পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
ঝাঁশির বাণী।

তেন। তাহার পর মাটির শিব পূজা আরম্ভ হইত। সেই সময়ে সরকারী গায়ক গান করিত। ইহার পর, সর্দার ও আশ্রিত লোকের দরবার বসিত। যদি কোন দিবস, কোন ব্যক্তিবিশেষ না আসিত অমনি পরদিবস তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতেন “কাল আপনি কেন আসেন নাই?” এইরূপে পূজার্চনা সমাপন করিয়া ভোজন করিতেন ও ভোজনান্তে একটু নিদ্রা যাইতেন কিম্বা অপর কোন কার্যে নিযুক্ত হইতেন।

 প্রাতঃকালে যে নজরের টাকা জমা হইত তাহা রূপার থালায় রেশমি ৰস্ত্রে আচ্ছাদিত থাকিত। সেই টাকা হইতে ইচ্ছামত স্বয়ং কিছু গ্রহণ করিয়া, বাকী টাকা আশ্রিত-মণ্ডলীর জন্য কোষাধ্যক্ষের জিম্ম করিয়া দিতেন। তদনন্তর, প্রায় তিন ঘটিকার সময়ে কাছারী যাইতেন। সেই সময় প্রায়ই পুরুষ-বেশ ধারণ করিতেন। পায়ে পায়জামা, অঙ্গে বেগুণী রঙ্গের অঙ্গখা, মাথায় টুপী, তাহার উপর পাঠানী পাগড়ি, কোমরে জরির দোপাটা ও তাহাতে রত্নখচিত তলোয়ার ঝোলানো; এইরূপ বেশভূষায় সেই গৌরবর্ণ মুর্তি গৌরীর ন্যায় উপলব্ধি হইত। কখন কখন স্ত্রীলোকের উপযুক্ত বেশভূষা ধারণ করিতেন। পতিবিয়োগের পর নথ প্রভৃতি অলস্কার আদৌ ধারণ করিতেন না। হাতে হীরার বালা, গলায় মুক্তার মালা এবং অনামিকায় এক হীরার আংটি—ইহা ব্যতীত তাহার অঙ্গে আর কোন অলঙ্কার দেখা যাইত না। কেশ, প্রায় গ্রন্থি দিয়া বাঁধিয়া রাখিতেন। তিনি শাদা শাড়ি ও শাদা চেলি পরিতেন। এইরূপ কখন পুরুষবেশে ও কখন স্ত্রীবেশে রাণীঠাকুরাণী দরবারে আসিতেন। তাহার বসিবার ঘর, দরবার-ঘরের সংলগ্ন ছিল। সেই ঘরের দ্বারে সোণালী “মেহেরাপ”, তাহার উপর জরির লতা-পাতা-কাটা চিকের পর্দা খাটানো হইত। সেই ঘরের ভিতরে গদির উপর তাকিয়া ঠেসান দিয়া বসিতেন। দ্বারের বাহিরে, দুই জন ভল্লধারী রূপা ও সোণার আসামোটা লইয়া হাজির থাকিত। সম্মুখে, রাজশ্রী লক্ষ্মণরাও দেওয়ানজী, কোমর বাঁধিয়া