পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سیاسweb ় প্রবাসনা ; SO8O সহস্ৰ স্বখদুঃখ, আশা-নিরাশ, আনন্দ-বেদনার সঞ্চয় সেই অন্ধকার মহাসমুদ্রে নিশ্চিহ্ন হইয়া ডুবিয়া গেল। কলিকাতার পথের সদ-প্রবহমান কোলাহুলের স্রোত, সমস্ত হাসি-কান্নসঙ্গীত-হাহাকারের প্রবাহ এক অবিচ্ছিন্ন মহা-স্তব্ধতার মধ্যে পড়িয়া হারাইয়া গেল। কানের কাছে রক্তস্রোত উদাম নৃত্যে ঝমৃঝম্ করিয়া বাজিতেছিল, সে-নৃত্য থামিল । হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন মৃত্নতর হইতে হইতে ক্রমে আর শোনা গেল না। বহুক্ষণ ধরিয়া সে অনুভব করিল, যেন সেই স্তন্ধ অন্ধকারের একেবারে মৰ্ম্মস্থানটিতে তাহার সমস্ত অতীত, বৰ্ত্তমান এবং ভবিষ্যৎ একসঙ্গে হইয়া একটি ক্ষীণ দীপশিখার মত জলিতেছে, সে-দীপশিখা কঁাপিতেছে না। ক্রমে সেই আলোটুকুও আর রহিল না। তখন ভিতরের এবং বাহিরের সেই নিরবচ্ছিন্ন স্তন্ধ অন্ধকার ভরিয়া অদৃশু আলোর স্পন্দনের মত বিচিত্র নীরবতার স্বরে প্রশ্ন হইল, “তোমাকে যদি ফিরিয়া লই এবং আবার পৃথিবীতে তোমাকে আসিতে হয়, কোন দেশে জন্মগ্রহণ করিতে চাহ ?” অজয়ের সমস্ত অস্তিত্ব, তাহার হইয়া উত্তর দিল, “ভারতবর্ষে ।” আবার প্রশ্ন হইল, “ফিরিয়া আসিয়া যদি কাহারও অপেক্ষা করিতে হয়, কাহার জন্য অপেক্ষা করিবে ?” এবারেও অজয়ের অস্তিত্ব ভরিয়া ছাপাইয়া উত্তর হইল, “নন্দের জন্য ।” অন্ধকার গলিয়া যাইতে লাগিল। চেতনা কোলাহলমুখর হইয়া উঠিল। একটুকরা তীব্র রোদ অজয়ের চোখের উপর পড়িয়া গ্রাহার চোখকে পীড়া দিল। নন্দকে কেবলই মনে পড়িতে লাগিল। মনে পড়িতে লাগিল, আর দুইদিন পরে তাহার পরীক্ষা। জীবন-পণ করিয়া, দুঃসহ দুখকে অনাহারকে অনিদ্রাকে হাসিমুখে সস্থা করিয়, রোগযন্ত্রণাকে উপেক্ষা করিয়া, অক্লান্ত আগ্রহে এই পরীক্ষার জন্য সে প্রস্তুত হইয়াছে। হয়ত কলিকাতার সহস্ৰ সহস্ৰ পরীক্ষার্থীর মধ্যে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন এবং অধিকার আর কাহারও এত ছিল না, তাহার যত ছিল। এত কঠিন সাধনার পথশেষে সাফল্যের দ্বারপ্রান্ত হইতে তাহাকে । ফিরিয়া যাইতে হইল। হাসিমুখে সে চলিয়া গেল, যেন এ সাফল্যে লোভ করিয়া কাহাকেও সে ফাকি দিতে চাহিতেছিল, রগড় হইতেছিল, রগড়টা ধরা পড়িয়া গিয়াছে। তাহার সেই হাসি মনে করিয়া অজয়ের বুক ফাটিয়া যাইতে । লাগিল। উঠিয়া বসিয়াছিল, দুই জামুর মধ্যে মুখ লুকাইয়৷ ক্ৰন্দন-জড়িত স্বরে ডাকিতে লাগিল, “নন্দ রে, নন্‌’, আর অবিরল-ধারে অশ্রুবর্ষণ করিতে লাগিল । ( ক্রমশ: ) মন্দির-বাহিরে ঐরাধাচরণ চক্রবর্তী আরাধনা ব্যর্থ নয়,—ব্যর্থ নাহি হয় ; সাধনার তাপে আঁখি তপ্ত আশ্রময়। পবিত্র পাবক বহি, পাষাণ-মন্দিরে প্রদক্ষিণ করে ফিরি পূজা-বেদাঁটিরে। সত্যের সে পরিক্রমা—নিত্যের আরতি! নহেক ব্যক্তির স্তুতি বা বস্তু-ভারতী ; সে যে অব্যক্তের ধ্যান, আত্মার সন্ধান, অমৃতের শুদ্ধ স্তব—বহ্নিমান প্রাণ ! এই মোর আরাধন –মন্দির-চত্বরে বস্তু আর ব্যক্তি মিলে হোথা ভিড় করে। ব্যক্তি চাহে স্বাধিকার, বস্তু চাহে স্থান ; ভাবের বিগ্রহ—তারে করে অপমান। পবিত্র পাবক বহি, মন্দির-বাহিরে আজি প্রদক্ষিণে চলি আকাশ-বেদীরে ।