পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] হইল ; তারপর জেনারেল এবং তাহার অধীনস্থ কৰ্ম্মচারীরা বঙ্গীদের দিকে মনোযোগ দিলেন। যে জুই শত স্প্যানিয়ার্ড ফরাণী সৈনিকদের বধ করিয়াছিল তাহাদের দুর্গের চত্বরে গুলি করিয়া মারা হইল। তাহার পর জেনারেল সেই স্থানেই ফাণীকাঠ তৈয়ারী করিতে আদেশ দিলেন, এবং নগর হইতে জল্লাদকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। ভিক্তর এই অবসরে নৃত্যশালায় গিয়া বন্দ্বীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া আসিল। পরে সে জেনারেলের নিকটে গিয়া বলিল, “আমি আপনার কাছে একটু অনুগ্রহপ্রার্থী হ’য়ে এসেছি।” জেনারেল কণ্ঠস্বরে তীব্র শ্লেষ মিশাইয়া বলিলেন, “তুমি !" ভিক্তর বলিল “হায়, বড় বেশী অনুগ্রহ কিছু চাইবার আমার নেই । মারকুইস ফাণীকাঠ তৈরি হতে দেখেছেন ; তিনি প্রার্থনা করছেন যেন তার পরিবারের জন্ত শিরচ্ছেদের ব্যবস্থা হয়।” - - জেনারেল বলিলেন, “বেশ, তাই হবে।” ভিক্তর বলিল, “তিনি আরো ছটি বিষয়ে অনুগ্রহপ্রার্থী। প্রাণদণ্ড হবার আগে তাদের পুরোহিতকে যেন তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়, এবং তাদের হাত-পায়ের বাধন যেন খুলে দেওয়া হয়। তারা কথা দিচ্ছেন যে, পালাবার কোনোই চেষ্টা করবেন না।” জেনারেল বলিলেন, “আচ্ছ, কিন্তু তুমি তাদের জন্তে দায়ী রইলে ।” “বৃদ্ধ মার্কুইস আপনাকে তার যথাসৰ্ব্বস্ব দিতে রাজী আছেন, যদি আপনি তার ছোট ছেলের প্রাণভিক্ষা দেন।” সৈন্তাধ্যক্ষ বলিলেন, "তাই নাকি ? দুঃখের বিষয় র্তার যথাসৰ্ব্বস্ব ইতিমধ্যেই সরকারে বাজেয়াপ্ত হ’য়ে গেছে।” একটুকু থামিয়া ক্ৰকুঞ্চিত করিয়া তিনি বলিলেন,"আমি তারা যতটা চায় তার বেশী দিতেও রাজী আছি। একটি ছেলে ছেড়ে দিতে কেন বৃদ্ধ অম্বুরোধ করছে তা বুঝতে পেরেছি। বেশ, বংশরক্ষা করতে চায় করুক। কিন্তু যখনি তাদের নাম কোথাও কেউ শুনবে, তাদের বিশ্বাসঘাতকতা আর তার প্রতিশোধ হইই তাদের মনে পড়বে। মাকুইসের ছেলেদের মধ্যে যে জল্পাদের কাজ করতে রাজী হবে, জলাদ &S) তাকেই এদের সমস্ত ভূসম্পত্তি দেব এবং মুক্তিও দেব। যাও, ওদের বিষয় আর কোনো কথা আমি শুনতে छहे न ॥* - সান্ধ্যভোজ প্রস্তুত ছিল । সামরিক কৰ্ম্মচারীরা ক্ষুধার তৃপ্তিসাধন করিতে বসিয় গেল। কেবলমাত্র একজন অনুপস্থিত রহিল, সে ভিক্তর। অনেকক্ষণ ইতস্ততঃ করিয়া সে আবার মৃত্যশালায় গিয়া চুকিল। অত্যন্ত বিষ্ণদৃষ্টিতে সে চারিদিকে তাকাইয়া দেখিতে লাগিল মাত্র একদিন আগে, এই ঘরে, এই মানুষগুলিকে সে আনন্মে নৃত্য করিতে দেখিয়াছে, ইহাঙ্গের হাস্তালাপ শুনিয়াছে। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই এই সুন্দরী তরুণী, গুলি ঐ মুস্থ সবল যুবকগুলি ঘাতকের কুঠারের নীচে প্রাণদান করিবে, মনে করিয়া সে শিহরিয়া উঠিল। ' মার্কুইস ও তাহার পরিবারবর্গ নীরবে বদ্ধ অবস্থায় বসিয়া, তাহদের সম্মুখে তাহাদের আটজন ভৃত্য দাড়াইয়া, তাহাদের ছাত পিছনে বাধা । এই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিগুলি পরস্পরের দিকে বারবার চাহিয়া দেখিতেছিল। দৃষ্টির ভিতর দিয়া তাহাদের মনের ভায বোঝা সহজ ছিল না, তবু ভাগ্যের কাছে আত্মসমপর্ণ এবং নিজেদের . দেশোদ্ধারের চেষ্টা বিফল হওয়ার দুঃখ অনেকের মুখের ভাবেই স্পষ্ট অঙ্কিত হইয়াছিল। যে সৈন্তগুলি তাহাদের পাহারা দিতেছিল, তাহারাও নিজেদের এই পরম শত্রুবর্গের গভীর দুঃখের সন্মান রক্ষা করিয়া চুপ করিয়াছিল। ভিক্তর ঘরে ঢুকিবা-মাত্র সকলের মুখেই একটু কৌতুহলের ভাব দেখা গেল। সে আসিয়াই আদেশ করিল যে, বঙ্গীদের বন্ধন খুলিয়া দেওয়া হোক, এবং নিজের হাতেই ক্লারার বন্ধন মোচন করিয়া দিল । মেয়েটি তাহার দিকে চাহিয়া বিষাদমাখা হাসি হাসিল । ভিক্তর একবার তাহার মুনার হাতখানি স্পর্শ করিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিল না। কী মুনারী মেয়েটি । তাহার চুল ও চোখ গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ, গঠন অতি অপূৰ্ব্ব। ক্লারা জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি কি কৃতকাৰ্য্য झाब्राझन ?” ভিক্তরের মুখ হইতে একটা অফুট কাতরোক্তি বাহির হইয়া পড়িল। সে একবার ক্লারার দিকে তাকাইয়।