পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] আট শত পয়তাল্লিশ টাকার জিনিষ আসিয়াছিল । অর্থাৎ চীন ভারতবর্ষ অপেক্ষা বৃহৎ ও জনাকীর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও উহাতে বিলাত হইতে ভারতের বিলাতী আমদানির মোটামুটি এক পঞ্চমাংশ জিনিষ আসিয়াছিল। ভারতবর্ষের উপর ইংরেজের প্রভূত্ব থাকায় কেবল যে বিলাতের ইংরেজরা এদেশে বিস্তর জিনিষ পাঠাইয়া লাভবান হয়, তাহ নহে ; ভারতের বড় বড় কারখানা, খনি, যৌথ কারবার ও সওদাগরী হোঁসের অধিকাংশ ইংরেজদের। ভারতে যত বিদেশী মাল সমুদ্র-পথে আসে, তাহার অধিকাংশ ইংরেজের জাহাজে আসায় কোটি কোটি টাক। ইংরেজের সিন্ধুকে যায়। এই সব কথা বিবেচনা করিলে বুঝিতে পারা যাইবে, যে, ইংরেজ এফিসিয়েন্সীর বিচার করিবে, স্বদেশের ও স্বজাতির উদ্যে-সাধনের দিক্ দিয়া । অর্থাৎ তাহারা দেখিবে, যে, সরকারী কৰ্ম্মচারীরা দেশের শাসন-কাৰ্য্য এরূপ ভাবে চালাইতে পারিতেছে কি না, যাহার দ্বারা দেশের উপর ইংরেজের প্রভুত্ব থাকে, ইংরেজের শিল্প-বাণিজ্যের সুবিধা হয়, চাকরী দ্বারা টাকা রোজ গারটা মোটের উপর না কমিয়া বরং বাড়ে, ট্যাক্স, বেশী আদায় হয়, সৈনিক বিভাগ ইংরেজের হাতে থাকে, দেশী লোকের ইংরেজকে প্রভু বলিয়া স্বীকার করিয় তাহার অধীনতা-পাশে ঠাণ্ড থাকে, ইত্যাদি । অবশু, এই-সব মূল উদ্দেশ্বের দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি রাখিয়া এখন কাজও করিতে হইবে, এবং ভারতীয়দিগকে এমন পদ ও “অধিকার’ও দিতে হইবে, সাহাতে তাহারা ও জগতের লোকের। মনে করিতে পারে, যে, ইংরেজ-শাসনের মুখ্য উদ্দেশ্য লোকহিত-সাধন । এই মাপকাঠি অনুসারে বিচার করিলে বুলিতে হইবে, যে, সিবিলিয়ান ও অন্য ইংরেজ কৰ্ম্মচারীরা খুব এফিসিয়েণ্ট, কারণ ইংরেজ-জাতি যে ফল চায়, তাহার। তাহা উৎপন্ন করিয়া আসিতেছে । কিন্তু আমরা চাই অন্য রকম ফল । ইংরেজ ছাড়া জগতের অন্য সভ্য জাতিরাও চায় অন্য রকম ফল দেখিতে । আমরা কি চাই ? আমরা চুই, যে, দেশের সমুদয় নর-নারীর যথেষ্ট অন্ন-বস্ত্র ও স্বাস্থ্যকর বাসগৃহ থাকে। আমরা চাই, যে, দেশে একেবারে দুর্ভিক্ষ না হয় । ঘন ঘন দুর্ভিক্ষ হয়, তাহা ত চাইই নু, ইউরোপ-আমেরিকার সভ্যদেশ-সকলে য়েমন বৰ্ত্তমান যুগে মোটেই দুর্ভিক্ষ হয় না, ভারতের সেই অবস্থা চাই । ভারতবর্ষের লোকদের মধ্যে নানা পীড়ার প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত বেশী, মৃত্যুর সংখ্যা খুব বেশী, নগর ও গ্রামসকল, বিশেষতঃ গ্রামসমূহ, সাতিশয় অস্বাস্থ্যকর। এখানে ইনফ্লুয়েঞ্জার মত কোন মারী আসিলে, ইউরোপ অপেক্ষ মৃত্যুর হার বেশী হয়। বিবিধ প্রসঙ্গ—লর্ডদের মাথা-ব্যথা o d ত্রিশ বৎসর পূর্বে যে প্লেগ আসিয়াছে, তাহা এখনও চলিতেছে । এই-সব বিষয়ে আমরা ভারতবর্ষকে সভ্য স্বাধীন দেশ-সকলের সমান দেখিতে চাই। সভ্য স্বাধীন দেশ সকল অপেক্ষ শিক্ষায় ও জ্ঞানের বিস্তারে ভারতবর্ষ অত্যন্ত অধিক অনগ্রসর । আমরা চাই অন্ততঃ সকলের সমান হইতে। কৃষি শিল্প বাণিজ্যে, নিজের প্রয়োজনীয় নানা দ্রব্য উৎপাদনে, আমরা সমুদয় সভা দেশের সমকক্ষ হইতে চাই। আমাদের দেশ অন্তঃশক্র ও বহিঃশত্রু হইতে রক্ষা করিবার ভার আমরা নিজে লইতে চাই এবং তদুপযুক্ত স্বাস্থ্য বল সাহস শিক্ষা ও সৰ্ব্ববিধ আয়োজন যাহাতে হয়, তাহার ব্যবস্থা আমরা করিতে চাই ; অর্থাৎসকল বিষয়ে স্বাধীনতা চাই। মানুষের মত খাড়া হইয়া দাড়াইতে চাই । এই-সকল বিষয়ে আমাদের বেতনভোগী সিবিলিয়াসূরা যদি আমাদের উদ্দেশুসিদ্ধির সহায় হইয়া আমাদিগকে গন্তব্যপথে যাইতে সমর্থ করিতেন, অন্ততঃ সাক্ষাৎ বা পরোক্ষভাবে তাহাতে বাধা না দিতেন, তাহা হইলে আমরা তাহীদের এফিসিয়েন্সীর প্রশংসা করিতে পারিতাম । ভারতবর্ষ দীর্ঘকাল সভ্যজাতির গবর্ণমেণ্টের অধীনে আছে। কিন্তু ইঙ্গ সভ্যজাতির গবর্ণমেণ্ট-শাসিত অন্য প্রতোক দেশ অপেক্ষ দরিদ্রতা, রোগ, অজ্ঞতা ও ভীরুতার জন্য অধিক অখ্যাতিভাজন । স্বতরাং আমরা ইহার প্রধান সরকারী কৰ্ম্মী সিবিলিয়ানদিগকে কাৰ্য্যদক্ষ না বলিয়া অত্যন্ত অকেজো বলিতে বাধ্য । লর্ড ইঞ্চকেপ এবং অন্য অনেকে বলিয়াছেন, যে, ইহাদের খরচ খুব বাড়িয়াছে। তাহ সত্য। কিন্তু সেই সঙ্গে সঙ্গে ইহাও সত্য, যে, ভারতবর্ষের সকল অধিবাসীরই খরচ বাড়িয়াছে, অথচ আয় তদনুরূপ বাড়ে নাই । স্বতরাং সাংসারিক বায় বৃদ্ধির ওজুহাতে ভারতবর্ষের মোটা মাহিনীর চাকরদেরই পুন:পুন: বেতন-বৃদ্ধি কবিবার ক্ষমতা আমাদের নাই । ভারতবর্মের লোকদের গড় আয় সম্বন্ধে সরকারী ও বেসরকারী ইংরেজরা নানারূপ অনুমান করিয়া থাকেন। তাহারা দেখাইতে চান যে আয় খুব বাড়িতেছে। অথচ ইংরেজ-সরকার এবিষয়ে দস্তুরমত সৰ্বকারী ও বেসরকারী বিশেষজ্ঞদিগের দ্বারা অঙ্গুসন্ধান করিতে নারাজ । গড়ে প্রত্যেক ভারতবাসীর টাকায় , পরিমিত আয় যদিই বা বাড়িয়াছে বলিয়া ধরিধ৷ লওয়া যায়, তাইi হইলেও শুধু তাহা হইতেই ভারতীয়দের আয় বাড়িয়াছে বলা চলে না । দেখিতে হইবে, যে, আগে যাহাব যত টাকা আয় ছিল, তাহাতে সে যত খাদ্য বস্ত্র প্রভৃতি ক্রয় করিতে পারিত, এখনকার আয়ে তাহ অপেক্ষা কম, বেশী, ন তাহার সমান খাদ্যবস্থাদি কিনিতে পারিতেছে । আমরা নিজে যতটা বুঝিতে পারি, এইরূপ বিচার করিলে