পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ჯ8 প্রণালী জীবদেহে কোনোই কুফল উৎপাদন করিতেছে না, বরং শত শত রোগীকে মরণের পথ হইতে ফিরাইয়া আনিতেছে, তখন বিপক্ষদলকে বাধ্য হইয়া পাস্তুরের মহত্ত্ব স্বীকার করিতে হইল। পাস্তুরের নাম এখন সভ্যসমাজে সৰ্ব্বত্র সুপরিচিত, যত দিন বৰ্ত্তমান সভ্যতার অস্তিত্ব থাকিবে, ততদিন লোকে কৃতজ্ঞতা-সহকারে এই মনস্বী ফরাসী পণ্ডিতকে স্মরণ করিবে। ফরাসীজাতি এইজাতীয় মহাপুরুষকে সম্মান দিতে কার্পণ্য করে নাই , মৃত্যুর পর তাহার দেহাবশেষ মহাসমারোহে সমাহিত হইয়াছিল। পাস্তরের সমাধি-মন্দির ও পরীক্ষাশালা দেশবিদেশের ভক্তবৃন্দের নিকট পরম পবিত্র তীর্থ-ভূমিতে পরিণত হইয়াছে। পাস্তুর যে আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ ফরাসী একথা ফরাসীরা প্রায়ই গৌরব-সহকারে স্বীকার করিয়া থাকে । ডিগ থিরিয়া (Diptheria) রোগের জীবাণু, প্রথম আবিষ্কার করেন লিফলার ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দে । শিশুগণ সহজেই এই সাংঘাতিক পীড়ায় আক্রাস্ত হয়। লিফলারের আবিস্ক্রিয়ার পূৰ্ব্বে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার ভিন্ন অন্য কোন উপায়ে রোগীর যন্ত্রণার লাঘব করিতে পারিতেন না । এই রোগের তীব্র বীজাণু মাংসের কাপের মধ্যে পরিবদ্ধিত করিলে যে জলীয় অংশ পাওয়া যায় তাহা ডিপ থিরিয়া রোগের প্রতিষেধক-রূপে ব্যবহৃত হইতে পায়ে । এই তরল বিষ দুই-তিন মাস ধরিয়া কমান্বয়ে কয়েকবার অশ্বের ধমনীতে প্রবিষ্ট করাইয়া দিলে, রক্তের মধ্যে একপ্রকার তীব্রতর প্রতিষেধক বিষের উৎপত্তি হইয়া থাকে। অশ্ব-দেহে সঞ্জাত এই বিমই ডিপ থিরিয়া রোগে মহৌষধিরূপে ব্যবহৃত হয়। এই অব্যর্থ প্রতিষেধকের আবিক্রিয়ার জন্য বেরিং (Behring) éss F (Roux) HIN-F দুইজন বৈজ্ঞানিক প্রধানত: দায়ী । পূৰ্ব্বে ডিপ থিরিয়া রোগগ্ৰস্ত শিশুদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের এই রোগে মৃত্যু হইত আর এখন এক দশমাংশ ও মরে কি ন সন্দেহ । রোগের প্রথম অবস্থায় ঔষধ প্রয়োগ করিতে পারিলে প্রায় সকল রোগীই রেক্ষা পায়। বৈজ্ঞানিক অমুসন্ধিৎস্থ প্রবৃত্তির সম্মুখে এই রোগের পরাজী নব্য বিজ্ঞানের পক্ষে গৰ্ব্ব করিবার বিষয়। প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড জীবাণুর কার্য্যকলাপ সম্বন্ধে বিস্তৃত গবেষণা আরম্ভ করেন পাস্তুরই সর্বপ্রথম। পাস্তুরই প্রথম লক্ষ্য করেন শ্বেতসার যে পচনের ফলে অম্ল ও স্বরাসারে পরিবৰ্ত্তিত হয়, সে-পরিবর্তন সংঘটিত হয় বিশেষপ্রকার জীবাণুর সাহায্যেই। পচনশীল বস্তু-মাত্রকেই যদি সম্পূর্ণরূপে জীবাণু সংস্পর্শ রহিত করা যায় তবে বহুকাল পর্য্যন্ত ইহা অবিকৃত থাকিবে ইহাও পাস্তুরই প্রথম আবিষ্কার করেন। বায়ুশূন্য টিনে রক্ষিত খাদ্যসম্ভারে এখন দেশ ছাইয়া গিয়াছে, বিলাতের লোকের পক্ষে ত এইপ্রকার খাদ্যই প্রধান সম্বল। কিন্তু অল্পলোকেই জানেন যে, সংরক্ষণের এই উপায় বাস্তবিক পক্ষে নির্দেশ করেন সৰ্ব্বপ্রথম পাস্তুর ও লিষ্টার । অঙ্গারজ বস্তু যেমন জীবাণুর সংস্পর্শে পচিয়া যায়, লিষ্টার দেখিয়াছিলেন যে, জৈবিক মাংসপেশীসমূহও সেইরূপ জীবাণুর অত্যাচারে বিকৃত হয়। প্রাণী-দেহের ক্ষত প্রকৃতি চাহেন শীঘ্র নিরাময় করিখা দিতে আর প্রাকৃতিক এই চিকিৎসার বাধা দিতে থাকে এই দুষ্ট জীবাণুগুল —জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে ইহাদের বাস ; একবার সুবিধা পাইলেই ইহার ক্ষতমধ্যে প্রবেশ করে। রোগীর জীবনীশক্তি বিশেষ প্রবল থাকিলে ইহারা প্রায় হটিয়া যায়, প্রকৃতি স্বাভিপ্রেত কাজ করিয়া যান কিন্তু রোগীর দেন্ত জীবাণুর আক্রমণের বিপক্ষে আত্মরক্ষায় অসমর্থ হইলে ক্ষত পচিতে আরম্ভ করে । লিষ্টারই সৰ্ব্বপ্রথম বুঝিতে পারিলেন যে, অস্ত্রোপচারে সফলকাম হইতে গেলে চিকিৎসকের লক্ষ্য রাখিতে হইবে, যাহাতে ক্ষতমধ্যে জীবাণু প্রবেশ না করে । লিষ্টারের প্রবৰ্ত্তিত জীবাণু-বিনাশ-প্রণালী এবং জীবাণুসম্পর্কবিহীন তুলা ও আচ্ছাদনী এখন বিশ্ববিখ্যাত হইয়। পড়িয়াছে। লিষ্টারের আবিষ্কৃত এই সকল মূল্যবান্‌ তথ্যের ফলেই আধুনিক অস্ত্র চিকিৎসার এত সাফল্য সম্ভবপর হইয়াছে। অস্ত্রোপচারের পূৰ্ব্বে চিকিৎসক সৰ্ব্বপ্রথম নিজের হস্ত ও যন্ত্রপাতি যাহাদের সহিত ক্ষতের ংস্পর্শ অবশ্যম্ভাবী—জীবাণুশূন্য করিয়া লন। জীবাণুর বিশেষত্বই এই যে, অধিক উত্তাপে ইহাদের জীবনীশক্তি সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়, স্বতরাং অস্ত্রোপচারের অব্যবহিত