পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 পূর্ববঙ্গ গীতিকা শ্যামগায়ন ঋষি কোন অনাৰ্য্য। রমণীর পাণিপীড়ন করার ফলে পালিকাপ্য জগতে অবতীর্ণ হইয়া হস্তিজাতির চিকিৎসার জন্য আয়ুৰ্বেদ লিখিয়া গিয়াছেন। শাস্ত্রী মহাশয় বলেন যে, এই পুস্তকখানি সংস্কৃতে রচিত হইলেও সেই সংস্কৃতের ছন্দ এবং শব্দসমূহে অনাৰ্য-ভাষার অনেক নিদর্শন রহিয়া গিয়াছে। আমাদের সংগৃহীত হাতী-খেদার গানগুলিতেও “ধুঞ্চি” এবং “মংলা” নামক দুইজন অনাৰ্য্য শিকারীর উল্লেখ দেখিতে পাই । ইহারা খুব সম্ভব পালক্যাপ্যের মাতৃকুলসস্তুত। এই আৰ্যরক্ত-লাঞ্ছিত অনাৰ্য্যগণই আৰ্য্যপিতৃকুলের সভ্যতা আংশিকভাবে আয়ত্ত করিয়া বহুযুগ যাবৎ ভীষণ আরণ্যক জন্তুসমূহ বশীভূত করিবার কৌশল দেখাইয়া আসিতেছে। ইহারাই খেদা-নিৰ্ম্মাণের। প্ৰবৰ্ত্তক । বৰ্ত্তমান কালে কাপ্তেন কল্ডওয়েল এবং তঁহার সহকৰ্ম্মীরা পূর্ব-ভারতীয় শিকারীদের বহু প্রশংসা করিয়াছেন । ইহার কয়েকজন ভারতীয় শিকাবীকে খেদা-নিৰ্ম্মাণ শিক্ষা দিবার জন্য আফ্রিকায় লইয়া গিয়াছিলেন। ১৯২৭ খৃষ্টাব্দের ৮ই মে তারিখের ষ্টেটসম্যান পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি কৌতুহলপ্ৰদ প্ৰবন্ধ প্ৰকাশিত হইয়াছে। তাহাতে জানা গিয়াছে যে, কাপ্তেন কল্ডওয়েল সদলবলে খেদার কৌশল সম্যক রূপে শিখিবার জন্য ভারতবর্ষে আসিতেছেন । ইহা আমাদের বিশেষ গৌরবের বিষয় যে, শতসহস্ৰ বৎসর পূর্বে ভারতবর্ষ যে বিদ্যায় কৃতিত্ব লাভ করিয়াছিল, বৰ্ত্তমান বৈজ্ঞানিক যুগেও সেই গৌরব অক্ষুন্ন থাকিয়া যুরোপের কৃতীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে এবং খেদার শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিতভাবে স্বীকৃত হইয়াছে । দুঃখের বিষয় বাঙ্গালার এই গৌরবসম্বন্ধে বাঙ্গালীরা কিছুমাত্র অবহিত নহেন। এই ভাবেই আমরা ইংরেজগণের নিকট পপোকাটিপ্যাটেল এবং কামস্কাটুকা কোথায় তাহা মানচিত্রে দেখাইতে শিখিয়া বৃথা পাণ্ডিত্যের অভিমানী হইয়াছি, অথচ নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ বয়নবিদ্যা, স্বর্ণরৌপ্যের শিল্প এবং অপরাপর বিদ্যা ভুলিয়া বসিয়াছি। আমরা কৃষককবির নিকট হইতে হাতী-খেদার যে বিস্তৃত বিবরণ পাইতেছি তাহা নিরক্ষার চাষার বিদ্যা বলিয়া যেন অবহেলা না করি। তবে এইটুকু ভরসার বিষয় যে, কল্ডওয়েল সাহেব ইহার সুখ্যাতি করিয়াছেন, সুতরাং এখন আমরা খুব জোরের সহিত তালি দিয়া দোহার-গিরি করিতে পারিব ।