পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মামুষের কথা শুনে, ভদ্রলোকে কাজ করে ? তোমাদের কথা শুনে ওই চুলছাটা বাবুটাকে এতগুলা পয়সা নষ্ট করে আম সন্দেশ পাঠালাম ; তার এই ফল । ও ত জানাই ছিল, জানাই ছিল ; না হ’লে তিন ঘণ্টা আগে এসে চিরঞ্জীব ঘোষ ইষ্টিশানে কিসের জন্যে বসেছিল ? কথা ত কেউ কারোর শোনে না ; শুনতে আমার কথা, ত একটা জিনিষ আজ বরবাদ যেত ? জুতিয়ে জিনিষ তুলিয়ে দিতাম। এখন খাওয়াও ছেলেকে রূপোর বাটিতে দুধ, পরাও গয়না ! নবাবের নাতি কিনা।” গৃহিণী কাদ-কাদ হরে বললেন, “তুমি ত মানা করনি। না হ’লে—” র্তাহার কথা শেষ হবার আগেই চিরঞ্জীব মেঝেয় লাঠি ঠুকে বললেন, “মানা-করবার আমি কে ? লোকসান দেওয়৷ আমার কাজ। তার পর তোমরা আছ মালিক । মেয়েমানুষকে ভগবান বুদ্ধি দিন বা না দিন জাক ত কম দেননি।” গৃহিণী ভেবে পেলেন না তার কোন অপরাধে সমস্ত জিনিষ ষ্টেশনে’ পড়ে রইল। পার্থে উপবিষ্ট এক সহযাত্রিণীর কাছে সহানুভূতি পাবার আশায় তার দিকে চেয়ে তিনি বললেন, “হ্যাগ, ঘরে চাকরে ভেঙে ফেলবে, বাইরে লোকে চুরি করে নেবে, তবে, রূপোর বাটি গড়ানো কেন ছেলের নাম করে’ ? জিনিষ যদি তুলতে না পারবে ত এনেছিল কেন সঙ্গে ? আমি কি ওর দেউড়ির চৌকিদার, যে, মদ সেজে মালের খপরদারী করে বেড়াব ? হ্যা ভাই বল দেখি, এই তুমি যদি একটা অন্যায় কাজই কর ত ভদ্রলোকের ছেলে কি তোমায় যা মুখে আসবে তাই বলবে ?” সহযাত্রিণী হেসে বললেন, “কোনো ভদ্রলোকের ছেলের ঘর আগ্লাতে ত যাইনি, কাজেই পটুলিও হারায়ন, তার কৈফিয়ৎ তলবও কেউ করে না।” গৃহিণী বিস্মিত স্বরে বললেন, “বিয়ে করনি " তার পরেই স্বস্তির স্বদীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, “আঃ বেঁচেছ ভাই, এমন জানলে কে বিয়ে কর্ত!” পটুলি হারানোর দুঃখে ও স্বামীর শ্লেষবাক্যের অপমানে বিবাহটাকেও মারাত্মক ভুল মনে করে গৃহিণী বাঙালীর মেয়ের পিতৃকুলকে গালি দিতে দিতে বললেন, হারানিধি (?:3న “হায় মা, আমাদের বাঙ্গালীর ঘরে কি তা হবার জো আছে ? মেয়ে নয় ত গলার র্কাটা । দশ বছর পার হতে না হ’তে বাপ-মায়ের আর চিন্তা নেই, কেমন করে” মেয়েটাকে দূর করে দেবে এই এক ভাবনা ।” তার পর ক্ষোভের নিশ্বাস ফেলে’ ”আহ, আমন ভারী রূপোর বাটিটা !" বলে গৃহিণী সাস্বনাৰ্থ মুখে এক টিপ দোক্ত পূরে আবার ঝিমতে স্বরু কবুলেন। কৰ্ত্তা আপন মনে বসে’ জানালার বাহিরে তাকিয়ে কি গজগজ করে’ বলে’ যাচ্ছিলেন। তার রোষদীপ্তদৃষ্টি ও মাঝে মাঝে উচ্চরবে উচ্চারিত “ঘাড়ছাটা বাবু”দের প্রতি প্রতিসম্ভাষণ ছাড়া গাড়ীর আর-কিছু শোনা যাচ্ছিল না। আর সকলে ক্লিষ্টমুখে যে-যার কোণে বসে’ সবে-নষ্ট সম্পদের শোকটা ভাল করে অনুভব করবার চেষ্টা করছিল। গাড়ীর ভিতরের উত্তেজনাটা তখন অনেক কমে’এসেছিল। চিরঞ্জীব-বাবুর ছোট ছেলের শিশু-হৃদয়ে এই শোকাচ্ছন্ন জনসমষ্টির অটল গাম্ভীৰ্য্য অত্যন্ত পীড়া দিচ্ছিল। সে সকলকার কাছে ঘুরে ঘুরে হতাশ হয়ে, অবশেষে এক অবগুষ্ঠিতা বধূর ঘোমটার মধ্যে মুখটা ঢুকিয়ে বললে, “বউ মা, কথা কও, চোখ চাও, সবাই রাগ করেছ কেন ?” বউ খোকাকে চেপে ধরে” কেঁদে । উঠল। একে আঁধার-মুখের সারি দেখেই খোকা হাপিয়ে উঠেছিল, তার উপর কান্না দেখে সে ত ভয়েই অস্থির। বধুর ঘোমটার ভিতর থেকে মুখ বার করে নিয়ে ছুটে এসে কচি হাতে মাকে ঠেলা দিয়ে তুলে সে বললে, “ম, ওমা, বউমা কাছে কেন ?” মা ধড়মড়িয়ে উঠে” ষসে বললেন, “কি গা, কি হয়েছে বউমা, প্যাটুরাটা উঠে. নাই বুঝি ! তা কেঁদে আর কি হবে মা, এই আমার কি রূপোর বাটী কিছুক যায় নাই, তাই বলে’ কি আর মাথা মুড় খুড়ছি ?” বউমা এতক্ষণ শ্বশুর-ভাস্করের ভরে টিপে রেখেছিল ; তা ছাড়া, এতক্ষণ.তার দিকে কেউ তাকায়ওনি, এইবার মামী-শাশুড়ীর কথার স্পর্শে তার কান্না শতধারে ঝরে পড়ল। একেবারে বেঞ্চের উপর লুটিয়ে পড়ে সে কান্না জুড়ে দিলে। কিন্তু তৰু: শব্দে