পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b-8 প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড কারকের ভিতর ফেলিতে পারা যায়। কিন্তু যদি নির্ণয় করা আর যারই কাজ হোক ব্যাকরণকারের রূপভেদই না থাকে তাহা হুইলে কেবল অর্থ ধরিয়া কারক নহে । আর্টের আদর্শ আর্ট ও আর্টিষ্টের ব্যক্তিত্ব শ্ৰী সরোজেন্দ্রনাথ রায়, এম্-এ

আজকাল বাঙ্গলাদেশে আর্ট লইয়া বেশ আলোচনা চলিতেছে। দেশ ও বিদেশের আর্ট-সমালোচকগণ নান মত প্রকাশ করিতেছেন । এইসব মতগুলি এত বিভিন্নপ্রকারের যে, যাহারা সত্য-সত্যই আর্টের স্বরূপ জানিতে চাহেন তাহারা এই মতের গোলক-ধাধার মধ্যে পথ হারাইয়া ফেলিবেন । আর আজকালকার দুনিয়টিও এত জোরে ছুটিয়াছে যে, একটু চুপ করিয়া বসিয়৷ ভাবিবার অবকাশ নাই । রোলার ভাবে বলিতে গেলে বলিতে হয়, আমরা কোন এক অচেনা অদেখা কুহেলিকারূপিণী "লিলুলি”র (Lituli) পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছুটিয়া ক্ষত-বিক্ষত, ক্লান্ত হইয়া পড়িতেছি। সত্যের প্রশান্ত মূৰ্ত্তি দেখিবার আমাদের অবসর নাই—ধৈর্য্য ও ইচ্ছাও নাই । আট কি ? ইহার সঙ্গে মানব-জীবনের কি সম্পর্ক— সমাজে ইহার স্থান কি ? মানবের গভীরতম জীবনের সঙ্গে ইহার ধোগ-স্বত্র কোথায় ? স্বন্দর কি ? মঙ্গলের সঙ্গে স্বন্দরের মিলন কি সম্ভব । নীতি কি ? নীতির সহিত আর্টের মিলন কোন ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত ? এসব প্রশ্নের মীমাংসার চেষ্টা দেখিতে পাওয়া যায় না । সকলেই বাধা বুলি লইয়া ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে। ম্যাক্স মুলার আর্টের প্রতিশব্দ মায়া করিয়াছেন ও আর্টিষ্টকে মায়ী বলিয়াছেন। মায়ী—মায়াতে নিজকে সৰ্ব্বদা প্রকাশ করিতেছেন তাহাতেই তাহার আনন্দ । আর্টিষ্ট নিজ জীবনের গোপনভাব ও অভিজ্ঞতাগুলি সকলের কাছে প্রকাশ করিয়া আনন্দ পান। অপ্রকাশের একটা নিগূঢ় ব্যথা আছে—যাহা অসহনীয়। স্বতরাং বাচিতে হইলে মানুষকে প্রকাশ করিতেই হইবে । পরলোকগত পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয় তাহার “কাব্য ও কবিত্ব’’ নামক উৎকৃষ্ট প্রবন্ধে এই বাধ্যতার ভাবকে আবেশ বলিয়াছেন । তিনি বলিয়াছেন— “ইহাকে আবেশ বলিবার অভিপ্রায় এই, ইহা যেন সৰ্ব্বেপ্রিয়কে গ্রাস করে, চিস্তাকে পথভ্রান্ত করে, হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে, ভাবরাশিকে আন্দোলিত করে। এই প্রকার নেশা বা আবেশে যাহাকে ন ধরে, তাহার হাত দিয়া প্রকৃত কবিতা বাহির হয় না । ইহা যেন কঁচপোকার তেলাপোক ধরার স্বায় । আবেশে ঘাড়ে ধরিয়া লেখায়, না লিখিয়া নিস্তার নাই । এই আবেশ যেন ভিয়ানের পাক। ইহার ভিতর দিয়া যে শব্দট। অসে সেটা মিষ্ট, যে অলঙ্কারটা আসে সেটা মিষ্ট, যে ছন্দটি ফুটিয় উঠে তাহ মধুর। আর এই আবেশ ন ধরিলে কবিতা লেখা বিড়ম্বন মাত্র ” কিন্তু আজকাল এই ছাপাখানার যুগে আমরা দেখি কত লোক কত কি লিখিতেছেন । কিন্তু স্থির হইয়া বসিলে দেখিতে পাই এ-সমস্তের অনেকের মধ্যে অর্থের আবেশ ছাড়া অন্য কোন উচ্চাঙ্গের আবেশের গন্ধও নাই । পশ্চিম হইতে সমাগত রক্ত-মাংসের আকুল আহবানে পীড়িত আর্ট, আমাদের ভারতীয় চিত্তের শেষ আধ-ভাঙ্গা খুটিটিও ভাঙ্গিয়া দিতেছে। রক্ত-মাংসের ডাক সনাতন ডাক—অস্বীকার করিবার জো নাই—আমরা তাহাতে যথেষ্টই কাতর আছি। ডক্টয়েভস্কির "ব্ৰাদাস কারামাঝভ” বা কুটু হামজানের “প্যানের মধ্যে আদিম মানবের যে-ক্ষুধা চিত্তকে মথিত করিতেছে দেখিতে পাই সে-ক্ষুধা দিনের পর দিন আমাদের সাহিত্যেও পরম আধিপত্য