পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেওয়া হয়। কোন সংস্কৃত পুস্তক আসল সংস্কৃত অক্ষরে পড়তে গেলেই তাঁদের আটকে যায়। দেবনাগরী অক্ষর পড়তেই পারেন না, ত লিখতে পারা ত আরো দুঃসাধ্য। আমি পড়তে পারতুম—কিন্তু লেখা আমারও অভ্যেস হল অনেক বিলম্বে মহাত্মা গান্ধীর তত্ত্বাবধানে। তিনি এ বিষয়ে রীতিমত taskrmaster হলেন আমার—চরখা কাটার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে প্রতিদিন খানিকটা সময় যাপন করতে হত।

 তৃতীয় ত্রুটি—বিকৃত উচ্চারণের। বাঙলার টোলের পণ্ডিতদের কেউ কেউ সংস্কৃতে অনর্গল ব্যাকরণশুদ্ধ কথা কইতে পারেন দেখেছি। কিন্তু কি কর্ণ-পীড়ক অবিশুদ্ধ উচ্চারণ! অ-আর ভেদ নেই, লম্বা টান ছোট টানের ভেদ নেই, হ্রস্বদীর্ঘর ভেদ নেই, ই-ঈর ভেদ নেই, বর্গীয় ‘ব’ ও অন্তঃস্ত ‘ব’য়ের ভেদ নেই, শ ও স-এর ভেদ নেই, ন ও ণ-য়ের ভেদ নেই। ‘ভেদরিপুনাশিনী মম বণী’ বলা যেতে পারে বাঙালীর কণ্ঠনিঃসৃত সংস্কৃতকে। কিন্তু এটা স্থল নয় অভেদবুদ্ধি চর্চার। তাতে শুধু সারা ভারতবর্ষের কাছে হাস্যাস্পদ হতে হয়। মনে পড়ে আমি ছাড়া একমাত্র হেম—শিবনাথ শাস্ত্রীর কন্যা—ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে পঞ্জাবে ও পশ্চিমে যাওয়া উপলক্ষে ওদেশী মেয়েদের সংস্রবে আসায়—ক্লাসে বিশুদ্ধ উচ্চারণে সংস্কৃত পড়ার বিষয়ে অবহিত ছিল। বেথুন স্কুলে, ব্রাহ্ম গার্লস স্কুলে ও সঙ্গীত সম্মিলনী প্রভৃতি নানা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষরা যখনই মেয়েদের বেদগানে প্রস্তুত করার ভার আমার উপর দিয়েছেন—তখনই এই চিরাভ্যস্ত বিকৃত উচ্চারণের সংকীর্ণ বাঙালীপথ থেকে বিশুদ্ধ উচ্চারণের ভারতীয় রাজপথে আনতে অনেকটা কষ্ট পেতে হয়েছে। ভারত স্ত্রী-শিক্ষা-সদনে আমি এ বিষয়ে সংস্কৃত অধ্যাপককে পুনঃ পুনঃ সতর্ক করে দিয়েছি।

 স্টেট থেকে আমি যে বাড়ি পেয়েছিলুম থাকার জন্যে, ভারী সুন্দর, ছোটখাট, দোতালা। নীচে ড্রইং রুম ও খাবার ঘর, উপরে দুটি শোবার ঘর—যার একটি ড্রেসিংরুমে পরিণত হয়েছে, স্নানের ঘর ও বারান্দা। সব ঘরগুলিতেই সুন্দর ওয়াল-পেপার লাগান। কাছেই ব্রাহ্মণদের ‘অগ্রহার’—অর্থাৎ রাজ সরকারের দান, নিষ্কর ব্রাহ্মণ-পল্লী। মহীশূরের ক্ষত্রিয় রাজবংশের অধিকাংশ প্রজাই হয় শিবোপাসক ব্রাহ্মণ বা লিঙ্গায়ৎ এবং জৈনী। দুই শ্রেণীর মেয়েদের শাড়ি পরার ধরনে ও কপালে তিলকচর্চায় পার্থক্য আছে—দেখলেই চেনা যায় কে কোন্‌ ঘরের মেয়ে। ইস্কুল দুবার করে বসে—একবার সকালে, একবার বিকেলে। অধিকাংশই

১১২