পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
ঝাঁশির রাণী।

সহরের মধ্যে যুদ্ধ করিবার কোন অর্থ নাই। তদপেক্ষা, কেল্লার ভিতরে গিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিয়া ঈশ্বর যাহা যুক্তি দেন তাহাই আমাদের করা ভাল। ফিরিয়া যাইবার ইহাই সময়।” এই কথা বলিয়া, তাহারা রাণী ঠাকুরাণীর হাত ধরিয়া ফিরাইয়া দিল। তখন তিনি সৈন্য সমভিব্যাহারে আবার কেল্লার আশ্রয় গ্রহণ করিলেন।

 এদিকে গোরা-সৈন্য চারিদিকের দরজা দিয়া সহরের মধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিল; পাঁচ বৎসর বয়স্ক হইতে ৮০ বৎসর বয়স্ক পর্যন্ত পুরুষ দেখিবামাত্র তাহারা গুলি কিম্বা তলবারের দ্বারা নিহত করিতে লাগিল; সহরের একদিকে আগুন লাগাইয়া দিল। সেই সময় সহরের মধ্যে যেরূপ হাহাকার উঠিয়াছিল তাহা অবর্ণনীয়। মেষপালের মধ্যে ব্যাঘ্র আসিয়া পড়িলে যেরূপ দশা হয়, লোকেরা প্রাণভয়ে আকুল হইয়া সেই রূপ পলাইতে লাগিল। কেহ বা গলির মধ্যে প্রবেশ করে, কেহ বা গৃহের বিকট স্থানে গিয়া লুকায়, কেহ বা দাড়ি গোঁপ কামাইয়া স্ত্রীবেশ ধারণ করে, এই প্রকার যে যেরূপ পরিল, প্রাণ বাঁচাইবার উপায় চেষ্টা করিতে লাগিল। গোরারা সহরে প্রবেশ করিয়া সহর একবারে বিজন করিয়া তুলিল; সহরের মধ্যভাগে “ভিড়ার বাগ” নামক একটা উদ্যান ছিল, তাহার মধ্যে সহস্র সহস্র লোক আশ্রয় লইয়াছিল। সেখানেও যখন গোরারা প্রবেশ করিল, তখন সেই সকল লোক অতি দীনভাবে ভূমির উপর সাষ্টাঙ্গ হইয়া করুণস্বরে বলিতে লাগিল “আমি নিরপরাধী কৃষক; আমি যুদ্ধের মধ্যে নাই—দয়া করিয়া আমার প্রাণদান করুন।” তাহাদিগের এইরূপ করুণবাক্য শুনিয়া ইংরাজ সেনানায়কের দয়া হইল; তিনি সেই প্রণত লোকদিগকে অভয়-বচন দিয়া, উদ্যানের চারিদিকে পাহারা বসাইয়া দরজায় তালা লাগাইয়া দিলেন। এবং এইরূপ হুকুম প্রচার করিলেন যে, বাহিরের লোককে ভিতরে আসিতে এবং ভিতরের লোককে বাহিরে যাইতে কদাচ দেওয়া না হয়।