পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏb* ভাগ্য সৌভাগ্যের পরম প্রসাদে পরিতৃপ্ত হয়ে উঠবে। কে জানে—কে জানে সে কথা r—সাবিত্ৰী যেন সমস্ত বাংলার ভাগ্যকে ফিরাইবার ভার লইয়াছে, এমনি একটা দৃঢ়তা, এমনি একটা বিশ্বাসের জোরে সে কথাগুলি বলিতেছিল । ভারত তাহ অনন্তমন হইয়া শুনিতেছিল আর ভাবিতেছিল সত্যই যদি সাবিত্রীর কথা ফলিয়া ঘাইত ! সাবিত্রী হঠাৎ খামিয়া গেল । বাস্তবের মধ্যে ফিরিয়া আসিয়া স্বামীর সম্মুখে তাহার বড় লজ্জা হইল । ভারত কলমটা লষ্টয়া কাগজের উপর এক জায়গায় কতকগুলি আঁচড় কাটিতে কাটিতে বলিল,—কি আছে আমাদের যে এত আশা করব ? পরাধীন, পরের করুণার বিন্দু লহুধু অন্ধ - ন অনশনে একটা মৃতপ্রায় জাত—তার আবার আশা ? ভাবতেও ভয় করে সাবিত্রী ? সাবিত্ৰী মাথা নীচু করিয়া বসিয়াছিল। ধীরে ধীরে বলিল, বুঝলাম কিন্তু তা বলে কি আমাদের কারুর আশা একেবারে নির্শ্বল হয়ে গেছে বলতে পার ? মেনে নিলাম, শুধু বাংলার গ্রামে গ্রামে নয়, বাংলার ঘরে ঘরে নিত্য দুভিক্ষ, রোগ, অশাস্তি ; কিন্তু তারই ভেতরে কি রক্ষাকালী পূজা হয় না, মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত চলছে না, শনিপূজা, লক্ষ্মীপূজা নারায়ণসেবা হচ্ছে না ? এ সব কেন ? আমাদের দেশের লোক অনাহারে থেকেও দেবতার নামে পূজা দেয়, এ কেন ? আশা করে নয় কি ? অকূলে পড়ে অকুলের কাণ্ডারীকেই কি ভরসা করে ধরে না 7 যে জাতের আশা গেল তার ত মরণ। ভারত কহিল,—বড় কথা ছেড়ে দাও সাবিত্রী, আমাদেরই ঘরের কথা ধর । আমাদের যে নিত্য নবোৎসব চলেছে তার মধ্যে কি আর আশা থাকে, না আশা বাস। বাধে ? তারত কহিতে লাগিল,-আজ যদি সম্ভব হ’ত নিজের মান-সম্মান বঁচিয়ে সমর আর শীলাকে কোনও একটা অনাথ আশ্রমে রেখে মানুষ করা যেত তা হলে কি বাপ মা হয়েও আমরা তা দিতাম না ? সাবিত্রী জোর দিয়া বলিল,—না, দিতাম না। দেওয়া যদি দরকার বুঝতাম মান-সন্মানের জন্য ভাবতাম না। কিন্তু ওদের আমরাই মাহুষ করে তুলতে পারব প্রবাসী-কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৮ [ ৩১শ ভাগ, ২য় খণ্ড এই আশাই না করছি ? আজও ত নিরাশ হবার মত এমন কিছু ঘটে নি । তাহাদের কথায় মাঝখানে বাধা পড়িল, শীলা সন্ধ্যার সময়ই ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল, হঠাৎ জাগিয়া উঠিয়া চোখ মুছিতে মুছিতে আসিয়া বলিল,—ম, আমরা কি আজ খাব না ? অনেক রাত হইয়া গিয়াছে, সাবিত্রী নিজের অন্যায়ু বুঝিতে পারিয়া বলিল,—হঁ্য মা, এবার আমরা সবাই খাব । তুমি জায়গা ক’খানা করে ফেল, আমি টপ ক’রে সব বের করে আনছি। দিন তিনেক পরে ভারত একটা গল্প লিখিয়া ডাকে পাঠাইল, সঙ্গে একখানা টিকেটও দিল । ডাকে ফেলিবার সময় টপ করিয়া একবার চোখ বুজিয়া সনে মনে বলিল,—ভগবান তুমি দেখো। পথে চলিতে চলিতে কত কি ভাবিল ৷ এবার যদি গল্পটা ফেরত না আসে তাহলে গোট পনেরো টাকা হয় ত পাওয়া যাইবে । সাবিত্রীর কাপড় নাই, ছেলেদের জামা নাই, আরও কত কি! সব কিছু করিতে গেলে এই টাকায় কুলায় না। ছোট চাকৃরি ভারতের, মাস গেলে প্রভিডেন্ট ফণ্ডের টাকা বাদ দিয়া ঘরে আসে গোটা ধিয়াল্লিশ টাকা । ডাক্তারখানার বিলশোধ, ধোপ, গোয়ালা প্রভৃতি ত আছেই। দিয়া থুইয়া অতি সাৰান্ত টাকাই বাচে–মাসের শেষ অবধি বাজার খরচও চলে না । এই ত অবস্থা। তবু এক রকম করিয়া কাটিতেছিল, তাহার উপর এক নূতন বিপদ । বিপদ বই কি ? গোনা-গাথা যার আয় তার উপর একটা কুটো পড়লেও যে আর ভার সয় না। ভারতের বড় ভায়ের একটি ছেলে সবে ম্যাট্রিক পাশ করিয়াছে, দাদ। তাই ছেলেটিকে শহরে থাকিয়া কলেজে পড়িবার জন্য ভারতের কাছে পাঠাইয়াছেন । ভারত তাহার জামাকাপড় খাই-খরচের জন্ত দাদার নিকট হইতে সাহায্য লয় কেমন করিয়া । চাহিতে তাহার লজ্জাও করে, কষ্টও হয়, দাদার অবস্থাও ত তেমন ভাগ নয়। দাদী কলেজের মাহিনী ও ছেলের বইপত্রের জন্ত মাসে দশটি করিয়া টাকা পাঠান । কিন্তু তাতে সংসার খরচের আয় বাড়ে কই ? কাজেই