৃধ্ৰুে জরদগবঃ”,ইত্যাদি, । আবার কতকগুলি শ্লোক মহাভারত, শান্তিশতক প্ৰভৃতি গ্ৰন্থ হইতেও গৃহীত হইয়াছে। ভাষা ও ভাবেও সমস্ত গাথা এক নহে, কোথাও ভাষা নির্দোষ, ভাব কবিত্বপূর্ণ ও হৃদয়গ্ৰাহী ; কোথাও ভাষা জটিল এবং ভাবের দৈন্যে নিকৃষ্ট গদ্য অপেক্ষাও অপকৃষ্ট । ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকর্তৃক রচিত না হইলে এরূপ পার্থক্য ঘটতে পারে না । জাতকের অধিকাংশ গাথার বক্তা বোধিসত্ত্ব কিংবা অতীতবস্তু-বৰ্ণিত অন্য কোন প্ৰাণী ; কিন্তু কোথাও কোথাও বুদ্ধপ্রোক্ত গাথাও দেখা যায়। প্ৰবাদ আছে যে বুদ্ধ আখ্যানটী বলিতে বলিতে, কিংবা উহার উপসংহার-কালে অভিসম্বুদ্ধ হইয়া ঐ সকল গাথা বলিয়াছিলেন । ইহারা “অভিসম্বুদ্ধ গাথা।” নামে অভিহিত । ਫਣs 2ਲੇਕ জাতকের উৎপত্তি সম্বন্ধে বৌদ্ধদিগের মত বলা হইয়াছে। কিন্তু সমস্ত জাতকই যে গৌতম বুদ্ধকর্তৃক রচিত, প্ৰাচীন সাহিত্য অনুসন্ধান করিলে ইহা স্বীকার করা যায় না । আখ্যানগুলির রচনার পার্থক্য, পুনরুক্তি-দোষ এবং গাথাসমূহের ভাষাগত ও কবিত্বগত বিভেদ হইতে দেখা যায়, এই সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি দ্বারাই রচিত হইয়াছিল । কোন কোন আখ্যায়িকায় বৌদ্ধভাব নিতান্ত কৃত্রিম বলিয়াও প্ৰতীয়মান হয় ; তাহাতে বোধিসত্ত্ব বৃক্ষদেবতাব্দিরূপে ঘটনাটী পৰ্য্যবেক্ষণ করিতেছেন মাত্র ; নিজে কোন ব্যাপারে প্ৰত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করিতেছেন না । কথাচ্ছিলে সদুপদেশ দিবার পদ্ধতি স্মরণাতীত কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে। মৃগয়াজীবী ও অরণ্যবাসী প্ৰাচীন মানব সৰ্প-শৃগাল-কাক-পেচক-উষ্ট্র-গৰ্দভান্দির প্ৰকৃতি পৰ্য্যবেক্ষণ করিবার যথেষ্ট সুযোগ পাইতেন ; তিনি রসজ্ঞা হইলে ইহাদের চরিত্র অবলম্বন পূর্বক কথা রচনা করিতেন, ঐ সকল কথা দ্বারা কখনও সভা-সমিতিতে লোকের চিত্তরঞ্জন করিতেন, কখনও মানব হৃদয়ের দৌর্বল্য লক্ষ্য করিয়া পরিহাস করিতেন, কখনও শিশুদিগকে বা শিশুকল্প প্রতিবেশীদিগকে সাধুতা, প্রভৃপরায়ণতা, পিতৃভক্তি প্ৰভৃতি সহজ ধৰ্ম্মগুলি শিক্ষা দিতেন । ক্ৰমে সমাজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কথাগুলিরও উন্নতি হইল ; পশুপক্ষীর পর ভূত, প্ৰেত, মনুষ্য প্রভৃতি কল্পিত ও প্ৰকৃত প্ৰাণী এবং জিহবা, উদার, মৃন্ময়পাত্র, কাংসা পাত্র প্রভৃতি নিজীব পদার্থও কুশীলবরূপে দেখা দিল, সাধুতা, সত্যবাদিতা, ত্যাগ, দান, একতার গুণ, অসমীক্ষ্যকারিতার দোষ প্ৰভৃতি অনেক জটিল ধৰ্ম্ম তাহদের উপদেশের বিষয়ীভূত হইল। যে কথা অল্পে অধিকভােব কথার উৎপত্তি।