পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী।
৪৭

কাপড় পরিতে তিনি ভাল বাসেন। তিনি সর্বদা পা-পর্যন্ত লম্বা একটা জোব্বা পরেন ও কাধের উপর একটা কাশ্মিরী শাল ফেলিয়া রাখেন। তাহার সহিত বারো মাস, প্রায় ২৫/৩০জন লোক প্রহরী থাকে। ইহাদের সাহায্যে, যুদ্ধের মধ্যে তিনি আপনাকে কোন প্রকারে উদ্ধার করেন। “নানা সাহেবের প্রতিনিধি” এই উপাধিটা তিনি গ্রহণ করিয়াছেন।”

 শ্রীমন্ত বাজীরাও সাহেব পেশোয়াকে যে পেশন দেওয়া হইত, সেই পেনশনের টাকা তাহার মৃত্যুর পর, ইংরাজেরা বন্ধ করিয়া দেওয়া, তাহার উত্তরাধিকারী, প্রসিদ্ধ নানা সাহেব সিপাহীবিদ্রোহে যোগ দেন; এবং তাহার তরফে তাঁহার স্বামিনিষ্ঠ সেবক তাত্যা-টোপে ইংরাজদিগকে আক্রমণ করিয়া, স্বীয় প্রভুর আধিপত্য স্থাপনে সচেষ্ট হয়েন। এই ত্যাটোপের পরাক্রমে, বিদ্রোহীদল প্রবল হইয়া কিছুকালের জন্য যেন অজেয় হইয়া উঠিয়াছিল। কেবল তাত্যার ষড়যন্ত্রবলেই, সিন্ধিয়া-সরকারের কণ্টিণ্টে-ফৌজ বিদ্রোহীদলভুক্ত হয় এবং তাহারই যুদ্ধকৌশলে কানপুরের নিকটস্থ যুদ্ধক্ষেত্রে জেনেরাল উইচ্যামের অধীনস্থ ইংরাজ- সৈন্য পরাভূত হয়। “এম্পায়ার ইন্ ইণ্ডিয়া” এই গ্রন্থের লেখক বলেন—“যদি আরও কিছু সাহস প্রকাশ করিতেন এবং কেবল অভাব- পক্ষের রণকৌশল না দেখাইয়া, কতকগুলি ভাবপক্ষের রণকীর্ত্তি দেখাইতে পারিতেন, তাহা হইলে তিনি শীঘ্রই “হিন্দু গ্যারিবডি” নামে খ্যাত। হইতেন সন্দেহ নাই”।

 যাহা হউক, তাত্যা-টোপে; কাল্পী হইতে বিপুল সৈন্য-সমভিব্যাহারে। ঝাঁশির সাহায্যে আসিয়াছেন দেখিয়া, কেল্লার লোকেরা আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল; তাহার স্বগত সম্ভাষণার্থ তাহারা মুহুর্মুহু তোপের সেলামি দিতে লাগিল এবং তাহার জয়ঘোষণায় রণবাদ্য আরম্ভ করিয়া দিল। সেই বাদ্যরবে গগনমণ্ডল বিকম্পিত হইল এবং সকলের হৃদয় আশা ও উৎসাহে পূর্ণ হইল। এই উৎসাহের দৃশ্য, রাণীঠাকুরাণী ও তাঁহার