পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

সেই বাস্কটী খুলিবামাত্রই, সে ভয়ে শিহরিয়া উঠিল। সবিস্ময়ে দেখিল, যে সেই সমুজ্জল হীরক গাত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শোণিত বিন্দু!

 আর সেই সুশাণিত ইস্পাহানী ছুরিকাখানি, তখনও রক্তমাথা। সে রক্তের দাগ মুছিবার যেন কোন উপায় নাই।

 চিত্তের এই বিপ্লবময় অবস্থার প্রতিকারের জন্য, সে প্রচুর পরিমাণে সেরাজী পান করিল। খুব একটা ভীষণ যন্ত্রণায় অধীরা হইয়া, সে অস্ফুটস্বরে কাতরভাবে বলিয়া উঠিল— “হায়! করিলাম কি?”

 তার পর—দন্তে দন্তে নিষ্পেষিত করিয়া—সেই শোণিতাক্ত ছুরিকাখানি হাতে লইয়া বলিল— “বেশ করিয়াছি! ভালই করিয়াছি! ইরাণীর উষ্ণ রক্ত, অপমানের তাপে ফুটিয়া উঠিলে, তাহাতে এমন একটা কেন—দশটা নরহত্যা করিতেও আমি কুণ্ঠিত| হই না। এত অপমান! এত লাঞ্ছনা! এত প্রতারণা! এতটা নেমকহারামী!”

 সহসা সে দেয়ালের গায়ে যেন কাহারও ছায়া মূর্ত্তি দেখিল। সে মূর্ত্তি দেখিয়া সে ভয় পাইয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। মদিরার উত্তেজনা, আর নরহত্যার একটা ভীষণ স্মৃতি, তাহার মস্তিষ্কটাকে খুবই গরম করিয়া তুলিয়াছে। সে সভয়ে সবিস্ময়ে, চীৎকার করিয়া বলিল,—“কে—কে তুমি? নবাব সুজা খাঁ? তোমার হস্তে শাণিত ছুরিকা কেন? তুমি কি আমাকে হত্যা করিতে আসিয়াছ?”

 দেওয়ালের নিকটস্থ সেই ছায়ামূর্ত্তি, যেন তাহার সম্মুখে

১৮৪