পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় আস্থাহীনতার দরুণও বটে, আবার নিজেদের দেশের অর্থসঙ্কট তখন গুরুতর হওয়ার দরুণও বটে, আমেরিকা ইংরেজদের ব্যাঙ্কে স্বল্প মেয়াদে গচ্ছিত টাকা ফেরত চাহিয়া বসিল । কিন্তু ইংরেজদের দেনদার জাৰ্ম্মানী অষ্ট্রেলিয় দক্ষিণ-আফ্রিকা প্রভূতি দেশ কেহই তাহাকে টাকা দিতে পারিল না। বাধ্য হইয় ইংরেজকে তাঙ্গার নিজ রিজার্ভ তহবিল হইতে আমেরিকায় স্বর্ণ পাঠাইতে হইল। এইরূপে এত স্বর্ণ বাহির হইয়া যাইতে লাগিল যে, সত্বর এই স্বর্ণ-রপ্তানী বন্ধ করিতে না পারিলে ইংরেজের স্বর্ণ-তহবিল শূন্ত হওয়ার সম্ভাবন হইয়া পড়িল । তখন আমেরিকা হইতে ঋণ গ্রহণ করিয়া এই স্বর্ণ-রপ্তানী বন্ধ করিবার চেষ্টা করা হইল। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও আমেরিকার মহাজনেরা ইংলণ্ড হইতে টাকা তুলিয়া লইতে ক্ষাস্ত হইলেন না। ফলে আমেরিকা হইতে যে টাকা ধার লণ্ডয়া হইল তাহাও শীঘ্রই নিঃশেষ হইয়া গেল। পুনরায় ঋণগ্রহণের চেষ্টা করিলে আমেরিকা এমন কতকগুলি অপমানসূচক সৰ্ব করিয়া লইলেন যাহার ফলে ইংরেজ মন্ত্রীবগের মধ্যে মতভেদ উপস্থিত হইয়া "লেবার’ গবর্ণমেণ্ট পদত্যাগ করিতে বাধ্য হন এবং রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলের সংমিশ্রণে বর্তমান দ্যাশানাল গবর্ণমেণ্টের প্রতিষ্ঠা হয়। এই-সব গোলমালে ইংরেজদের প্রতি আমেরিকা ও ফ্রান্সের আস্থ আরও কমিয়া যায়। মাহিনী কমানো লইয়। ইংরেজ নৌ-সেনানীর মধ্যে একটা ক্ষুদ্র বিদ্রোহের সংবাদ ইতিমধ্যে প্রচারিত হইয় পড়ে এবং ফ্রান্স ও আমেরিক উভয় দেশ তাহাদের প্রাপ্য টাকার জন্য অধিকতর ব্যস্ত হুইয়া পড়ে। তখন উপায়াস্তরইন হইয়া ইংলণ্ডকে স্বর্ণমান পরিহার করিতে হয়। এই সময়ে আমেরিক ফ্রান্স ও ইংলণ্ডের স্বর্ণ-তহবিলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে ইংলণ্ডের অবস্থা কি পৰ্য্যন্ত কাহিল হইয়াছিল তাহ বুঝিতে পারিব। ১৯৩১ সালে আমেরিকার স্বর্ণ তহবিলের পরিমাণ. হইল ৪৬০০ মিলিয়ন ডলার ; ফ্রান্সে ২৩e • মিলিয়ন ডলার ; ইংলণ্ডে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার মাত্র। স্বর্ণমান পরিহার করার ফলে বিদেশী মহাজনদের দেন। পরিশোধ করা ভিন্ন আর কাহাকেও সোনা দেওয়ার দায় হইতে ইংলণ্ড রক্ষা পাইল এবং সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে স্বর্ণ রপ্তানী করিবার অধিকারও আইনম্বারা রহিত করা হইল। १छ्डाँव्यञ eు. স্বর্ণহীন হইয়া এক পাউণ্ড কাগজের নোটের মূল্য কমিয়া গেল এবং যেখানে এক পাউণ্ড ষ্টালিং ৪৮৬ ডলারের সমান ছিল সেখানে তাহার মূল্য নূনকল্পে ৩৩০ • ও উৰ্দ্ধকল্পে ৪ ডলার মাত্র দাড়াইল । এই ব্যাপারে জগৎ, সমক্ষে ইংলণ্ডের সম্মানের খুবই লাঘব হইল বটে, কিন্তু স্বর্ণমান পরিহার করার ফল তাহার পক্ষে শাপে বর হইয়। দাড়াইল। ষ্টার্লিঙের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় বিলাতি মালের চাহিদা সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়া গেল । কারণ ষ্টালিঙের বিনিময়ে ফ্রান্স, আমেরিক বা অন্যান্ত দেশকে কম স্বর্ণমুদ্রা দিবার প্রয়োজন হইল। আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ উচ্চহারে আমদানী শুল্ক বসাইয়া বিদেশী জিনিষের আমদানী বন্ধ করিবার যে চেষ্টা করিতেছিল ইংরেজ তাহ। এইভাবে আংশিক ব্যর্থ করিয়া দিল । তাই ইংলণ্ড যখন সমরখণের দায় হইতে মুক্তি পাইবার জন্ত আমেরিকার নিকট অনুরোধ জানাইল তখন মহাজন পক্ষ হইতে এমন একটা সৰ্ত্তের কথা উঠিয়াছিল যে ইংলণ্ড যদি স্বর্ণমান পুন: গ্রহণ করে তবেই তাহদের অনুরোধ সম্বন্ধে আমেরিক বিবেচনা করিতে পারে । ইংলণ্ড এইরূপ সৰ্ত্তে অত্যন্ত আপত্তি করে । ফলে ওয়াশিংটন আলোচনায় মিঃ ম্যাকডোনাল্ড ও মিঃ রুজভেন্টের মধ্যে কোনরূপ সিদ্ধান্ত হইতে পারে নাই ; অধিকন্তু মি; ম্যাকডোনাল্ডকে নিজগৃহে আদর-আপ্যায়নে পরিতোষ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমেরিক স্বর্ণমান পরিহার ঘোষণা করিম ইংলণ্ডকে পাণ্ট জবাব দিয়াছে । ইহা অস্বীকার করা যায় না যে, ১৯৩১ সালে স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিয়া বিনিময় হারের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও মন্দার - বাজারে জিনিষের দর কমাইতে পারিয়া ইংলও কিছুমাত্র সামলাইম লইতে পারিয়াছে। অবগু এ সুবিধা বেশীদিন থাকিবে ন। যদি আমেরিকার ন্যায় ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশও স্বর্ণমান পরিত্যাগ করে । এক্ষণে পৃথিবীর বর্তমান আর্থিক সমস্যা সম্বন্ধে আমরা এইরূপ একটা ধারণা মোটামুটি করিতে পারি—পৃথিবীতে কাচ ও তৈরি মাল অতিরিক্ত পরিমাণে স্বষ্টি হইতেছে ; অর্থের বা স্বর্ণের পরিমাণ ঐ মালের অনুপাতে বৃদ্ধি পায় নাই ; আন্তর্জাতিক ঋণের চাপে ও অন্তান্ত কারণে স্বর্ণের ভাগ প্রত্যেক দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী না হওয়ায়