পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘LAN উদাত্তকণ্ঠে ধ্বনিত হুইয়া উঠিয়াছে, ধনী-নিধর্ম, জ্ঞানী-অজ্ঞান সমর্থ-অসমর্থ, সকলকে তাহার আহবান, এ-আহবান অজমের জন্তই কেবল নহে। অজয় কি করিবে. কি সে করিতে পারে ? সত্য এবং অসত্য ব্যবহার এক্ট উভয়েরই সঙ্গে তাহার স্বাভাবিক অসহযোগ, সে কৰ্ম্মহীন অসামাজিক মানুষ । নন্দ বাহির হইতে চাহিয়া চিন্তিয় মাঝে মাঝে দু-একটা পুরান খবরের কাগজ সংগ্ৰহ করিয়া আনে পড়িয়া অঞ্জয়ের দুর্বল দেহ গভীর আবেগে কণ্টকিত হয়। দ্বিপ্রহরের খররৌদ্রে ছাতের উপর দ্রুত পায়চারি করিতে করিতে চতুৰ্দ্দিককার নিশ্চিন্ত নিরুদ্বেগ জীবনযাত্রা লক্ষ্য করিয়া সে ক্ষিপ্ত হঠয় উঠে। দেশের এই পক্ষাঘাতগ্রস্ত মন. নিজেকে দিয়া অজয় বুঝিতেছে। এ দেশে কতিপক্ষের স্বাৰ্থত্যাগ, কতিপয়ের প্রাণদান চিরকালই ব্যর্থ হইবে। এদেশের মাতুয দেখে, শোনে, আলোচনা করে, টেবিল চাপড়ায়, তারপর সব ভুলিয়া যায়। চোখের সন্মুখে সৰ্ব্বনাশ ঘাটয় গেলেও পাশ কাটাইয়৷ ইহার বাড়ী আসে এবং বৈঠকখানার বাতাসকে কণ্ঠস্বরের উদ্দীপনায় ভরিয়া তুলিতে পারিলেই খুসি হয়। স্বভদ্রের সঙ্গে ইহা লইয়৷ বহুদিন সে আলোচনা করিয়াছে । এই পক্ষাঘাতের কি চিকিৎসা ? সুভদ্রের উক্তি চিকিৎসকের উপযুক্ত,-- sex repression হইতে দেশের এই অধোগতি। অজয়ের উত্তর কেরাণীর ঘরে দুইগণ্ড৷ ছেলেমেয়ে দেখে ত তা মনে হয় না ? স্বভদ্রের প্রত্নাত্তর sexকে মনের পর্য্যায় থেকে শরীরে নামিয়ে ফেলা হয়েছে, এই অবস্থাটার প্রতিকার চাই। ছদিককার মিলন না ঘটিয়ে দিতে পারলে দুদিক্‌টাই starved হতে থাকবে। তার ফলে দেশব্যাপী শরীর-মনের অস্বাস্থা । স্বভদ্রের কথা অজমের মনঃপূত হয় নাই, কিন্তু স্বভদ্রের বুদ্ধির সেই স্থৈধ্য আছে, স্বনির্দিষ্ট আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত অন্তরে সে অধ্যবসায় তাহার আছে যাহার সহায়তায় ফলাফল বিচার না করিয়াও সে কাজ করিয়া যাইতে পারে। অজয় তাহা পারে না। অগত্য অজয় ভাবে, দেশের এই যে নিধিতার সাধনা ইহা এত বড় জিনিষ যে আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি লইয়া তাহা বুঝিবার সামর্থই আমার নাই। এই সাধনার শেষ করে বিগতমোহ হুইয়া ছখন্ত্রখের দেনাপাওনার হাটে SనOBO ফিরিয়া আসিবার অধিকার ত সাধকের জন্য আছেই। যায়, সেই সাধনা সকলের জন্য নহে, অন্তত: তাহার জন্য নহে। তাহার অস্তিত্বের একেবারে গোড়ার স্থানটিতে ঐন্দ্রিলাকে লাভ করিবার , তপস্ত। পাছে সে-তপস্তায় কোথাও বিঘ্ন ঘটে এই ভয়ে বীণার স্মৃতিকে প্রাণপণে এই কদিন সে এড়াইয়৷ চলিতেছে। তবু এমনই দুৰ্দ্দৈৰ, ঐন্দ্রিলাকে মনে করিতে গেলেই সৰ্ব্বাগ্রে বীণার স্নিগ্ধ মাধুর্য্য-মণ্ডিত মুখখানি তাহার স্মৃতির পটে ভার্সিয় উঠে। সে-মুখটি যে স্বন্দর অজয়কে বারম্বার তাহ স্বীকার করিতে হয়। কি জানি কেন, ঐন্দ্রিলার মুখ তত সহজে সে মনে আনিতে পারে না। নদের পরীক্ষার আর তিন দিন মাত্র বাকী। সমস্ত দিনরাতত প্রায় সে পড়িতেছে। সকালে ভাল করিয়৷ অন্ধকার ন৷ কাটিতেই বালিশটাকে কোলে করিম সে উঠিয়া বসে। - স্নানের সময় না-হওয়া পৰ্যন্ত নড়ে না। স্বানের পর ঘণ্টাখানেকের জন্য বাড়ী ছাড়িয়া বাহির হয়, কিন্তু সে ফিরিয়া আসিলে তাহার ক্লান্ত শুক মুখ দেপিন্ন অজয় বুঝিতে পারে, বাহির হওয়াটা বেশীর ভাগই অজয়কে ভুলাইবার জন্য। রাত্রিতে সম্ভবতঃ কোনওদিন ছপয়সার ছোলাভাজা, কোনওদিন বা একমুঠ যবের ছাতু আহার করিয়৷ সে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে। গলির ধারের একটা গ্যাসের আলোর খানিকটা একতলার বারান্দার এককোণে আসিয়া পড়ে, সেইখানে একটা খবরেব কাগজ পাতিয়া বসিয়া নন্দ পড়া করে, ঝড়বৃষ্টি না হইলে রেড়ীর তেল পোড়ায় না। প্রায় সমস্ত রাত জাগিয়াই সে পড়ে, অজয় বারণ করিলেও শোনে না, অত্যন্ত অপরাধীর মত মুখ করিয়া বলে, “এই কটা ত দিন, স্কলারশিপ না পেলে আর যে আমার পড়া হবে না!” অজয়ের বলিতে ইচ্ছা করে, নিজের প্রাণের মূল্যের বিনিময়ে এমন করিয়৷ যে-অভীষ্ট তুমি লাভ করিতে চাহিতেছ, তোমার ঐহিক বা পারত্রিক কোন কাজে তাহ লাগিবে কখনও ভাবিয়া দেখিয়াছ কি ? কিন্তু তরুণ-হৃদয়ের এই সাগ্রহ স্বপ্ন-সাধনাকে নিৰ্ম্মম হইয়া ভাঙিতে পারে না। বলিতে চায়, প্রাণেই যদি না বাচিয়া থাকে, স্কলারশিপটা শেষ অবধি ভোগ করিবে কে ? উহার ক্ষুংপীড়িত আশাহীন রোগবিশীর্ণ মুখের দিকে চাহিয়া সেকথাটাও বলিতে তাহার আটকায়।