পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় ভৰিভৰ্যত . •S 6. তাকে নিয়ে বসতেন। আমের মুকুলের গদ্ধে বাতাস মাতাল, বকুল বটের মন্থণ পত্রপুঞ্জে জ্যোংস্কার বর্ষণ, চোখ-গেল'র জ্যোৎস্নাসিক্ত স্বর থেকে থেকে জেগে উঠত। পিতাপুত্রীর আলোচনার মৃদুগম্ভীর গুঞ্জন জ্যোৎস্নাধ্যানী রাতের সাথে মিশে যেত। চন্দ্রনাথ চাইতেন স্বহিতার স্বাতন্ত্র্য কোথাও যেন ব্যাহত না হয়, দিনের আলোর মত সহজ তার প্রকাশ হোক। উমানাথের এ-সবে বিশ্বাস ছিল না, তিনি ছিলেন অন্য প্রকৃতির। মুহিতাকে এতদিন অবিবাহিত রাখায় তার ছিল ঘোরতর আপত্তি। তিনি বহুবার তার বিবাহের সম্বন্ধ এনেছেন, কিন্তু চন্দ্রনাথ প্রতিবারই ফিরিয়ে দিয়েছেন । এবার উমানাথ সম্বন্ধ আনলেন কোন রাজবাড়ি থেকে ; ভারি বনিয়াদী বংশ নাকি. হাতীশালে এখনও হাতী বাধা। পাত্র অত্যধিক বিদ্বাণু-শিক্ষিত নাই বা হ’ল, তাকে ত আর চাকরি করে খেতে হবে না। বাপের অবর্তমানে অতবড় জমিদারির সে-ই এখন মালিক। এমন ঘরে কুটুম্বিত করা বড় সোঙ্গ কথা নয়। এতেও চন্দ্রনাথ সম্মত না হ’লে উমানাথ যে ভগ্নীর আর কোন বিষয়ে কখনও থাকবেন না এ-কথাটা পুনঃ পুনঃ ব’লে দিলেন। 哆 চন্দ্রনাথ অমত করতে পারলেন না । মেয়েকে এবার যখন পরের ঘরে পাঠাতেই হবে তখন অনর্থক দেরি করে এমন স্বপাত্ৰ হাতছাড়া করে কি লাভ ? উমানাথ সোৎসাহে কলকাতায় ফিরলেন. কথাবাৰ্ত্তা পাকা করতে। কয়েক দিন পরেই জানালেন মুহিতার বিয়ের সমস্ত স্থির করে ফেলেছেন। বরের এক মামা স্বহিতাকে আশীৰ্ব্বাদ করতে শীঘ্রই মায়াপুরে যাবেন ; সেই সঙ্গে আর এক দলও যাবে মালতীকে আশীৰ্ব্বাদ করতে। তাদের আশ্রিত বিধবা খুল্লতাত পত্নীর কন্য মালতী, উমানাথ তার কথাও ভোলেন নি এসম্বন্ধটি তিনিই কোথা হতে ঘুটিয়েছেন ; কিছু তাদের বরপণ দিতে হবে না, পাত্র পশ্চিমে কৰ্ম্ম করে । উমানাথ হিসেবী লোক, বুদ্ধি করে ঠিক করেছেন মালতীর বিয়েটাও স্বহিতার সঙ্গে একরাত্রে সেরে ফেলা যাবে, খরচপত্র ইত্যাদি নানা দিক দিয়ে এতে মস্ত একটা স্ববিধা। এখন কোনমতে দুদিনের ছুটি করিয়ে পাত্রকে নিয়ে এসে বিয়েটি সেরে ফেলতে পারলেই বাচা যায়। কক্ষের এক প্রান্তে আর একটি কনেকে কখন বসিয়ে দিয়ে গেছে। সঙ্কুচিত খাম| মেয়োটচন্দ্রের আকর্ষণে উচ্ছ্বসিত সমূত্রের মত নানা রকম ফিতে-জড়ান চক্রাকার খোপাটির আকর্ষণুে চুলগুলি সব নিঃশেষে সামনে থেকে সরে পিছনে জমেছে এসে। কপালে কাচপোকার টপ. নাকে একটি নোলক । এত গোলমালে মালতী বেচার। আরও আড়ষ্ট জড়সড় হয়ে বসে আছে। বরের কথা শিশুকাল হতে সে কত না শুনেছে, তার বরটি কেমন হবে কে জানে ! গঙ্গাজলের বরের মত তাকে সেই পার্থী-আক লাল কাগজে চিঠি দেবে কি ? .. ভাবতে ভাবতে এক-একবার তার ঢুলুনি আসছে। ঘন ঘন শখরোলে বরের আগমন প্রচারিত হ’ল। বারিধারার প্রবল বর্ষণে উলুধ্বনি ক্ষীণ হয়ে গেল। শখ গুনে মুহিতার মন , বৰ্ত্তমানে ফিরে এল বিবাহ, চন্দ্রনাথের অনুস্থত। সব ভিড় করে জেগে উঠে তাকে পুনৰ্ব্বার অশান্তিতে ভরিয়ে দিল । দূরসম্পর্কের কে এক বৃদ্ধ মুহিতাকে রাজকুমারের হাতে সম্প্রদান করলেন। সভায় এসে চারিদিকের বিশৃঙ্খলা, মুহিতাকে আরও বিমূঢ় ক’রে দিলে। অবগুণ্ঠন আবৃত হয়ে সে নিস্তব্ধভাবে বসে রইল, বিবাহের কোন মগ্ন তার মনকে ছুতে পারল না। শুভদৃষ্টির সময় স্বল্পপরিচিত ও অপরিচিত পুরনারীদের চেয়ে দেখার নানারকম অনুরোধ তাকে শুধু ক্ষিপ্ত করে তুলল। পানপাত্রের আড়ালে বিনত নয়ন তার চন্দ্রনাথের রোগকাতর মূৰ্ত্তিস্মরণে বার-বার জলে ভরে উঠছিল কেবল। স্ত্রীআচার শেষে বাসর-ঘরে প্রবেশ করে মুহিতা আর অপেক্ষা করতে পারলে না। গাঠছড়ী-বাধা ওড়ন খসিয়ে রেখে চন্দ্রনাথের কক্ষে চলে গেল পশ্চাতে অসন্তোষ বিরক্তির যে ঝঙ্কার উঠল তা শোনার ধৈর্যা তার ছিল না। পরদিন প্রাতে বর-কনে বিদায়ের সময় পৰ্য্যন্ত অসময়ের অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি বিদায় নেয় নি। ভুক্তপত্রের রাশিতে কাকের চীংকার, দাসী-পরিচারিকদের ক্লান্ত কোলাহল, আত্মীয়অভ্যাগতদের অকারণ কলরব, ডাক্তারদের আনাগোনা, চারিদিকে অগোছাল জিনিষপত্রের অপরিচ্ছন্ন ভাব ও . মহামান্য বরপক্ষীয়দের কল্পিত অবমাননার আন্দোলনের মাঝে বর-কনে বিদায়ের ব্যাপার উৎকট গোলযোগ সৃষ্টি করলে। অবগুষ্ঠিত স্বহিত চন্দ্রনাথের শয্যাপার্শ্ব হতে । উঠে এল, অপরিচিত আত্মীয়ের দল ঠেলাঠেলি করে.