পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা Gł XX ঐতিহাসিকতত্ত্ব থাকিতে পারে যে তাঁদেশীয় প্রজারা ভগদত্তের ভ্ৰাত৷ রামচন্দ্রের প্রতি কতকটা দুর্ব্যবহার কী রয়াছিল। তার সমস্ত কথাই লোককল্পনাসৃষ্ট অবান্তর বাহিনী । এই গানে কথিত হইয়াছে যে রাজমাতা এক ভাড়া চরকার यूड डालडाक দিয়া বলিয়াছিলেন তুমি আমার প্রীতির জন্য এমন একটি পুষ্করিণী খনন করিয়া দাও, যাহা এই সূতার পরিমাণানুযায়ী হইবে । একথাও লিখিত হইয়াছে যে এই নলি সূতা খুলিতে চারদ ৪ বেলা হইয়াছিল । সুতরাং সূত্রটি যে অতি দীর্ঘ ছিল তৎসম্বন্ধে সন্দেহ নাই । রাজা মাতার নিকট প্ৰতিশ্রুতি দান করার পর মন্ত্রীরা তঁহাকে বলিয়াছিল এরূপ বৃহৎ দীঘিকা খনন করিতে যে অর্থের দরকার তাহ রাজকোষে নাই । কিন্তু রাজা উত্তরে বলিলেনইহা মাতৃ আজ্ঞা, আমার রাজত্বের মূলা এক কড়া । মাতৃ আজ্ঞার ন্যায় জগতে আমি কিছু মূলাবান মনে করি না । ভারতের দ্বাদশাতীর্থে স্বয়ং যাইয়া তিনি নিজে তীর্থসলিল-সংগ্ৰহ করিবেন, ইহাই তাহার সঙ্কল্প চাইল । যেহেতু অপর কেহ যদি তার্থোদক সম্বন্ধে তাহাকে ফাঁকি দেয়, তাহা হইলে ধরিবার উপায় থাকিবে না। কনিষ্ঠ ভ্ৰাতা রামচন্দ্রের উপর রাজ্যভার দিয়া এই উদ্দেশ্যে তিনি প্ৰবাসী হইলেন । রামচন্দ্র সাশ্রনেত্ৰে বলিলেন, দাদা, তুমি বনে জঙ্গলে অনাহারে অনিদ্রায় ঘুরিয়া বেড়াইবে আর আমি স্বর্ণসিংহাসনে বসিয়া রাজত্ব করিব, এ কখনই হইতে পারে না । তথাপি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার নানারূপ প্ৰবোধ- বাক্যে র্তাহাকে অবশেষে স্বীকৃত হইতে হইল । রামচন্দ্ৰ প্ৰকৃতই অযোধার রামচন্দ্রের ন্যায় প্রজ। দিগকে শাসন করিতে লাগিলেন । ধানের বদলে তিনি তৃষা লইয়া রাজকর গ্রহণ করিতেন। কোন প্ৰজাকে রাজসভায় ডাকিতে হইলে পাছে পথশ্ৰম হয় এই আশঙ্কায় তিনি তাহাদিগের জন্য হাতা পঠাইয়া দিতেন । গরীব দুঃখীদের তিনি মা-বাপ হইলেন । কিন্তু ইহা সত্ত্বেও যখন রাজা ভগদত্ত ফিরিয়া আসিলেন, তখন প্ৰজারা তাহার নিকট রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা কথা বলিল । মৰ্ম্মাহত হইয়া রামচন্দ্ৰ নীরবে অশ্রু ত্যাগ করিতে করিতে প্ৰজাদিগকে এই অভিশাপ দিলেন যে, তাহারা কখনই সুখী হইবে না এবং এই বৃহৎ সাম্রাজ্যটি জঙ্গলে পরিণত হইবে। এই স্বল্পায়তন