পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] চাপা আগুন ፃፃom নিজে নিজে যে সমাধান করিতেছে তাঁহাই কঠিন আলিঙ্গনে হৃদয়কে নিষ্পেষিত করিয়া দিতেছে। কি বলিয়াছিল নীতি ? নিজেকে ঠকিও না, ওতে কোনো লাভ নাই। দুজনে মিলে আমরা দেশের কাজ করব । বর্ষণক্ষান্ত শ্রাবণ-সন্ধ্যায় অস্তরের সুমহান সত্যের দাবীতে নারীত্বের স্থগভীর লজ্জাকে জয় করিয়া ধীর স্থির শাম্ভকণ্ঠে এই কথা নীতি বলিয়াছিল । গভীর মিনতিভরা চোখে তার চোখে চোখে চাহিয়া আরও কত অম্লচারিত বাণী নীতি জানাইয়াছিল, বুঝিবার জন্য প্রয়াসের প্রয়োজন হয় নাই। সেণ্টিমেন্টালিটি নীতি দেখায় নাই, ন্যাকামিও না । নারী হইয়া সে যে তার গ্রেমের কথা উচ্চারণ করিয়াছিল, তার অস্তরের দাবী জানাইয়া দিতে এতটুকু দ্বিপাবোধ করে নাই, তাহাতে বিন্দুমাত্র অসঙ্গতি ছিল না। প্রেমের খেলা খেলিতে খেলিতে অসংখ্য রহস্যভর ইঙ্গিঙ্গে ও প্রেমিকের দৃষ্টিতে ছাড়া একেবারে অর্থহীন খুটিনাটি ব্যবহারে মনের কথা প্রকাশ করিতে তার বিশেষ আপত্তি ছিল। তাই, হৃদয়ের নবজাগ্রত সত্য যখন তার কাছে পরিস্ফুট হইয়াছিল এবং সেই সত্যের অনুভূতিতে শিবপদর অস্তরের সত্যও যখন নিঃসংশয়ে জানিতে পারিয়াছিল, তখন তুচ্ছ লজ্জা ও সঙ্কোচের অধীনতার অপমান যে তার ভালবাসা স্বীকার করিয়া লইবে এ তার অসহ্য মনে হইয়াছিল। কবিত্বের কুয়াশা রচনা করিবার চেষ্টা না করিয়া সহজ সরল ও মুম্পষ্ট অর্থযুক্ত . কথায় সে তার দাবী জানাইয়াছিল। শিবপদ বলিয়াছিল, “কি আশ্চৰ্য্য কথা নীতি ! আমার যে মাসে পনেরট টাকা আয় নেই!” নীতি বলিয়াছিল, “এখন নেই, কিন্তু লম্বা ভবিষ্যৎট পড়ে আছে।” শিবপদ বলিয়াছিল, “তুমি তো ভাল করেই জান নীতি, টাকা আমার কোনোদিন হবে না। তাছাড়া এমন অসম্ভব কথা তোমার বাবার কাছে কিছুতেই আমি । উচ্চারণ করতে পারব না। উচ্চারণ করেও লাভ হবে না, সেও তুমি বোঝ।” এই কথার জবাবে কত কথাই নীতি বলিয়াছিল। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কাহাকেও সে চাহে না, শুধু শিবপদকে জীবনের সার্থী করিয়া পাইতে চায়। আজন্মঅভ্যস্ত বিলাসিতার প্রতি তার বিন্দুমাত্র মমতা নাই,— দরিদ্র শিবপদর দরিদ্র শিষ্য, দরিদ্র প্রিয়া হইয়াই সে থাকিতে চায় । আশা-নিরাশার আলো-ছায়ায় নীতির অপরূপ সুন্দর মুখের দিকে চাহিয়া শিবপদর হৃদয় বিদ্রোহ করিতে চাহিয়াছিল। দেশের মুক্তি যে চায় তার নিজের মুক্তি চাই সকলের আগে, এই সুকঠিন সত্য অস্বীকার করিতে চাহিয়াছিল। জীবনের আরব্ধ সাধনার সমাপ্তি করিয়া দিয়া মধুর বন্ধনে নিজেকে চিরতরে বাধিয়া ফেলিবার জন্য মন ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছিল। কি কঠিন সেই ক্ষণটি ! বিপ্লবী, উদ প্রাস্ত হৃদয়কে বশে আনিতে কত রক্ত ঝরিয়াছিল, কোনোদিন সে কি তাহা ভুলিবে! নীতি তাকে এতটুকু ভোলে নাই, তুলিতে পারে নাই। জিতেন চৌধুরীকে বিবাহ করিতে মত দিয়া হাসিমুখে এনগেজমেণ্ট রিং দেগাইয়া নীতি তাহাকে ষে আঘাত করিতে চাহিয়াছে তাহাতেই সে সত্য তার কাছে ধরা পড়িয়া গিয়াছে। ধনীর দুলালী এই মেয়েটির বাহিরের বিলাসিতার আবরণের অন্তরালে অস্তরের যে পরিচয় সে জানিয়াছিল তাহাতে প্রথম হইতে ভার' আশঙ্কা ছিল সে সহজে ভুলিতে পারিবে না । আসার হৃদয়ের পঙ্গু ভালবাসার অভিনয় সে তে করে নাই। তার গভীর হৃদয়ে নিবিড় প্রেম জাগিয়াছিল, কোনোদিন ভুলিতে পারিবে কিনা কে জানে ! জিতেন চৌধুরীর ভালবাসায় এমন কোন সম্পদই তো সে পাইবে না যাহাতে তার অতীতের ক্ষতির ক্ষত মিলাষ্টয়া যাইতে পারিবে । চরিত্রবান দৃঢ়চিত্ত স্বামীর শুদ্ধ শাস্ত প্রেমের স্পশে’ একদিন নীতির অস্তরের জালা প্রশমিত হইত, কিন্তু তাকে আঘাত দিবার জন্ত সাধ করিয়া সে অন্তরের চিতাগ্নি জীবনব্যাপী জলিবার উপযোগী সমিধ সংগ্ৰহ করিতে চলিয়াছে। এ কি কঠিন শাস্তি নীতি তাহাকে দিল । উষ্ণ অশ্বতে শিবপদর হাত ভিজিয়া গেল। অদ্ভূট জড়িত কণ্ঠে সে বলিতে লাগিল জগনন । -سندسه-جي جيل ه.