পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૨ উপস্থিত। তাহার পদশব্দ শুনিয়া বাম ঘরের বাহিরে আসিল। বলিল,- এই যে দাদাবাবু! তুমি কখন এলে ? — আমি এই সন্ধোবেলার গাড়ীতে এসেচি। ছোটবউ কোথায় ? — ঐ ঘরে আছে, বলিয়া বামা বাড়ির বাহিরে চলিয়৷ গেল । যোগেশের কণ্ঠ গুনিয়া সরোজিনী উঠিয় দাড়াইল । তাহার বক্ষঃস্থল, তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ থর থর করিয়া কঁাপিতে লাগিল, তাহার নিঃশ্বাস প্রায় রুদ্ধ হইল। যোগেশ ঘরে প্রবেশ করিয়া, দরজা ভেজাইম দিয়া, তক্তপোষের উপর ব্যাগ নিক্ষেপ করিয়া, সরোজিনীর নিকটে গেল । সরোজিনী পিছনে সরিয়া গিয়া বলিল,- আমাকে ছয়ে না, ছয়ে না, আমার জাত গিয়েচে । যোগেশ হাসিয়া বলিল,-- তা হ’লে আমারও জাত গিয়েচে । তোমার যে জাত আমারও সেই জাত। যোগেশ বাহু প্রসারিত করিম সরোজিনীকে বক্ষে ধারণ করিল। তাহার সিক্ত চক্ষু, কম্পিত অধরপল্লব চুম্বন করিল। সরোজিনী যোগেশের কণ্ঠলগ্ন হইয়া অশ্রুজলে তাহার বক্ষ ভাসাইয়া দিল । সরোজিনীর শোকোচ্ছ্বাস কিঞ্চিৎ শমিত হইলে যোগেশ তাহার হাত ধরিয়া তাহাকে তক্তপোষে নিজের পাশে বসাইল। পকেট হইতে রুমাল বাহির করিম সরোজিনীর চোখ মুখ মুছাইয়া দিল। কোমল স্বরে কহিল, আমি সব জানি। বড়বউর মুখে সব গুনেচি । সরোজিনীর চক্ষু ছল ছল করিতেছিল, কিন্তু তাহার অধরপ্রান্তে অল্প হাসি দেখা দিল । সলজভাবে কহিল,আমার ভয় হয়েছিল তুমি বুঝি আর আমাকে নেবে না। —কেন ? তুমি এখানে রয়েচ বলে? আমাদের বাড়ি জায়গা না হলে তুমি কি করবে ? —আমার কি হয়েছিল ? অামারকিছু মনে নেই। পিঠে কাঠ ফুটে গিয়ে যখন আমার জ্ঞান হ’ল দেখি আমায় চিলুতে শুইয়ে রেখেচে । আর একটু হলেই আমার মুখে पञांधन क्ङि । যোগেশ মরোজিনীকে বক্ষে চাপিয়া ধরিল। বলিল,—ওলব কথা তুমি ভেব না। তোমার কিছুই হয় নি। তোমার বা SనOBO হয়েছিল ও-রকম ব্যারাম আমরা বইয়ে পড়েচি। ভয়ের কিছু নেই। সরোজিনী বিমনা হইল। একটু ভাবিয়া বলিল,—এখন আমরা কোথায় যাব, কোথায় থাকব ? —সে ভাবনা তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি ত কিছু দিন পরে তোমাকে কলকেতায় নিয়েই যেতুম, না হয় দু-দিন আগে যাবে। দুই জনে বসিয়া কথা কহিতেছে এমন সময় বাম আসিয়া সরোজিনী মাথায় কাপড় দিয়া তাড়াতাড়ি দরজা খুলিয়া দিল। বাম ঘটতে দুধ আর ঠোঙায় চারিট সন্দেশ সরোজিনীর হাতে দিল। বলিল, দাদাবাবুর জন্যে একটু দুধ , আর মিষ্টি এনেচি। আমি ত উচুনে আগুন দেব না, বউদি নিজেই দেবে ! - যোগেশ বলিল, বাম, তোমার উপকার আমি কখন ভুলব না। বামা বলিল, দাদাবাবুর যেমন কথা! ভারি ত উপকার । গায়ের লোক পাগল হয়েচে বলে আমি ত আর পাগল হই নি ! সে রাত্রে আমি এখানে না নিয়ে এলে বউ মামুষ কোথায় যেত । কথাটা ঘুরাইবার জন্য যোগেশ বলিল—তাই ত, আমার যে বড় খিদে পাচ্চে । রেলে এসেচি কি-না। বামা বলিল,—একটা সন্দেশ মুখে দিয়ে একটু জল খাও। রান্না এখনি হয়ে যাবে। যোগেশ বলিল- এখন আর কিছু খাব না, রান্না হোক, তখন খাব ৷ সরোজিনী তাড়াতাড়ি উঠিয়া রাধিতে গেল। ভাত, কই মাছের ঝোল, পটল ভাজ। দুধ জাল দিয়া বাটিতে রাখিল। রন্ধন সমাপ্ত হইলে, থালা সাজাইয়া যোগেশকে খাইতে দিল । যোগেশের আহার হইলে সরোজিনী তাহার হাতে পান দিয়া তাহার পাতে বসিয়া আহার করিল। বামার বাড়িতে আর একটি ছোট ঘর ছিল, সে সেখানে শয়ন করিতে গেল। ষোগেশ ও সরোজিনী তক্তপোষে শয়ন করিল। ভোরবেলা উমেশ আসিয়া বামার বাড়ির বাহির হইতে