পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪২ তুলনামূলক সমাজ-বিদ্যার আলোচনায় ভুল কেন প্রবেশ করিয়াছে এবং এই বিজ্ঞানের সংস্কার কিরূপে সাধিত হইতে পারে, তাহার আলোচনা মংগ্ৰেণীত “ফিউচারিজম্ অব ইয়ং এশিয়া" বা “যুলক এশিয়ার ভবিষ্যবাদ” ( লাইপৎসিগ ১৯২২ ) গ্রন্থে প্রকাশিত হইয়াছে । এই গেল গোটা সভ্যতা-বিজ্ঞান বা সমাজ-তত্ব সম্বন্ধে কথা । সঙ্কীর্ণ ক্ষেত্রে ভারতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান ও সিদ্ধান্তগুলার কিন্মং বাহির করিবার জন্য “পলিটিকাল ইনষ্টিটিউস্ত্যানস অ্যাও থেয়োবিজ অব দি হিন্দুজ” অর্থাৎ “হিন্দু জাতির শাসন-পদ্ধতি ও রাষ্ট্রনীতি" (লাইপৎসিগ ১৯২২ ) নামক গ্রন্থ প্রচারিত হইয়াছে। প্রাচীন কালের ভারতসন্তান ভালয় মন্দয় গ্ৰীকৃ, রোমান এবং জাৰ্ম্মানদেরই সমকক্ষ ছিল—এই কথা সেই গ্রন্থের প্রাণ। বর্তমান ভারত অথবা ভবিষ্য ভারত সম্বন্ধে এই কেতবে কোনো কথা বলি নাই । (So ) ভবিষ্য ভারত কোন পথে চলিবে ? এই সঙ্গন্ধে র্যাহার যেরূপ খুলী তিনি সেইরূপ আদর্শ প্রচার করিতে অধিকারী। গোটা দুনিয়া কোন পথে চলিবে ? এই সম্বন্ধে যেমন প্রত্যেক লেখক, সমাজ-সংস্কারক, বৈজ্ঞানিক বা প্রপাগাণ্ডিই নিজ নিজ মত জাতির করিতেছে, ভারত সম্বন্ধেও ভবিষ্যবাস্ত্রীরা সেইরূপ করিবে ইহা স্বাভাবিক। স্বাধীন চিন্তায় বাধা দিবে কে ? যাহার মাথায় কিছু কিছু মগজ আছে, সেই এক-একটা দল পুরু করিতে অধিকারী। কিন্তু তাহা বলিয়া কোনো-একটা পথকে “পূরবী” এবং অপর কোনো পথকে “পশ্চিমা” দাগে চিহিত করিতে বসিলে তর্ক-বিতর্কের আখড়ায় আসিয়া পাঞ্জা কষিতে হইবে । এই আখড়ায় আদর্শ, ভাবুকত, মানবজাতির আশা, সমাজ-সংস্কারকের স্বপ্ন বা পীরবরের বাণী খাটে না । এখানে খাটে কেবল তথ্য, বাস্তব তথ্য, যাহা ঘটিয়াছে এবং যাহা ঘটিতেছে তাহার নিরেট বিবরণ। অর্থাৎ দেশী-বিদেশী, প্রাচ্যপাশ্চাত্য, ভারতীয় এবং অভারতীয় সকল প্রকার প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড জীবন-কেন্দ্রের সন-তারিখ-সমন্বিত এবং দফায় দফায় তুলনা-মূলক ইতিহাস বা নৃতত্ত্ব। ধরা যাউক যেন চবৃথার দ্বারাই ভবিষ্য ভারত স্বর্গে উঠিবে। অথবা যেন পল্লী-কেন্দ্রেই ভারতের ভবিষ্যবিকাশ ঘটিতে বাধা, অথবা যেন কুটিরশিল্প ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার শিল্প-ব্যবস্থা ভারত হইতে বাহির করিয়া দেওয়া উচিত, অথবা যেন ভবিষ্যভারতে স্পষ্ট শাসন চলিবে পল্পীপঞ্চায়তেরই বিধানে । ভবিষ্যবাদীবা এই চার দফীয় ভারতীয় জীবন গড়িয়া তুলুন—আপত্তি কি ? কিন্তু এই চার দফার কোনোটাকেই ভারতীয় “আধ্যাত্মিকতার” বিশিষ্ট আবিষ্কার বলা যাইতে পারে কিসের জোরে ? এই “চার মহা সত্য" জগতের অন্যান্য দেশে কোনো কোনো যুগে নরনারীর জীবনকেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত করে নাই কি ? এই “সত্য-চতুষ্টয়"ই যদি আপ্যাত্মিকতা এবং মানবসভ্যতার চরম নিদর্শন হয় তাহা হইলে দুনিয়ার আদিম, অসভ্য, “বার্লাব," অকুন্নত জাতিগুলা চরম মাত্রায় আধ্যাত্মিক এবং সভা ভাশীল নয় কি ? তাহা হইলে প্রাচীন ইয়োরোপের গ্ৰীকৃ, রোমান, জাৰ্ম্মানরা এবং মধ্য যুগের পর ফ্যাক্টরি যুগের কলচালিত শিল্প-ব্যবস্থার আমল পর্য্যন্ত ইয়োরোপীয় খৃষ্টানরা আধ্যাত্মিকতা এবং সভ্যতার দাবী তইতে বঞ্চিত হইবে কেন ? তাহা হইলে পাশ্চাত্য-সংসারের সোস্যালিষ্ট পন্থীরা এবং বিশেষতঃ কমিউনিষ্ট বা যৌথ-সম্পত্তি-পন্থী ধনসাম্যধৰ্ম্মীরা কি দোষ করিল ? তাহা হইলে লেলিন টুটুলকি প্রবর্তিত বোলশেভিক্ রুশিয়া কম-সে-কম আদর্শ-হিসাবে আধ্যাত্মিকতা এবং সভ্যতার মাপকাঠিতে চরমে গিয়া ঠেকে নাই কি ? তাহা হইলে লেনিন টটুস্কির “গুরুর গুরু" জাৰ্ম্মান ইহুদির বাচ্চা কাল মার্কস্ তথাকথিত ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার এবং ভারত-ধৰ্ম্মের প্রতিমূৰ্ত্তি নয় কি ? পূৰ্ব্বই বা কোথায়? পশ্চিমই বা কোথায় ? ( ১১ ) এঙ্গেলসের গ্রন্থ ভারতীয় সমাজে প্রচারিত হইলে ভারতবাসী নিজ নিজ স্মৃতি নীতি ধৰ্ম্ম অর্থ কাম মোক্ষ