পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૨8 উকীল ব্যারিষ্টার পায় না। ইহা সত্য হইলে, পঞ্জাবের এক শ্রেণীর শিক্ষিত লোকদের এরূপ মানসিক দৌৰ্ব্বল্য দুঃখের বিষয় । কারণ যাহাই হউক, নগদ টাকা বেশী বেশী দান করার যত দৃষ্টান্ত পঞ্জাবে দেখা যায়, বাংলায় তাহা দেখা যায় না। বঙ্গের প্রসিদ্ধ জমিদার ও ধনীদের মধ্যে ২৪ জন যেরূপ দান করিয়াছেন, পঞ্জাবে অবিখ্যাত এবং বিশেষ ধনী নহেন, এরূপ অনেক লোক সেরূপ ও তার চেয়ে বেশী দান করিয়াছেন। তথাকার সকল শ্রেণীর শ্রদ্ধাভাজন ফম্যান্‌ কলেজের অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাস গুপ্ত বলিলেন, *এখানকার এক এক কলেজের ছাত্রেরা পর্যন্ত সৎকাজের জন্য স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া ৪,৫৭৮ শত টাকা অনায়াসে তুলিয়া ফেলে।” লাল সুন্দরদাস স্বরী বলিলেন, “এখানে সৎকাজের জন্ত টাকা অপেক্ষাকৃত অল্প আয়াসেই পাওয়া যায়” । দানবীর স্বৰ্গীয় লালা স্তার গঙ্গারামের কয়েকটি কীৰ্ত্তি দেখিলাম। সমুদয় প্রতিষ্ঠানেরই বাড়ীঘর জমী নিজের । একটি বিধবাদের আশ্রম। সুন্দর ছুতলা বাড়ী, সংলগ্ন বাগান আছে। এখানে আশীটি হিন্দু বিধবা বাস করে এবং সাধারণ লেখাপড়া ও কোন কোন পণ্য শিল্প শিখে। ইহার সহিত বিধবাদের বিবাহ দিবার চেষ্টার কোন সম্বন্ধ নাই। সমস্ত আশ্রমটি খুব পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখা হইয়াছে। যে কামরাগুলিতে বিধবারা থাকে, সেগুলিতে বৈদ্যুতিক আলো ও পাখা আছে। লাল গঙ্গারামের ইচ্ছা অনুসারে এই ব্যবস্থা হইয়াছে। র্তাহার মনের ভাব এই ছিল, যে, বিধবারা যেন মনে না করে, যে, তাহার কাহারও তাচ্ছিল্যমিশ্রিত অনুগ্রহে গ্রাসাচ্ছাদন পাইতেছে। তাহার নিজের কস্তাদের সমান আরামে তাহাদিগকে রাখিবার ইচ্ছা প্রযুক্ত এইরূপ বন্দোবস্ত হইয়াছে। বিধবাশ্রমটির কোথাও তাহার নাম নাই। র্তাহার বন্ধুরা বলিয়াছিলেন, আপনার না হউক অস্তুত আপনার জননীর নামে এই আশ্রমটির নাম রাখুন। তিনি তাহাতেও সম্মত হন নাই। কেবল ইংরেজীতে মৰ্ম্মরIFFTF CNR (TTTE, "Given by one who felt for the widow”, “বিধবার জনৈক ব্যথার ব্যর্থীর প্রদত্ত।” প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৫ [ ২৮শ ভাগ, ১ম খণ্ড আশীটি বিধবা ছাত্রীর প্রত্যেকে বার টাকা করিয়া সরকারী বৃত্তি পায়। দেউলিয়া বাংলা গবন্মেন্টের এরূপ সদিচ্ছার কোন প্রমাণ নাই ; সদিচ্ছা থাকিলেও মেস্টন্‌ য়্যাওয়ার্ড নামক বঙ্গলুণ্ঠন-ব্যবস্থা সেরূপ ইচ্ছা পূর্ণ করিতে দিবে না। লালা গঙ্গারামের প্রতিষ্ঠিত আর-একটি প্রতিষ্ঠানে কুমারী, সধবা, বিধবা সব রকমের নানা বয়সের অনেক মেয়ে নানাবিধ পণ্যশিল্প শিখে। তাহা খুব একটা সংকীর্ণ অপরিস্কার গলিতে স্থিত; কিন্তু বাড়ীটি তিতরে খুব পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন। উভয় স্থানেই প্রধান শিক্ষয়িত্রীরা মেয়েদের হাতের নানারকম সুন্দর কাজ দেখাইলেন। আর-একটি প্রতিষ্ঠানের নাম অপহজ আশ্রম । ইহা পুরাতন রাবী নদীর পরপারে সহরের বাহিরে প্রশস্ত বাগানের মধ্যে স্থিত। এখানে অধিক বয়স বা রোগে অসমর্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আলাদা আলাদা বিভাগে বাস করে,স্বাভাবিক কারণে অসমর্থ শিশুদেরও রাখা হয়। ঘরবাড়ী সব পাকা, আলোবাতাসের সুন্দর ব্যবস্থা আছে। বৈদ্যুতিক আলো ও পাথার বন্দোবস্ত হইয়া আছে, বৈদ্যুতিক শক্তি যোগাইবার কারখানার সহিত যোগ হইলেই আলো হইবে ও পাখা চলিবে । সাদাসিধা অথচ বেশ পুষ্টিকর খাদ্য এই অপহজ আশ্রমের লোকদিগকে দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ তাহা আমাকে দেখাইলেন। অধ্যক্ষের জন্ত স্বতন্ত্র বাড়ী ইহার হাতার মধ্যেই আছে। শ্ৰীযুক্ত লাজপৎ রায় সহনী স্তার গঙ্গারামের প্রতিষ্ঠানগুলি আমাকে দেখাইলেন। বাড়ীতে যেমন, তেমনি লাহোরেও প্রায় দুপর একটার সময় খাইতাম । স্বানআচারের পূৰ্ব্বে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান দেখিতে যাই ; এইজন্য সব জায়গাতেই তাড়াতাড়ি করিতেছিলাম। ভারতীয় আতিথেয়তার প্রমাণ তিন জায়গাতেই পাইলাম। আমার স্নানাহার হয় নাই, সহনী মহাশয়ের মুখে শুনিয়া প্রথম দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষয়িত্রীদ্বয় এবং অপহজ আশ্রমের অধ্যক্ষ, প্রত্যেকেই আমাকে স্বানাহার করিতে অনুরোধ করিলেন । পঞ্জাবে পুরুব ও নারী উভয়ের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার বাংলার চেয়ে দ্রুততরবেগে হইতেছে । লাহোরে যাহা দেখিলাম এবং পঞ্জাবের অন্ত সব জায়গার বিষয় যেরূপ পড়ি, তাহাতে পঞ্জাবকে বাংলাদেশের