পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(సి 8 করা বাদর, হন্‌ হন করে চলেছে। জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় চলেছ ,এত সকালে হে ? বলে গয়লাবাড়ী । আমি বল্লাম যে কাক-পক্ষী ওঠেনি, এখনই এত সকালে গয়লাবাড়ী কেন ? না, গরুদোয়াতে দোয়াল ডাকৃতে যাচ্ছি। তথন আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে, এত সকালে দুধ কি হবে, চা খাবে বুঝি ! ব্যস্ একেবারে চটে” আগুন ! বলে আপনি ত আশ্চৰ্য্য লোক দেখছি। চ। থাই আর না খাই আপনার তাতে কি ? বোঝ একবার আস্পদ৷ ” একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলিয়া উঠিলেন, “আপনার পায়ের জুতোটা ছিল কোথায় ? দু’চার ঘা দিয়ে দিতে হয়। তার পর আমরা দেখে নিতাম কি করে। অকাল কুষ্মাণ্ড । আমি বলি তারিণীর ছেলেটা বুঝি মানুষ হয়েছে।” কলিকাতে ফু দিতে দিতে জগা উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া কহিল, “পায়ের জুতো আবার কম্নে থাকৃবে কত্তা, ছিরিচরণেই ছেল ৷” চট্টোপাধ্যায় ধমক দিয়া কহিলেন, “থাম্ ব্যাটা। হ্যা, মানুষ আবার হয়নি, খুব হয়েছে। ব্যাপার শোন, ঐ যে নীলকণ্ঠর বিধবা বউ নিস্তার ; একটা ছেলে আর বিধবা মেয়ে। সেই মেয়েটার নাকি অস্বথ, ডাক্তার দুধ খেতে বলেছে, তাই উনি সকাল-বেলা দোয়াল ডাকৃতে বেরিয়েছেন।” প্রাতঃকান্ধেই এইরূপ মুখরোচক আন্দোলনের গন্ধ পাইয়া সকলেই উল্লসিত হইয়া উঠিলেন এবং বোধ হয় কাহার মুখ দেখিয়া আজ শয্যাত্যাগ করিয়াছিলেন সেই স্বলক্ষণ ব্যক্তিবিশেষকে স্মরণ করিবার চেষ্টায় সকলেই একবার আত্মনিয়োগ করিলেন । জনৈক মহাপ্রভু বলিয়া উঠিলেন, “দেখ ওর ছেলেটার ব্যামোর সময় যখনই ছোড়া গিয়ে খুব দেখা-শোনা করছে তখনি ভেবেছি এর মধ্যে গুড় আছে বাবা, তা না হ’লে অম্নি শুধু শুধুই যায়।” দলের মধ্যে বৃদ্ধ প্রিয়নাথ ছিলেন দরিদ্র ও অত্যন্ত সৎস্বভাব। তিনি কহিলেন, “দেখ হারান-দ, যাই বল, গায়ের মধ্যে এত লোক, একবার কেউ চোখ দিয়েও দেখেনি। পাছে কিছু সাহায্য করতে হয়। যা হোক প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩১ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ওই তদ্বির করে ছেলেটাকে বাঁচিয়েছে। নইলে বিধবার সম্বল—” চট্টোপাধ্যায় কর্কশকণ্ঠে ডাক ছাড়িলেন, “দেখ প্রিয়, তুমি একটি বদ্ধ বোকা । আর-জন্মে বোধ হয় গাধ ছিলে । সবার আগে গিয়ে গায়-পড়া হ’য়ে ও-ই যখন দেখতে আরম্ভ কবুলে তখন আবার গল্পদ্ধ গিয়ে অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট করতে যাব কি-জন্যে ? আর ও একটা স্বার্থের মতলবে দেখছে বলে আমরা সব চুপচাপ ছিলাম। কেননা ও প্রাণপণে দেখ বেই, ওর স্বার্থ আছে । আমরা ভেবে ঠিক করলাম যে, এই করে নীলকণ্ঠর ছেলেটা সেরে উঠক না, তার পর একে দুই ঝাটায় সিধে করে’ ওপথ বন্ধ করে দেব । ব’ড়ের চালটা একবার বোঝ । ভাত না খেয়ে ঘাস খেতে পার না ।” সকলের মুখপাত্র হইয়া একজন বলিয়া উঠিলেন, “তা বৈ কি ! নটদার এ মতলব আমরা সবাই মনে-মনে টের পেয়ে ওৎ পেতে বসে’ ছিলাম।” এইরূপে এবিষয়ের আন্দোলন গড়াইয়া চলিল । আসল কথা দরিদ্র তারিণীর পুত্র রামজীবন দারিদ্র্যের সহিত যুঝিয়া ৫৭ খানা গ্রামের ভিতর এম্-এ পাশ করার সম্মানটা তাহাদের ছেলেপুলের মধ্যে সে একাই অর্জন করিতে সক্ষম হইয়াছে—ইহা তাহাদের অসহ হইয়া উঠিয়াছিল । ইহার উপর সে যদি একটা গবৰ্ণমেণ্টের ভাল চাকুরী পাইয়া ঘাটত তাহা হইলে দুই চারিজন যে হিংসার উত্তাপে মারা পড়িত ইহা নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে। কেননা যেদিন তাহার এম-এ পাশ হওয়ার সংবাদট। গ্রামে আসিল সেইদিন পাশ করার যে কোনও মূল্য নাই, পরীক্ষা যে আজকাল কত সহজ, এমনকি সাবেক ছাত্রবৃত্তির সহিতও যে ইদানীংকালের এম্-এর তুলনা করা চলে না এবং কলিকাতায় যে কত বি-এ, এম-এ পাশ ট্রামওয়ে কণ্ডাক্টার ও রাধুনীবামুন ছড়াছড়ি যাইতেছে— এইসব আলোচনার পর যখন প্রিয়নাথ বলিয়া বসিল যে, এরাই ত আবার ডেপুটী ম্যাজিষ্ট্রেট ইত্যাদিও হইতেছে তখন সকলেই কিরূপ নিরানন্দমুখে চিন্তাকুল হইয়। পড়িয়াছিলেন তাহ দেখিলেই অম্লমান করা যাইত।