পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্য। ] ফুটে উঠে, আমাদের হাজার প্রচেষ্টার মাঝে এইটে একমাত্র সহজ যা আমাদের আটপৌরে মুহূৰ্ত্তগুলিকে পোষাকী করে তোলে, জীবন-যাত্রার প্রয়াসগুলিকে কাব্যসম্পদপূর্ণ করে তোলে, গদ্যময় কণ্ঠবাণী একটা বিশেষ অভি I্যঞ্জনায় ভরে দেয়, চিত্তের বিক্ষিপ্ত ও বেস্বরে স্বরগুলিকে সংহত করে একটা অর্থপূর্ণ সঙ্গীত রচনা করে—যা আমাদের বিচ্ছিন্ন ও লক্ষ্মীছাড়া জীবনধারাকে শ্ৰীমন্ত করে তোলে। অথচ ব্যাপারটি মোটেও অ-পূৰ্ব্ব নয়—এটি আবহমান কাল থেকে চলে’ আসছে— আর এটি হচ্ছে পুরুষ ও নারীর পরস্পরের মিলনের জন্তে আকুলত৷ সে যা হোক মাসের পর মাস “উৎসব ও উপাসনা’য় ঐ যে আমার একটি করে প্রবন্ধ আর তারই ঠিক পরে-পরে মুকুলিকা দেবীর একটি করে” কবিতা এ-যেন আমার মানস-জগলেব পাশে পাশে একখানি করে’ গান। মাসের পর মাস সে কবিতাগুলির কত বিভিন্ন ছন্দ, বিভিন্ন সুর, বিভিন্ন লয়—কত বিভিন্ন রং, বিভিন্ন গন্ধ, বিভিন্ন রূপ, কিন্তু তার মূল অর্থ এক । সেই অর্থ যেন তার বিভিন্ন রূপ, বিভিন্ন স্বর, বিভিন্ন ছন্দের ভিতর দিয়ে এই এককথা প্রকাশ করছে—হে পথিক, আমি তোমারি কাছে-কাছে তোমারি পাশে-পাশে অবিরাম জাগ্ৰত আছি। হে বহুদূরের যাত্রী, তোমার পুরুষের মস্তিষ্কের পাশে-পাশে একখানি নারী-হৃদয় সদা জাগ্রত। হে রণ-পিপাসী, তোমার পুরুষ-চিত্তের দুরাশার পাশে যশ মান গৌরব, আকাঙ্ক্ষার পাশে নারী-চিত্তের একখানুি স্নেহনীড় সদা উন্মুক্ত—তোমার বিজয়-মাল্যই তার শ্রেষ্ঠ কণ্ঠাভরণ । যে-মানুষটিকে দেখিনি এবং যার সঙ্গে দেখা হবার হয়ত কোন দিন সম্ভাবনাও নেই অথচ মনের কাছে যাব অস্তিত্ব সত্য হ’য়ে উঠেছে, প্রাণের নানা স্বর ও চিত্তলোকের বিভিন্ন আলথ্যের ভিতর দিয়ে তার অস্তুরলোকের আভাস সে মানুষটি যে কেমন সেসম্বন্ধে কল্পনা কোনদিনই নিশ্চেষ্ট থাকে না। “কিমাসীত ব্ৰজেত কিম্‌” বা “কেমন যে তার বাণী, কেমন হাসিখানি” এ-সব প্রশ্নকে কল্পনা প্রশ্নরূপেই থাকৃতে দেয় না। এর 8 س-و& {5 রোমান্স Wzo y ബ প্রতিপ্রশ্নের উত্তরে একখানি করে’ ছবি তার অন্তরে আপনা-আপনিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বলা বাহুল্য, কল্পনার এইসব ছবির মধ্যে সত্য যতটা না থাক তার চাইতে বেশী থাকে আপন মনের সন্তোষ । ধীরে ধীরে মুকুলিকা দেবীর অস্তিত্ব আমার কাছে সত্য হ’যে উঠেছিল এবং এ-মার্ক্সষটি যে কেমন এ-প্রশ্নও আমার মনের কাছে অনিবাৰ্য্য হ’য়ে উঠেছিল । আমি মনে করতে চেষ্টা কবুতুম–আচ্ছা, যার অস্তরে এই মনোভাব ফুটেছে— বনেতে আজি শিহরি’ গেল বনের বনলতা, উতল। কঁপি বিটপী কাছে কহিল মনোব্যথা, উঠিয়া ধীরে জড়ায় মুখে তাহার গ্রীবাখানি, শাখার পরে মরমে মরি’ বিছাল তমুখানি ; আজিকে এই প্রথম মধু বসন্তে রহুক সখি দুইটি হিয়া একাস্তে— তার বয়েস কত ? কিম্বা জীবন-তরুণীপানি যাও যাও বাহি গো । কত শত গোধূলির গৃহে-ফেরা বঁাশরীর গানে হিয়া চঞ্চল চোখ দুটি ছল ছল, কত সুখে আকুলিত কত রূপ চাহি গো, জীবন-তরুণী তাই খাও যাও বাহি গো । এই আকাঙ্ক্ষা যার চিত্তে সঙ্গীত হ’রে ফুটে উঠেছে, তার অন্তরলোক কেমন ? এইসব প্রশ্নের উত্তরে আমার কল্পনা উধাও হয়ে ছুটেছে। নানা বস্তু থেকে নানা রং নানা স্বর নানা গন্ধ কুড়িয়ে তাই দিয়ে একটা মানসীমূৰ্ত্তি গড়িয়ে তার নাম দিয়েছে মুকুলিকা দেবী। জ্যোৎস্ন। থেকে রং কুড়িয়ে, মেঘ থেকে নিবিড়ত কুড়িয়ে পদ্ম থেকে ‘লাবনি কুড়িয়ে, গোলাপ থেকে লালিমা কুড়িয়ে, চম্পক থেকে কোমলত কুড়িয়ে, সাগর-বুকের মৃদু তরঙ্গ-হিল্লোলের ক্রীড়া-চঞ্চলত কুড়িয়ে, যে-একটি কিশোরীর পরিচ্ছন্ন মূৰ্ত্তি আমার মনে গড়ে উঠেছিল তাতে কোথাও এতটুকু খত থাকুবার সম্ভাবনা ছিল