পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] চুলালী N96t নম্ব, বাবুর বাড়ীর কাজ সেরে, ঘরে ফিরে এল। তার সারাদিনের-পরিশ্রমে-ভেঙে পড়া শরীরটা লুটিয়ে পড়ল— দুলালীর পায়েরই কাছে দাওয়ার উপর। তাড়াতাড়ি একখান ভাঙা হাত-পাখা এনে দুই-এক বার বাতাস করতেই —“থাক্ থাক, আর বাতাস করতে হবে নারে দুলু”— বলেই নন্দ উঠে পড়ে মুখ হাত ধুয়ে একটু ঠাণ্ডা হ’ল। তার পর একথান ভাঙা পাথরে ছ-সাত ঘণ্টার রান্না মোট চালের ঠাণ্ডা ভাত খেতে তার যে কি তৃপ্তিই হচ্ছিল অন্য দশজনে না বুঝুঁক—যে তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিল সেই দুলালী যে সেটা খুবই বুঝেছিল। রাত তখন খুব বেশী না হ’লেও গ্রামটা যেন নিঝুম হয়ে পড়েছিল। শুধু রাতের হাওয়ায় বাশে ধাক্কা লেগে বেজে উঠছিল এক-একটা হাততালি—আর ভাঙার্কুড়ের মধ্যে জেগেছিল শুধু নন্দ আর সেবারতা দুলালী । - স্বামীর পা দুখানি কোলে তুলে নিয়ে হৃদয়ের সব শক্তিটুকু এক করে তার শ্রম-বিনোদনের চেষ্টাতে সত্যিই তার বেশ একটু তৃপ্তি হচ্ছিল। আনতনয়না দুলালীর মুখপানে একদৃtে চাইতে চাইতে দুফোট চোখের জল অলসভাবেই নন্দর গও বেয়ে গড়িয়ে গেল। দুলালীর আনমনা চোখের পলক হঠাৎ স্বামীর মুখের উপর পড়তেই—বাধভাঙা স্রোতের মতনই নন্দর সকল অশ্র বাধনহারা হয়ে ছাপিয়ে পড়ল ঐযে তার মুখের উপর । কি যেন অজানা বেদনায় ছপালীম্ 齡 প্রাণটা আকুলি-বিকুলি করে উঠল ; দুজনেই নিৰ্ব্বাকৃ—নিম্পলক। দূরে নির্বাণোন্মুখ প্রদীপটা কেঁপে, কেঁপে উঠছিল। যে মেঘে বৃষ্টি হয়নি তার বুকেই বোধ হয় বেশী আগুন লুকান থাকে । যে দুঃখটা নন্দর বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মতনই চেপে বসে ছিল—চোখের জলে ধুয়ে ধুয়ে তা যেন একটু হাল্কা হয়ে গেল ; কিন্তু অনির্দিষ্ট দুঃখের অকরুণ বাম্পে দুলালীর যেন শ্বাসরুদ্ধ হবার উপক্রম হ’য়ে উঠল । দুবার ঢোক গিলে তাকে সরিয়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করে সে যেন হাফিয়ে উঠেছিল। মুখের লালিম কোথায় লুকিয়ে পড়ল, মুখ যেন শবেরই মত সাদা হয়ে উঠল। ধরা-গলায় সে জিজ্ঞাসা করলে—“কি হুয়েছে ?” নন্দ তার ময়লা কাপড়ের একটা খুঁট দিয়ে চোখ দুটাে মুছে ফেলে উত্তর দিলে—“বিশেষ কিছুই হয়নি রে লালী—এর জন্য তুই অত ব্যস্ত হয়ে উঠিসনে । কি জানিস্—যে মেঘট দিনরাত্রি বুকের উপর জেকে বসে আছে—আজ সে তোর সেবা-শুশ্রষার ঠাও। হাওয়ায় দু ফোটা জল ছড়িয়ে দিলে আর কি।” হেঁয়ালী বুঝবার ক্ষমতা দুলালীর আঙ্গে ছিল না ; তাই অৰুঝের মতনই সে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল— নন্দ এবার স্পষ্ট করেই বললে—“শুনবি তবে লালী ? আচ্ছা তার আগে আমার এই কথাটার ঠিক উত্তর দে দিকি । এই যে বুড়োটা তোর জীবন একেবারে মাটি করে দিলে তার জন্তে কি একটুও তোর দুঃখ হয় না 7–কই একদিনও ত তোর মুখের উপর সে দুঃখের ছায়াপাত দেখলাম না ?” “আবার সেই কথা—ওটা কি আর ভুলবে না তুমি” বলেই—দুলালী স্বামীর পায়ের মধ্যে মুখ লুকিয়ে নিজেকে যেন সঙ্কোচের মাঝখানে কতকটা সামলে নিলে। নন্দের ধৈর্ঘ্যের বাধ ভেঙে গেল—আবেগপূর্ণ-স্বরে সে আবার আরম্ভ করলে—“তুলতে যে পারছিনে লালী। ঐ একটা কথাই যে আমাকে চব্বিশ ঘণ্টা খোচা দিয়ে দিয়ে অতিষ্ঠ ক'রে তুলেছে। আমি কি একটা পাবও নিজের বয়সের কথা না ভেবে-তোর খেলাঘর থেকে সেই যে তোকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি—সেটা কি সামান্ত অপরাধ রে ? তুইত বললি ভুলে যাও। আগুনে ছাই ছাপা দিলে সে কি নেবে রে পাগলী ? দুলালী যেন কেমন-একটা অস্বস্তির মধ্যেই পড়েছিল—নম্বর কথায় বাধা না দিলে সে আর তিষ্ঠিতে পারছিল न-डॉहे তার কথার মাঝখানেই বলে উঠল—“থাক থাক ও সব পুরোনো কথা পেড়ে আর দুঃখ কোরো না, যা হবাৰ হয়ে গেছে। এখন ঘুমিয়ে পড়ো—সারাদিন আজ্ঞ বড় খাটনি গেছে।” , একটু চুপ ক’রে থেকে, নন্দ দুলালীর হাত দুখান চেপে ধরে সে ব্যাকুলভাবে বলে উঠল—"লী—লালী তোর