পাতা:পরাধীন প্রেম - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাসের নায়িকা ষোমন লাখাপতি, কেরাণী, মঞ্জর বা চাষীর মেয়ে হয়েও উপন্যাসে হয়ে থাকে। পথিবীর সবচেয়ে গারস্বত্বপণ নারী-নিজেকে তেমনি মনে হয় । সে স্টার্ট পেয়েছে আড়াইশো টাকার চাকরিতে । তাদের বংশের কেউ কখনো আড়াইশো টাকার বেশি মাইনেব চাকরি করেনি- তাদের বংশের পরিষেরা। এমন একজনও আত্মীয় নেই উমার যে দশোর ওপরে বেতন পায় { তাদের বংশে তার আগে অবশ্য কোন মেয়ে চাকরি করেনি । সে-ই প্রথম { বংশের সব পরিষকে টেক্কা দিয়ে সে বেশী মাইনের চাকরি বাগিয়েছি । অজিতের জন্যই অবশ্য সম্ভব হয়েছে এটা । কিন্ত, তার মত মেয়ে না পেলে চন্দ্রনাথ কি এ কাজটা তাকে দিতে পারত ? প্রভাবওয়ালা মানষের চেস্টাতেই চিরকাল চাকরি হয়ে এসেছে। মানষের পরুিষ এবং নারী দায়েরই ! এটা নতন ঘ্যাপার কিছুই নয় ; ডিগ্রি ইত্যাদির মত অজিত চন্দ্রনাথেরাও চাকরির একটি অনিবাযি আনষঙ্গিক মাত্ৰ ! সকলের বেলাতেই এই নিয়ম । অজিতের মত কেউ ধরলে এবং চন্দ্রনাথের মত একজন জটিয়ে দিলে তলেই মানষের চাকরি জোটে । অনিল চলে যাবার পরেও চন্দ্রনাথ গম্ভীর মাখে। খনিকক্ষণ বসে । প্রৌঢ় বয়সেই বড়ো না দেখাবার জন্য চন্দ্রনাথ অতি সম্প্রতি ধতি চাদর ছেড়ে স্বদেশী-মাক! স্যাট ধরেছে । বেশ-ভযায় বাড়াবাড়ি বা চাকচিক্যের ছেলেমানষি চন্দ্রনাথের ধাতে নেই। বেশ-ভাষার সহজ। সাধারণ মািল নিয়মটাই সে মেনে চলে । ধতি পরলে বিধবাদের বয়স কম দেখায়। কিন্তু তাকে শােধ বড়ো নয়, একেবায়ে গেয়ো দেখায় । সে যা নয়। তাই দেখায় । এ অবস্থায় বেশ পরিবর্তন না করা শঢ়িাই ছাড়া কিছুই নয় । ধতি-পরা ছেলেকে ফুলপ্যাস্ট অগ্নি শাটো হঠাৎ বড় দেখায়, বড়ো মনিষকে সাহেবী বেশে দেখায় যেন এখনো তার যৌবন একেবারে যায়নি । মস্ত গাড়ী । দরজায় দাঁড়িয়ে আছে । পাড়ার লোকে চেয়ে দেখছে ! মোটা বেতনের ড্রাইভার লোকেশ গাড়ী চালায় । বাজে আর অকমণ্য হলেও বাঙালী ড্রাইভার রেখেছে বলে চন্দ্রনাথ সমতল্যদের বলতে ছাড়ে না যে, তোমরা কথায় আমি কাজে । যদিও লোকেশকে সে বাঙালী বলে রাখেনি। --রেখেছে। সম্পণ অন্য কারণে । কিন্ত, সেটা জেনেও সে জানে না, মেনেও সে মানে না । বাঙ্গালীর সঙ্গে ভারতীয়দের নানারকম নাকি বিরোধ আছে -এই সাময়িক লৌকিক এবং কাল্পনিক কুসংস্কারের সঙ্গে সে যেন রীতিমত লড়াই করছে।--লোকেশকে ড্রাইভার রাখার এই কারণটাই সে ঘোষণা করে । অজিত প্রায় তিন মাস পরে হঠাৎ একদিন আসে । অফিস ছটি হবার ঘণ্টাখানেক আগে । চন্দ্রনাথের কামরায় মিনিট দশেক কাটিয়ে এসে উমার টেবিলের সামনে দাঁড়ায় । একটু কাতর মাখে-উৎসক মদখে ! কে জানো ছলনা। কিনা ! পরাধীন-৩