পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8Ꮈ বিরোধী। ইহা সত্য, যে কোনও ইংরেজের প্রতি আমাদের বিদ্বেষ থাকা উচিত নয়, সমুদয় ইংরেজের সমষ্টি ইংরেজ জাতির প্রতিও আমাদের বিদ্বেষ থাকা উচিত নয়। এমন ইংরেজও আছেন ধিনি ভারতীয়দের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করিয়া আমাদের প্রত্যেকের চেয়ে বেশী প্রবন্ধ লিপিয়াছেন, তাহার সম্বন্ধে তথ্য নির্ণয় ও তাহার প্রতিকার করিবার নিমিত্ত আমাদের চেয়ে বেশী বিদেশভ্রমণ করিয়াছেন, কষ্ট ও লাঞ্চনা সহ করিয়াছেন এবং পরিশ্রম করিয়াছেন, এবং কাগজে বার বার লিথিয়|ছেন, যে, সম্পূর্ণ স্বাধীনতাই ভারতবর্গেব একমাত্র লক্ষ্য হইতে পারে । আমরা এরূপ একজনকে জানি, অন্তের আরও ভারতবন্ধু ইংরেজের বিষয় অবগত থাকিতে পারেন । সুতরাং সমুদয় ইংরেজকে আমাদের বিরোধী মনে করিবার কারণ নাই । কিন্তু ভারতে প্রতিষ্ঠিত ও প্রচলিত ইংরেজদের শাসনপ্রণালী ত স্বতন্ত্র দেহ- ও প্রাণবিশিষ্ট একটি জীব নহে, যে, ইংরেজ জাতিকে বেকসুর খালাস দিয়া আমরা সেই জীবটিকেই তাহার স্কুল ও দোষ দেখাইয়া তাহার সংশোপনের চেষ্টা করিব । তইতে পারে, যে, এই শাসনপ্রণালী যখন ক্রমশঃ উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত হইয়াছিল, তখন তাহার প্রয়োজন ৭ উপকারিত ছিল । কিন্তু এখন উহার আমূল পরিবর্তন আবশ্যক । উগর উদ্ভাবন ও প্রবর্তন ইণ্ডুরঙ্গ জাতির লোকেরাষ্ট করিয়াছিল। উদ্ভাবক ৪ প্রবর্তকদের মধ্যে অল্প লোকই এখন জীবিত আছে, স্বতরাং কাহারও ইচ্ছা থাকিলেও তাহাঁদের সহিত ঝগড়া করিবার বা তাহাদিগকে শাস্তি দিবার উপায় নাই । কিন্তু ইংরেজ জাতির লোকেরাই ঐ প্রণালী প্রচলিত রাখিয়াছে। এখানে এই আপত্তি উঠিতে পাবে, ধে, যাহার প্রচলিত রাপিয়াছে, তাহাদিগকেই দায়ী কর, সমস্ত ইংরেজ জাতিকে কেন দায়ী করিতেছ ? দায়ী এইজন্য করিতেছি, যে, ভারতবর্ষের বর্তমান শাসনপ্রণালী হইতে যে সাংসারিক লাভ, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি wউৎশশ্ন হয়, সমগ্র ইংরেজ জাতি তাহ ভোগ করিতেছে ; দায়ী এইজন্ত করিতেছি, যে, ইংলণ্ডের লোকেরা পালেমেণ্টে তাহীদের প্রতিনিধিদের দ্বার প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩১ বর্তমান . [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রণালীর মূল উচ্ছেদ বা পরিবর্তন করাইতে পারেন, • অথচ করিতেছেন না । অতএব ইহা যদিও সত্য, যে, ব্যক্তিগত বা জাতিগত ভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন বিদ্বেষ থাকা । উচিত নয় ; তথাপি সেই সঙ্গে সঙ্গে ইহাও সত্য, যে, তাহাঁদের সহিত আমাদের এই বিরোধ আছে, যে, আমাদিগকে বঞ্চিত রাখিয়া তাহারা সমস্ত জাতি নানা প্রকার সুবিধা ভোগ করিতেছে, এবং এরূপ শাসনপ্রণালী তাহার প্রচলিত থাকিতে দিয়াছে, যাহা দ্বারা তাহার লাভবান• হয় কিন্তু আমাদের অনিষ্ট হয় ও আমাদের মনুষ্যত্ব থৰ্ব্ব হয়। শুধু তাহাই নহে। তাহার। আমাদের কৃতজ্ঞতার দাবী করে, আমরা দোষ দেখাইলে তাহারা আত্মপ্রশংসায় মেদিনী পূর্ণ করে, এবং আমরা কোন পরিবর্তন ঘটাইবার চেষ্টা করিলে তাহারা তাহাতে যথাসাধ্য বাধা দেয় । এইসকল কারণে আমরা মনে করি, ইংরেজের শাসনপ্রণালী ও ইংরেজ জাতি উভয়েরই সহিত আমাদের বিরোধ আছে । “ইংরেজ জাতি” আমরা “অধিকাংশ ইংরেজ” অর্থে ব্যবহার করিতেছি । আমরা মনে করি ন, যে, নেশ্বান বা জাতি হিসাবে কোন জাতিই ন্যায়বান, বিশেষতঃ যে-সব বিষয়ের সহিত তাহদের স্বার্থ জড়িত সেইসব বিষয়ে । এই হেতু অনেক খ্যাতনামা ভারতীয় রাজনীতিজ্ঞের ব্যবহৃত "বৃটিশ সেন্স অব জাষ্টিস” অর্থাৎ “বৃটিশ ন্যায়বৃদ্ধি" কথাগুলিকে আমরা একটি কাল্পনিক বস্থর বর্ণনা বলিয়া মনে করি । ন্যায় বুদ্ধি সম্বন্ধে ব্রিটিশজাতি অন্য জাতি অপেক্ষ নিকৃষ্ট কি না, বলিন্ডে পারি ন, কিন্তু শ্রেষ্ঠ বলিয়া মনে করিবারও কোন প্রমাণ পাই নাই । L “রঙ ” ૭ “বিবর্ণ” মানুষ • যে-সব জাতি আপনাদিগকে শ্বেত বলিয়া থাকেন, র্তাহারা বাস্তবিক শ্বেত নহেন, ঈষৎ লালচে কটা। অন্য সব জাতিকে তাহার কলার্ড, অর্থাৎ বর্ণবিশিষ্ট বা রঙীন বলিয়া থাকেন। তাহা হইলে তাহাদিগকেও বর্ণহীন বা বিবর্ণ বলা যাইতে পারে ।