পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీఃts §ಣಿ “য। তবে গাছতলাতে যা। ফের আমার বাড়ি ঢুকলে তোর ঠাৎ খোড়া করে দেব।’ "ঠ্যাং অমনি সবাই সবাকার খোড় করছে । আমারও জুটে হাত আছে ! প্রতিবার যেমন হয়, এবারও তেমনি ভাবে দুজনের স্বর চড়িতে লাগিল ; ভাষা রূঢ় হইতে অভদ্র এবং অভদ্র হইতে অশ্রাব্যে দাড়াইয়া গেল। মাত্র কৈলাসেরই বেশী। সে বুঝিতে পারিয়াছিল আজ একটা হেস্তনেস্ত হইয়া যাইবে, স্থবল শেষ মীমাংসা করিতে আসিয়াছে, আজ ওকে ফিরাইয়৷ দিতে পারিলে ও আর আসিবে না। শুধু আসিবে না নয়, কালীকে কোনদিন পাঠানও অসম্ভব করিয়া দিবে। বিধবা মেয়ের মত তার কাছে থাকা ছাড়া কালীর আর কোন উপায় থাকিবে না। মেমেট বাচিবে । খানিক পরে তাই কলহের পরিসমাপ্তির জন্য কৈলাস পা হইতে ছেড়া চটি খুলিয়া বলকে পটাপট কয়েক ঘ বসাইয়া দিল । উঠানে একটা বাঁশের বাত পড়িয়া ছিল, সেটা কুড়াইয়া লইয়া কৈলাসের মুখের উপর নিৰ্ম্মম ভাবে কয়েকবার আঘাত করিয়া মুবলও করিল প্রস্থান। রান্নাঘরের দরজায় দাড়াইয়া উলুখড় কালী তার জীবনের দুই রাজার যুদ্ধ আগাগোড় সবটাই চাহিয়৷ দেখিল। কৈলাসের আঘাত কম লাগে নাই। মুখে চার-পাঁচটা কালো দাগ পড়িয়াছে, নাক দিয়া রক্তপাত হইয়াছে এবং খোচা লাগিয়া একটা চোখ বুজিয়া গিয়াছে। অনেক রাত অবধি তাহার নাক দিয়া রক্ত ও চোখ দিয়৷ জল পড়িতে লাগিল । থাকিয় থাকিয় সে বলিতে লাগিল, দেথলি কালী, দেখলি ? আর একটু হ’লে খুন করে ফেলত রে ? মনে মনে সে কিন্তু নিশ্চিন্ত হইয়াছিল। মুবল আর আসিবে না। তাকে ক্ষমা করার কামনা কালীর মনে যদি কখনও জাগিয়া থাকে এ ঘটনার পর আর জাগিবে না। বাপকে যে এমন করিয়া মারিয়া যায় মেয়ে কি তাকে ক্ষমা করিতে পারে? এবার আর বুঝিতে পারা নয়, কালী নিঃসন্দেহ প্রমাণ পাইয়াছে যে, স্নবল মানুষ নয়-- খুনে, ডাকাত। ওকে এবার কালী ভয়ঙ্কর ঘৃণা করিবে। আত্মরক্ষার প্রবৃত্তিই এবার তাকে কোনমতে ভুলিতে দিবে না যে বাপের কাছে খাঁকাই তার পক্ষে সবচেয়ে নিরাপদ ও মঙ্গলজনক ব্যবস্থা। So86 অথচ কালী ভয়ানক গম্ভীর হইয়া গিয়াছে। ভাল করিয়া কথার জবাব দেয় না। স্ববলের বিরুদ্ধে সত্যমিথ্য অভিযোগে সায় দিতে তার যেন আর তেমন উৎসাহ নাই । প্রথমটা কৈলাস অত খেয়াল করে নাই। শেষে মেয়ের ভাব লক্ষ্য করিয়া সে অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল । ‘কথা কইছিস না যে কালী ? কি বলব বল না ? "বাচলি, কি বলিস ? ঝগড়াঝাটি ভাল লাগে না বাবুr ‘দেখলি তো ? কি রকম কাগুটা করে গেল ? কৈলাস নিশ্চিন্ত হইয়। ঘুমাইল। একটা বিরক্তিকর ব্যাপার ঘটিয়াছে শুধু এই জন্তই কালীর মন খারাপ হইয়াছে, স্ববলের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয় গেল বলিয়া নয়। কাল ওর মুখের মেঘ কাটয় যাইবে । যেমন হাসিয়া থেলিয়! এতদিন এতকাল তার দিন কাটিয়াছে কাল আবার গোড়া হইতে তার সুরু। এবার আর বাধ পড়িবে না। কাল সে ওকে সতীশের হাৰ্ম্মোনিয়মটা আনিয়া দিবে। পাড়ার লোকে নিন্দ করিবে, তা করুক। নিন্দ করা যাদের স্বভাব নিন্দ তার করিবেই। কালী আনন্দে শুধু নাচিতে বাকী রাখিবে । তার মত অবস্থার লোক কে কবে মেয়েকে বাইশ টাকা দিয়া হাৰ্ম্মোনিয়াম কিনিয়া দিয়ছিল ? তার এক মাসের মাহিনী ! পরদিন সোমবার। সোমবার উথারায় মস্ত হাট বসে। অনেক দূর দূর গ্রামের লোক হাটে চিঠিপত্র সংগ্ৰহ করিতে আসে, সেখানে বড় বড় মহাজনদের নামে মোট টাকার মনিঅৰ্ডার ও ইনসিওর থাকে। চিঠির তাড়া হাতে চামড়ার ব্যাগ কাধে ঝুলাইয় বেল দশটার মধ্যে কৈলাসকে হাটে হাজির হইতে হয়। একটা পৰ্যন্ত সেখানে সে চিঠি ও টাকা বিলি করে। সপাঁর পোষ্টাপিস কাছে নয়, পাচমাইল পথ। পোষ্টাপিসে চিঠি ও টাকা হিসাব করিয়া গুছাইয়া লইয়া আরও তিন মাইল হাটিলে তবে উধারার হাট । কৈলাসের সকালে ওঠা দরকার ছিল, কিন্তু কালী তাকে কোন মতেই ডাকিয়া তুলিতে পারিল না। উঠতে সে বেলা করিয়া ফেলিল।