পাতা:দুই বোন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুই বোন
৭৯

পাতাগুলাে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে আসে। এক-একসময় অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে, মনে মনে ভাবে, এ মানুষটা চিঠির মতো চিঠি লিখতে পারে না কেন।

 ঊর্মি অনেক কাল কনভেণ্টে পড়েছে। আর কিছু হােক ইংরেজিতে ওর বিদ্যে পাকা। সে-কথা নীরদের জানা ছিল। সেইজন্যেই ইংরেজি লিখে নীরদ ওকে অভিভূত করবে এই ছিল তার পণ। বাংলায় চিঠি লিখলে বিপদ বাঁচত কিন্তু নিজের সম্বন্ধে বেচারা জানে না যে, সে ইংরেজি জানে না। ভারি ভারি শব্দ জুটিয়ে এনে, পুঁথিগত দীর্ঘপ্রস্থ বচন যােজনা ক’রে ওর বাক্যগুলােকে করে তুলত বস্তাবােঝাই গােরুর গাড়ির মতাে। ঊর্মির হাসি আসত, কিন্তু হাসতে সে লজ্জা পেত, নিজেকে তিরস্কার ক’রে বলত বাঙালীর ইংরেজিতে ত্রুটি হলে তা নিয়ে দোষ ধরা স্নবিশ্।

 দেশে থাকতে মােকাবিলায় যখন নীরদ ক্ষণে ক্ষণে সদুপদেশ দিয়েছে তখন ওর রকম-সকমে সেগুলাে গভীর হয়ে উঠেছে গৌরবে। যতটা কানে শােনা যেত তার চেয়ে আন্দাজে তার ওজন হােত বেশি।

 লম্বা চিঠিতে আন্দাজের জায়গা থাকে না।